মঙ্গল আরতি লিরিক্স: কীর্তন এর মাধ্যমে জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি শুরু

মঙ্গল আরতি লিরিক্স

ভোরের মঙ্গল আরতি লিরিক্স: ভক্তির আলোয় শুরু হোক দিন

মঙ্গল আরতি লিরিক্স:মঙ্গল আরতি হল ভগবানের প্রতি ভক্তি প্রদর্শনের এক গভীর আধ্যাত্মিক রীতি, যা হিন্দু ধর্মে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভোরবেলা ভগবানের আরাধনা করার সময় সম্পন্ন করা হয়। “মঙ্গল” শব্দের অর্থ শুভ বা কল্যাণ এবং “আরতি” শব্দের অর্থ প্রদীপের আলো বা ভগবানের কাছে আলোক প্রদর্শন।

মঙ্গল আরতি পালন কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় প্রথা নয়, এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা যা আত্মার শান্তি, পবিত্রতা, এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে ভক্তদের পরিচালিত করে। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, ভোরের মঙ্গল আরতি কেবল ভগবানের কৃপা লাভের পথ নয়, বরং এটি এক ধরনের মানসিক প্রশান্তির উৎস যা দিনটিকে শুভ এবং উজ্জ্বল করে তোলে।


সংসার দাবানল মঙ্গল আরতি লিরিক্স

সংসার-দাবানল-লীঢ় লোক-
ত্রাণায় কারুণ্যঘনাঘনত্বম্ ।
প্রাপ্তস্য কল্যাণ-গুণার্ণবস্য
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ৷৷৷৷

মহাপ্রভোঃ কীর্তন-নৃত্য-গীত
বাদিত্রমাদ্যন্মনসো রসেন ।
রোমাঞ্চ-কম্পাশ্রু-তরঙ্গভাজো
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ৷৷ ২ ৷৷

শ্রীবিগ্রহারাধন-নিত্য-নানা-
শৃঙ্গার-তন্মন্দির মার্জনাদৌ ।
যুক্তস্য ভক্তাংশ্চ নিযুঞ্জতোঽপি
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ৷৷৷৷

চতুর্বিধ-শ্রীভগবৎপ্রসাদ-
স্বাদ্বন্নতৃপ্তান্ হরিভক্তসঙঘান্ ।
কৃত্বৈব তৃপ্তিং ভজতঃ সদৈব
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ।। ৪ ।।

শ্রীরাধিকামাধবয়োরপার-
মাধুর্যলীলা গুণ-রূপ-নান্নাম্ ।
প্রতিক্ষণাস্বাদন-লোলুপস্য
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ।। ৫।।

নিকুঞ্জযুনো রতিকেলিসিদ্ধ্যৈ
যা যালিভিযুক্তিরপেক্ষণীয়া ৷
তত্রাতিদাক্ষাদতিবল্লভস্য
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ৷ ৬ ৷

সাক্ষাদ্ধরিত্বেন সমস্তশাস্ত্ৰৈ-
রুক্তস্তথা ভাব্যত এব সত্তিঃ ।
কিন্তু প্রভোর্যঃ প্রিয় এব তস্য
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম ।।৭।।

যস্য প্রসাদাদ্ভগবৎ-প্রসাদো
যস্যাপ্রসাদার গতিঃ কুতোঽপি
ধ্যায়ংস্তবংস্তস্য যশস্ত্রী-সন্ধ্যং
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম ।।।।


কেন এই স্তোত্রটি গুরুত্বপূর্ণ?

এই স্তোত্রটি কেবলমাত্র শাস্ত্রীয় স্তোত্র নয়, এটি আধ্যাত্মিক মুক্তির একটি শক্তিশালী মাধ্যম। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা নানা দুঃখ-কষ্ট, মানসিক অস্থিরতা ও সংসারিক বন্ধনে আটকে যাই। এই স্তোত্র সংসারের সেই দহন থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ নির্দেশ করে এবং আমাদের গুরুর চরণে সম্পূর্ণ শরণাগতি গ্রহণ করতে শেখায়।

১. সংসারিক দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তির উপায়

  • এই স্তোত্রে বলা হয়েছে যে আমাদের জীবন সংসার-দাবানলের মতো— যেখানে আমরা লোভ, মোহ, ক্রোধ, অহংকার, হতাশা ও কামনার আগুনে পুড়ে যাচ্ছি। গুরুর কৃপা ছাড়া এই আগুন থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব।
  • প্রতিদিন এই স্তোত্র পাঠ করলে মানসিক শান্তি আসে, অশান্তি দূর হয় এবং সংসারের নানা কষ্ট সহজে সহ্য করা যায়।

২. গুরুভক্তি ও শরণাগতির মাহাত্ম্য বোঝায়

  • শ্রীগুরু ভগবানের প্রতিনিধি এবং তাঁর আশ্রয় গ্রহণ করাই আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রথম ধাপ
  • এই স্তোত্র আমাদের শেখায় কীভাবে গুরুর প্রতি সম্পূর্ণ ভক্তি ও শরণাগতি নিবেদন করলে ভগবানের কৃপা লাভ করা যায়
  • শ্রীগুরুকে সম্মান ও সেবা করলে জীবনে আত্মশুদ্ধি ও মোক্ষের পথ সুগম হয়

