সংকটমোচন শ্রী হনুমান অষ্টক: মহবীর হনুমানের অষ্টকশ্লোকের বর্ণনা

সংকটমোচন শ্রী হনুমান অষ্টক

সংকটমোচন শ্রী হনুমান অষ্টক: পবন পুত্র হনুমান, হিন্দু পুরাণের অন্যতম প্রধান চরিত্র। তিনি ভগবান শ্রী রামের পরম ভক্ত এবং হনুমানকে বানর দেবতা হিসেবে মানা হয়, হনুমানজীর পিতা হলেন কেশরী এবং মাতা অঞ্জনী। কিন্তু তাঁর প্রকৃত পিতা হলেন বায়ু দেবতা (পবন দেব), যার কারণে তাঁকে ‘পবন পুত্র’ বলা হয়। হনুমান তাঁর অমিত শক্তি, বুদ্ধি, এবং নিষ্ঠার জন্য প্রখ্যাত। তিনি তাঁর জীবনে অসংখ্য অসাধারণ কীর্তি সম্পন্ন করেছেন, সেই কথাগুলি এই শ্রী হনুমানাষ্টক বর্ণিত হয়েছে।

সংকটমোচন শ্রী হনুমান অষ্টক

জয় জয় মহাবীর হনুমান জয়।
ভক্তি শিক্ষা করি প্রভু তোমার কৃপায়।।
বাল্যকালে দিবাকরে করিলে ভক্ষণ।
তাহে অন্ধকার হৈল এই ত্রিভুবন।।
ত্রাসেতে ত্রিলোক সব কাঁপে থর থরে।
কেন বা এমন হৈল সবে চিন্তা করে।।
দেবগণ আসি তোমা মিনতি করিলে।
রবি ছাড়ি জগতের কষ্ট নিবারিলে।।
কেহ জানিত না কপি নামটি তোমার।
সঙ্কট মোচন নাম হয় যে তোমার।। ১ ॥

কলির ত্রাস যে তুমি গিরি বাসকারী।
জন্মাবধি প্রভু তোমা সন্ন্যাসী নেহারি।।
সহসা মহামুনি তোমা শাপ দিলে ।
কি জানি কি বিচার তুমি করেছিলে।।
পরম দয়াল তুমি জানে সর্বজন ।
এ দাসের দুঃখ তুমি কর নিবারণ৷৷ ২ ৷৷

অঙ্গদেৱে সঙ্গে লয়ে সীতা অন্বেষণে।
সন্ধান করিলে তুমি ফিরি বনে বনে।।
পাহাড় পর্বতে তুমি ঘুরিয়া ঘুরিয়া ।
মহাসাগরের তীরে রহিলে বসিয়া।।
বানরগণেরে তুমি দিলে আশ্বাসন।
কৃপা করি কর মোর সঙ্কট মোচন।। ৩ ।।

জয় রাম বলি তুমি এক লম্ফ দিলে।
আকাশ পথেতে তুমি লঙ্কায় চলিলে।।
শেষে লঙ্কা রাজ্যে গিয়া দিলে দরশন।
করিতে লাগিলে তুমি সীতা অন্বেষণ।।
অশোক কাননে সীতা পাইলে দেখিতে।
আমারে রক্ষহ তুমি এই সঙ্কটেতে৷৷ ৪ ৷৷

হনুমান চালিশা বাংলার পরবর্তী অংশ

রামের অঙ্গুরী দিয়া জানকীর করে।
প্রণাম করিয়া দাঁড়াইলে এক ধারে।।
চেড়ীগণ মুখে রাবণ পাইল শুনিতে
দূতগণে পাঠাইল বাঁধিয়া আনিতে।।
সূক্ষ্ম দেহে মহাবীর তুমি দিলে ধরা।
আমার সঙ্কট প্রভু দূর কর ত্বরা। ৫ ।

অতঃপর বিরাট রূপ করিলে ধারণ।
যত বস্ত্র ছিল ল্যাজে বাঁধে দূতগণ।।
তাহে অগ্নি জ্বালাইল রাবণ আদেশে।
তুমি জয় রাম বলি উঠিলে আকাশে।।
সে আগুনে সারা লঙ্কা করিলে দাহন।
এ দাসের কর প্রভু সঙ্কট মোচন।। ৬ ।।

অশোক কাননে তুমি এলে পুনরায়।
লঙ্কা দগ্ধ এ সংবাদ জানালে সীতায়।।
শুনিয়া জনকসুতা আনন্দিত হৈল।
বর দিয়া তোমার অগ্নি জ্বালা নিবারিল।।
আম্রকুঞ্জে ঢুকি সব কৈলে খান খান।
মোরে তুমি এ সঙ্কটে কর পরিত্রাণ।। ৭ ।।

সীতার সন্ধান লয়ে ফিরিয়া আসিলে।
শ্রীরামের শ্রীচরণে সকলি জানালে ।।
অতঃপর করা হলো সাগর বন্ধন ।
লঙ্কাপুরী প্রবেশিলে লয়ে সৈন্যগণ।।
মৃত সঞ্জীবনী আনি লক্ষ্মণে বাঁচাও ।
কৃপা করি এ দাসের সঙ্কট ঘুচাও ৷৷ ৮ ।।

