
নবগ্রহ স্তোত্র লিরিক্স: নবগ্রহ স্তোত্র হল হিন্দু ধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ স্তোত্র যা নবগ্রহ এর পূজা ও প্রশংসার মাধ্যমে নয়টি প্রধান গ্রহের কৃপা লাভের উদ্দেশ্যে পাঠ করা হয়। এখানে নবগ্রহ বলতে সূর্য, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু ও কেতুকে বোঝানো হয়। প্রতিটি গ্রহের রয়েছে তার নিজস্ব শক্তি ও প্রভাব, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। এই স্তোত্রের মাধ্যমে প্রত্যেক গ্রহের কৃপা লাভ করা যায়, এবং জীবনের বিভিন্ন দিক যেমন স্বাস্থ্য, দাম্পত্য, পেশা, ও মানসিক শান্তির উন্নতি আর জীবনের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে সাহায্য করে। এখানে নবগ্রহ স্তোত্রের একটি জনপ্রিয় সংস্করণ দেওয়া হল।
নবগ্রহ স্তোত্র লিরিক্স
নবগ্রহ স্তোত্র
ওঁ জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্ !
ধ্বান্তারিং সর্ব্বাপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্ ॥১
দিব্য-শঙ্খ-তুষারাভং ক্ষীরার্ণব-সমুদ্ভবম্ ।
নমামি শশিনং ভক্ত্যা শন্তোষু কুটভূষণম্ ॥২
ধরণীগর্ভ-সম্ভূ তং বিদ্যুৎপুঞ্জ-সমপ্রভম্ ।
কুমারৎ শক্তিহস্তঞ্চ লোহিতাঙ্গং নমাম্যহম্ ॥৩
প্রিয়ঙ্গু-কলিকা-শ্যামৎ রূপেণাপ্রতিম বুধম্।
সৌম্যৎ সৰ্ব্বগুণোপেতং নমামি শশিনঃ সুতম্ ॥৪
দেবতানাম্ষীণাঞ্চ গুরুৎ কনকসন্নিভম্।
বন্দ্যভূতং ত্রিলোকেশ তং নমামি বৃহস্পতিম্ ॥৫
হিম-কুন্দ-মৃণালাভং দৈত্যানাং পরমং গুরুম্ ।
সর্ব্বশাস্ত্র প্রবক্তারং ভার্গবং প্রণমাম্যহম্ ॥৬
নীলাঞ্জনচয়প্রখ্যং রবিসুমুং মহাগ্রহম্।
ছায়ায়া গর্ভসম্ভূ তৎ বন্দে ভক্ত্যা শনৈশ্চরম্ ॥৭
অৰ্দ্ধকায়ং মহাযোয়ৎ চন্দ্রাদিত্যবিমৰ্দ্দকম্।
সিংহিকায়াঃ সুতং রৌদ্রং তং রাহুং প্রণমাম্যহম্ ॥৮
পলাল-ধূম-শঙ্কাশং তারা গ্রহ-বিমর্দ্দকম্।
রৌদ্রং রুদ্রাত্মকং ক্রুরং তং কেতুং প্রণমাম্যহম্ ॥৯
ব্যাসেনোক্তমিদং স্তোত্রং যঃ পঠেৎ প্রযতঃ শুচিঃ।
দিবা বা যদি বা রাত্রৌ শাস্তিস্তস্য ন সংশয়ঃ ॥১০
ঐশ্বর্য্যমতুলং তেষামারোগ্যং পুষ্টিবর্দ্ধনম্ ।
নরনারী-প্রিয়ত্বঞ্চ ভবেদ্দুঃস্বপ্ন নাশনম্ ॥১১
তক্ষকোঽগ্নিযমো বায়ু র্যে চান্তে গ্রহপীড়কাঃ।
তে সৰ্ব্বে প্রশমং যাস্তি ব্যাসো জুতে ন সংশয়ঃ || ১২
ইতি ব্যাসবিরচিতং নবগ্রহস্তোত্রং সমাপ্তম্ ।
নবগ্রহ স্তোত্রের গুরুত্ব ও পাঠের উপকারিতা
নবগ্রহ স্তোত্র হল এক বিশেষ স্তোত্র যা নয়টি প্রধান গ্রহের কৃপা লাভের জন্য পাঠ করা হয়। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, এই নয়টি গ্রহ মানুষের জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলে এবং তাদের সঠিক অবস্থান জীবনের সাফল্য, সুখ এবং সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নবগ্রহ স্তোত্র পাঠ করলে জীবনে শুভ ফল লাভ হয় এবং গ্রহজনিত দোষ দূর হয়।
নবগ্রহ স্তোত্রের উপকারিতা