৩. ভক্তির পথকে স্পষ্ট করে তুলে ধরে

  • ভক্তির পথে চলতে গেলে আমাদের গুরু ও ঈশ্বরের প্রতি অটল বিশ্বাস থাকতে হবে
  • এই স্তোত্র পাঠ করলে ভক্তির প্রতি মনোনিবেশ করা সহজ হয় এবং জীবনের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়

৪. প্রতিদিন গাইলে আত্মশুদ্ধি হয় এবং মনের শান্তি আসে

  • এই স্তোত্রে গুরুর চরণকে চন্দনের মতো শীতল ও শান্তিদায়ক বলা হয়েছে।
  • প্রতিদিন এই স্তোত্র পাঠ করলে মনের ভিতরে জমে থাকা নেতিবাচক চিন্তা দূর হয়, হৃদয় নির্মল হয় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়
  • বিশেষ করে, ক্রোধ, হতাশা, অহংকার ও লোভ কমতে শুরু করে এবং মানুষের জীবনে আধ্যাত্মিক সুখ প্রতিষ্ঠিত হয়।

কবে এবং কীভাবে এই স্তোত্র পাঠ করবেন?

এই স্তোত্র পাঠের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, যা অনুসরণ করলে এটি আরও বেশি কার্যকরী হয়।

১. প্রতিদিন ভোরবেলা মঙ্গল আরতির সময় পাঠ করুন

  • ব্রাহ্মমুহূর্তে (ভোর ৪-৫টা) এই স্তোত্র পাঠ করলে বিশেষ কল্যাণ হয়।
  • ভোরের সময় আমাদের মন শান্ত থাকে এবং গুরুর কৃপা ও ভগবানের দয়া সহজে লাভ করা যায়

২. গুরু পূজার দিন (যেমন গুরু পূর্ণিমা) পাঠ করা উচিত

  • গুরু পূর্ণিমা ও অন্যান্য গুরু-সম্পর্কিত বিশেষ দিনে এই স্তোত্র পাঠ করলে গুরুর বিশেষ আশীর্বাদ লাভ হয়
  • গুরু-পরম্পরার মাহাত্ম্য বোঝার জন্য এটি অত্যন্ত উপযোগী।

৩. নিজের ইষ্টদেবের সামনে বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে পাঠ করুন

  • পবিত্র পরিবেশ তৈরি করুন এবং গুরুর ছবি বা প্রতিমার সামনে বসে এই স্তোত্র পাঠ করুন
  • ধূপ-প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং পবিত্র চিত্তে পাঠ করলে আশ্চর্য ফল লাভ হয়

“সংসার দাবানল” স্তোত্র পাঠের উপকারিতা

  • সংসারিক দুঃখ-কষ্ট ও মানসিক অস্থিরতা দূর হয়
  • গুরুর কৃপা লাভ হয়, যা ভগবানের কৃপা লাভের পথ সুগম করে
  • ভক্তি ও শাস্ত্রচর্চার প্রতি গভীর আকর্ষণ জন্মায়
  • নেতিবাচক চিন্তা দূর হয়, মন নির্মল ও শান্ত হয়
  • পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়

সারমর্ম

এই শ্লোক আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে এই সংসার এক দুঃসহ অগ্নিকুণ্ড, যেখানে প্রতিটি জীব মোহ-মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করছে। এই ভোগ-বাসনা, ক্রোধ, লোভ, মিথ্যা, অহংকারই আমাদের অন্তরে এক প্রকার অগ্নি সৃষ্টি করেছে, যা আমাদের জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

কিন্তু একমাত্র গুরুদেবের কৃপাই পারে এই সংসার অগ্নি থেকে মুক্তি দিতে। গুরু ভগবানের করুণার প্রতিচ্ছবি, যাঁর আশ্রয়ে গেলে জীবনদুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

উপসংহার

“সংসার-দাবানল” শুধুমাত্র একটি স্তোত্র নয়, এটি ভক্তির এক অমূল্য রত্ন। এটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে এই সংসার-মায়ার জ্বাল থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হল গুরুর কৃপা ও ভক্তির আশ্রয়

সুতরাং, প্রতিদিন শ্রীগুরুবন্দনা স্তোত্র পাঠ করা উচিত, যাতে আমরা সংসার-আগুনের দহন থেকে মুক্ত হয়ে ভগবানের কৃপা লাভ করতে পারি। আসুন, আমরা গুরুর শরণে গিয়ে তাঁকে প্রণাম করি, কারণ তিনিই আমাদের ভক্তির পথে পরিচালিত করবেন এবং সংসার মোহ থেকে মুক্তি দেবেন

সংসার দাবানল লিরিক্স সমাপ্ত।

আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে অন্যান্য পোস্ট গুলো পড়ুন !

১.শ্রী কৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম।

২.জয় রাধে রাধে কৃষ্ণ কৃষ্ণ লিরিক্স।

Share Please:

নমস্কার "আমি শ্রী কালিপদ, একজন হিন্দু সনাতনী। আমার লক্ষ্য হল আমার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সনাতন ধর্ম এবং হিন্দু সংস্কৃতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আমি হিন্দু ধর্মের প্রাচীন ঐতিহ্য, ধর্মগ্রন্থ, এবং আধ্যাত্মিকতার জ্ঞান সহজ ভাষায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করি, যাতে সকলেই এই মহান ধর্মের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আমি বিশ্বাস করি যে সনাতন ধর্ম শুধু একটি ধর্ম নয়, এটি একটি জীবনধারা, যা আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং জীবনের প্রকৃত অর্থ বোঝায়।"

Leave a Comment