জয় জয় মহাবীর হনুমান জয় ৷
ভক্তিরূপ শিক্ষা দিলে জগতে সবায়।।
জয় জয় বজরঙ্গী চির ধন্য তুমি।
তোমার চরণে সদা প্ৰণত যে আমি।।
তুমি হও শ্রেষ্ঠ ভক্ত বিশ্ব চরাচরে।
রামরূপ দেখাইলে হৃদয় মাঝারে।।
নিজ বক্ষ নিজে তুমি করি বিদারণ
তার মাঝে রামরূপ করালে দর্শন।।
হনুমানাষ্টক হেথা সমাপ্ত হইল।
জয় রাম জয় হনুমান ভক্তগণ বল ।।


সংকটমোচন শ্রী হনুমান অষ্টক পাঠ করার উপকারিতা ও নিয়ম

সংকটমোচন শ্রী হনুমান অষ্টক একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্রীয় স্তোত্র যা শ্রী হনুমানকে সম্বোধন করে। এই স্তোত্রের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস রয়েছে কারণ এটি সমস্ত দুঃখ, বাধা এবং সংকট থেকে মুক্তি প্রদান করে।

হনুমান অষ্টক পাঠ করার উপকারিতা:

  • সংকটের মুশকিল থেকে মুক্তি: শ্রী হনুমান অষ্টক পাঠ করলে জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হতে পারে। এটি বিশেষত শারীরিক, মানসিক, বা আর্থিক সংকট থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • শক্তি এবং সাহস অর্জন: শ্রী হনুমান কে শক্তির প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। এই স্তোত্র পাঠ করলে মানুষের ভিতরের শক্তি ও সাহস বৃদ্ধি পায়।
  • দুর্ভাগ্য দূরীকরণ: যে কোনো অশুভ শক্তি বা দুর্ভাগ্য থেকে মুক্তি পেতে এই স্তোত্রটি অত্যন্ত কার্যকর।
  • ভক্তির বৃদ্ধি: শ্রী হনুমানকে আরাধনা করার মাধ্যমে মানুষের ভক্তির বৃদ্ধি হয় এবং ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য গভীর হয়।

হনুমান অষ্টক পাঠ করার নিয়ম:

  • পূজা বা অভিষেক: সংকটমোচন হনুমান অষ্টক পাঠের আগে শুদ্ধভাবে স্নান করে শুদ্ধ অবস্থায় বসে পূজা বা অভিষেক করা উচিত। হাতে জল, ফুল বা তেল নিয়ে হনুমান মূর্তির সামনে বসে পাঠ শুরু করতে পারেন।
  • অঙ্গীকার ও মনোযোগ: পাঠের সময় মনোযোগ একাগ্র রাখতে হবে এবং মন থেকে সংকল্প করতে হবে যে, পাঠের মাধ্যমে সমস্ত সংকটের অবসান ঘটবে।
  • পাঠের সংখ্যা: এই স্তোত্রটি প্রতিদিন একবার বা নির্দিষ্ট সংখ্যক সময় (যেমন ১০৮ বার) পাঠ করা যেতে পারে। তবে এটি নিয়মিতভাবে পাঠ করার প্রচেষ্টা করা উচিত।
  • হৃদয়ঙ্গম করা: পাঠের সময় শ্রী হনুমানের মহিমা ও শক্তি সম্পর্কে গভীর ভাবে ভাবুন এবং তাঁর কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করুন।
  • পাঠের পরে প্রার্থনা: পাঠ শেষে, মনে মনে বা উচ্চারণ করে ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন এবং তাঁর আশীর্বাদ প্রার্থনা করুন।

শেষ কথা:
সংকটমোচন হনুমান অষ্টক পাঠ একটি শক্তিশালী আধ্যাত্মিক অনুশীলন। নিয়মিতভাবে এই স্তোত্রটি পাঠ করলে জীবনে শান্তি, সফলতা, এবং সবার মঙ্গল ঘটবে।

সংকটমোচন শ্রী হনুমান অষ্টক সমাপ্ত

আধ্যাত্মিক পথে উন্নতি করতে আমাদের অন্যান্য পোস্ট গুলো পড়ুন:-

১. ভোরের মঙ্গল আরতি।

২.জয় রাধে রাধে কৃষ্ণ কৃষ্ণ।

Share Please:

নমস্কার "আমি শ্রী কালিপদ, একজন হিন্দু সনাতনী। আমার লক্ষ্য হল আমার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সনাতন ধর্ম এবং হিন্দু সংস্কৃতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আমি হিন্দু ধর্মের প্রাচীন ঐতিহ্য, ধর্মগ্রন্থ, এবং আধ্যাত্মিকতার জ্ঞান সহজ ভাষায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করি, যাতে সকলেই এই মহান ধর্মের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আমি বিশ্বাস করি যে সনাতন ধর্ম শুধু একটি ধর্ম নয়, এটি একটি জীবনধারা, যা আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং জীবনের প্রকৃত অর্থ বোঝায়।"

Leave a Comment