নবগ্রহ স্তোত্রের নিয়মিত পাঠ বা স্তব করার মাধ্যমে একাধিক উপকারিতা লাভ করা যায়। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হল:
- গ্রহ দোষ দূরীকরণ: যে ব্যক্তি কোনো গ্রহদোষের শিকার, নবগ্রহ স্তোত্র তার জন্য একটি আদর্শ প্রতিকার হতে পারে। গ্রহের সঠিক অবস্থান না থাকলে স্তোত্রটি সেই অবস্থাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
- মানসিক শান্তি ও সুখ: গ্রহগত সমস্যার কারণে অনেক সময় মানুষের জীবনে অশান্তি ও উদ্বেগ থাকে। নবগ্রহ স্তোত্রের পাঠ মনকে শান্ত রাখে এবং জীবনকে সহজ ও সুখময় করে।
- অর্থনৈতিক উন্নতি: কিছু গ্রহ যেমন বৃহস্পতি বা শুক্র ধন, সাফল্য এবং সুখের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নবগ্রহ স্তোত্রের মাধ্যমে এসব গ্রহের কৃপা লাভ করা সম্ভব।
- শক্তি ও সাহস প্রদান: মঙ্গল গ্রহের কৃপা লাভের মাধ্যমে ব্যক্তি তার জীবনে সাহস ও শক্তি অর্জন করতে পারেন।
নবগ্রহ স্তোত্র পাঠ পদ্ধতি
নবগ্রহ স্তোত্র পাঠের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
১. স্নান ও শুদ্ধতা: প্রতিদিন সকালে স্নান করে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করা উচিত। ২. শুভ সময় নির্বাচন: ব্রাহ্ম মুহূর্ত বা সন্ধ্যা সময়ে এই স্তোত্র পাঠ করা শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। ৩. পূজা স্থল: একটি নির্দিষ্ট স্থানে নবগ্রহের চিত্র স্থাপন করে পাঠ করা উচিত। ৪. দীপ ও ধূপ প্রজ্জ্বলন: স্তোত্র পাঠের আগে ঘি বা তিল তেলের দীপ জ্বালানো এবং ধূপ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা শুভ। ৫. তুলসী ও জল নিবেদন: নবগ্রহের কৃপা লাভের জন্য পবিত্র তুলসী পাতা এবং বিশুদ্ধ জল নিবেদন করা উচিত। ৬. মনোযোগ সহকারে পাঠ: স্তোত্র পাঠের সময় পূর্ণ মনোযোগ এবং ভক্তিভরে গ্রহদেবতাদের স্মরণ করা উচিত। ৭. সমাপ্তির পরে প্রণাম: পাঠ শেষ হলে নবগ্রহদের উদ্দেশ্যে প্রণাম করে আশীর্বাদ গ্রহণ করা উচিত।
অতিরিক্ত উপকারিতা
নবগ্রহ স্তোত্র শুধু গ্রহগত সমস্যা সমাধান করতে সহায় নয়, এটি একটি আধ্যাত্মিক অভ্যাস হিসেবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পাঠ ব্যক্তির আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে, এবং একে অভ্যস্ত হয়ে ওঠার মাধ্যমে মন শান্ত থাকে এবং এক ধরনের ইতিবাচক শক্তির সংস্থান হয়।
উপসংহার
নবগ্রহ স্তোত্র পাঠ করলে জীবনে শুভ পরিবর্তন আসতে পারে। প্রতিদিন সকালে পবিত্র মনে এই স্তোত্র পাঠ করলে নবগ্রহের আশীর্বাদ পাওয়া যায় এবং জীবনের নানা বাধাবিপত্তি দূর হয়। নবগ্রহের সঠিক কৃপা লাভের জন্য নিয়মিত উপবাস, দান এবং সদগুণ পালন করাও জরুরি।
এই স্তোত্র পাঠ করার সময় ভক্তিভরে নবগ্রহদের স্মরণ করলে তারা সন্তুষ্ট হন এবং জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে।