শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পূজা পদ্ধতি (পর্ব ২) – মূল পূজার নিয়ম, মন্ত্রোচ্চারণ, ভোগ নিবেদন ও আরতির সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

Share Please:

শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পূজা পদ্ধতি: প্রথম পর্বে আমরা দেখেছি জন্মাষ্টমী পূজার প্রস্তুতি ও প্রারম্ভিক আচার। এবার দ্বিতীয় পর্বে থাকছে মূল পূজা পদ্ধতি, শ্রীকৃষ্ণের জন্য নির্ধারিত মন্ত্রোচ্চারণ এবং আরতি সম্পাদনের সঠিক নিয়ম। ভক্তিভরে এই আচারগুলো সম্পন্ন করলে জন্মাষ্টমীর পুণ্যফল লাভ হয় বহুগুণে এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভক্তের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে বিরাজ করেন।

জন্মাষ্টমী পূজা পদ্ধতি

সূচিপত্র

১১. ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পূজার প্রণাম ও ধ্যান মন্ত্র

মন্ত্র:
কৃষ্ণায় বাসুদেবায় হরয়ে পরমাত্মনে ।
প্রণতক্লেশনাশায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ॥

বসুদেবসুতং দেৱং কংসচাণূরমর্দনম্ ।
দেৱকীপরমানন্দং কৃষ্ণং বন্দে জগদগুরুম্ ॥

অর্থ: বসুদেবের পুত্র কৃষ্ণ, যিনি পরমাত্মা, শরণাগতদের সমস্ত দুঃখ দূর করেন, সেই গোবিন্দকে আমার প্রণাম। যিনি কংস ও চাণূরের বিনাশ করেছেন, দেবকীকে পরম আনন্দ দিয়েছেন এবং সমগ্র জগতের গুরু — সেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করছি।

উচ্চারণ:
ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ। ধ্যায়ামি।

(ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করে ধ্যান করুন।)


১২. শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পূজা পদ্ধতি ও মন্ত্র

ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । ধ্যায়ামি ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নমস্কার করে ধ্যান করছি।
(মূর্তি থাকলে মূর্তিতে বা পূজার থালায় নিম্নলিখিত উপচার নিবেদন করুন)

  • ১. ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । আৱাহযামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নমস্কার করে আয়োজন করছি। (অক্ষত চড়ান)
  • ২. ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । আসনার্থে অক্ষতান সমর্পযামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে আসনের জন্য অক্ষত নিবেদন করছি। (ভগবানের পায়ে অক্ষত অর্পণ করুন)
  • ৩. ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । পাদ্যং সমর্পযামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপ্রক্ষালনের জন্য জল নিবেদন করছি।
  • ৪. ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । অর্ঘ্যং সমর্পযামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অর্ঘ্যের জন্য জল নিবেদন করছি।
  • ৫. ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । আচমনীয়ং সমর্পযামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে আচ্ছমন করার জন্য জল নিবেদন করছি।
  • ৬. ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । স্নানং সমর্পযামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে স্নানের জন্য জল নিবেদন করছি।
  • ৭. ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । পঞ্চামৃত স্নানং সমর্পযামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পঞ্চামৃত স্নান করাচ্ছি।
    (পঞ্চামৃত বা দুধ ঢালুন, তারপর জল দিন। অবশিষ্ট পঞ্চামৃত ভোগে নিবেদন করুন। এরপর পুনরায় মূর্তিতে জল ঢেলে পরিষ্কার করুন, শুকনো কাপড়ে মুছে আসনে বসান।)
  • ৮. ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । বস্ত্রং সমর্পযামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বস্ত্র নিবেদন করছি। (বস্ত্র চড়ান)
  • ৯. ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । উপবীতং সমর্পযামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে যজ্ঞোপবীত (জেনেউ) নিবেদন করছি। (জেনেউ বা অক্ষত চড়ান)
  • ১০. ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । চন্দনং সমর্পযামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে চন্দন নিবেদন করছি।
  • ১১. ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । মঙ্গলার্থে হরিদ্রাং সমর্পযামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে হলুদ নিবেদন করছি।
  • ১২. ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । মঙ্গলার্থে কুঙ্কুমং সমর্পযামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কুমকুম নিবেদন করছি।
  • ১৩. ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । অলঙ্কারার্থে অক্ষতান সমর্পযামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অলঙ্কারের জন্য অক্ষত নিবেদন করছি।
  • ১৪. ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । পূজার্থে ঋতুকালোদ্ভব পুষ্পাণি তুলসীপত্রাণি চ সমর্পযামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ঋতুকালীন ফুল ও তুলসীপাতা নিবেদন করছি।

১৩. জন্মাষ্টমী অঙ্গপূজা মন্ত্র

(নীচের মন্ত্রগুলি উচ্চারণ করে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গগুলিতে কাছে থেকে; কিন্তু স্পর্শ না করে, অক্ষত (চাল) অর্পণ করুন।)

  • শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । পদৌ পূজয়ামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পায়ে অক্ষত অর্পণ করুন।
  • সংকর্শণায় নমঃ । গুল্ফৌ পূজয়ামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের টাখনায় অক্ষত অর্পণ করুন।
  • কালাত্মনে নমঃ । জানুনী পূজয়ামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হাঁটুতে অক্ষত অর্পণ করুন।
  • বিশ্বকর্মণে নমঃ । জঙ্ঘে পূজয়ামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উরুতে অক্ষত অর্পণ করুন।
  • বিশ্বনেত্রায় নমঃ । কাটিং পূজয়ামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কোমরে অক্ষত অর্পণ করুন।
  • বিশ্বকত্রে নমঃ । মেধুঁ পূজয়ামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গোপ্যাঙ্গে অক্ষত অর্পণ করুন।
  • পদ্মনাভায় নমঃ । নাভিং পূজয়ামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাভিতে অক্ষত অর্পণ করুন।
  • পরমাত্মনে নমঃ । হৃদন্ত পূজয়ামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়ে অক্ষত অর্পণ করুন।
  • শ্রীকণ্ঠায় নমঃ । কণ্ঠং পূজয়ামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গলায় অক্ষত অর্পণ করুন।
  • সর্বাস্ত্রধারিণে নমঃ । বাহূ পূজয়ামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দুই বাহুতে অক্ষত অর্পণ করুন।
  • বাচস্পতয়ে নমঃ । মুখং পূজয়ামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখে অক্ষত অর্পণ করুন।
  • কেশবায় নমঃ । ললাটং পূজয়ামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কপালে অক্ষত অর্পণ করুন।
  • সর্বাত্মনে নমঃ । শিরঃ পূজয়ামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শিরে অক্ষত অর্পণ করুন।
  • বিশ্বরূপিণে নারায়ণায় নমঃ । সর্বাঙ্গং পূজয়ামি ।
    ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মাথা থেকে পা পর্যন্ত অক্ষত অর্পণ করুন।

১৪.জন্মাষ্টমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণাকে ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য নিবেদন মন্ত্র

ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । ধূপং সমর্পয়ামি ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ধূপ নিবেদন করছি।
(ধূপ, আগরবাতি দিয়ে আরতি করুন।)

ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । দীপং সমর্পয়ামি ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দীপ দিয়ে আরতি করুন।
(দীপ দিয়ে আরতি করুন।)

ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । নৈবেদ্যার্থে পুরতস্থাপিত পৃথুকাদি খাদ্যোপহার নৈবেদ্যং নিবেদয়ামি ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সামনে রাখা অন্নপদার্থের নৈবেদ্য নিবেদন করছি।
(নৈবেদ্য অর্পণ করুন।)


১৫. জন্মাষ্টমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণাকে নৈবেদ্য অর্পণ ও মন্ত্র

নৈবেদ্য অর্পণ
ডান হাতে দুটি তুলসীপাতা নিয়ে সেগুলো জলেতে ভিজিয়ে সেই তুলসীপাতার সাহায্যে নৈবেদ্যের উপর জল ছিটিয়ে দিন। তুলসীপাতা হাতে ধরে রাখুন এবং বাঁ হাত বুকে রেখে নিচের মন্ত্রের “স্বাহা” শব্দ উচ্চারণের সময় ডান হাত নৈবেদ্য থেকে দেবতার দিকে বাড়িয়ে দিন।

নৈবেদ্য মন্ত্র

  • প্রাণায় স্বাহা ।
    এটি প্রাণের জন্য অর্পণ করছি।
  • আপানায় স্বাহা ।
    এটি আপানের জন্য অর্পণ করছি।
  • ব্যানায় স্বাহা ।
    এটি ব্যানের জন্য অর্পণ করছি।
  • উদানায় স্বাহা ।
    এটি উদানের জন্য অর্পণ করছি।
  • সমানায় স্বাহা ।
    এটি সমানের জন্য অর্পণ করছি।
  • ব্রহ্মণে স্বাহা ।
    এটি ব্রহ্মের জন্য অর্পণ করছি।

১৬. ভগবান শ্রীকৃষ্ণাকে জন্মাষ্টমীতে নৈবেদ্য সমর্পণ মন্ত্র

নৈবেদ্য সমর্পণ
(হাতে নেয়া একটি তুলসীপাতা নৈবেদ্যের উপর এবং অপরটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে চড়িয়ে দিন। নিচের মন্ত্রের “সমর্পযামি” শব্দ উচ্চারণের সময় আচমনী থেকে ডান হাতে জল নিয়ে পূজার থালায় ফেলে দিন।)

মন্ত্র
ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । নৈবেদ্যং সমর্পযামি ।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নৈবেদ্য অর্পণ করছি।

মধ্যেপানীয়ং সমর্পযামি ।
মধ্যভাগে পান করার জন্য জল অর্পণ করছি।

উত্তরাপোশনং সমর্পযামি ।
আপোশনের জন্য জল অর্পণ করছি।

হস্তপ্রক্ষালনং সমর্পযামি ।
হাত ধোয়ার জন্য জল অর্পণ করছি।

মুখপ্রক্ষালনং সমর্পযামি ।
মুখ ধোয়ার জন্য জল অর্পণ করছি।

করোদ্বর্তনার্থে চন্দনং সমর্পযামি ।
হাতে মাখার জন্য চন্দন অর্পণ করছি।

মুখবাসার্থে পুঙ্গিফলং তাম্বূলং সমর্পযামি ।
মুখ সুগন্ধিত করার জন্য পান-সুপারি অর্পণ করছি।


১৭. শ্রীকৃষ্ণ এর আরতি গীত।


ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নমস্কার করে মঙ্গল আরতি করবেন, সম্পূর্ণ আরতি টি নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করলে পাবেন ।

>> শ্রীকৃষ্ণ আরতি – ‘আরতি কুঞ্জবিহারি কি, শ্রী গিরিধর কৃষ্ণমুরারি কি’ নিম্ন আরতি গাওয়া হবে।

(আরতি করার পর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কি কর্পূর এর আরতি করবেন।)


১৮. ভগবান শ্রীকৃষ্ণাকে জন্মাষ্টমীতে কপুরদীপ, প্রণাম অর্পণ, প্রদক্ষিণ, পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র।

ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । কপুরদীপ অর্পণ করিলাম।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করে কপুর আরতি করিতেছি।

ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । প্রণাম অর্পণ করিলাম।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করিতেছি।
(ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অষ্টাঙ্গ প্রণাম করুন।)

ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । প্রদক্ষিণ অর্পণ করিলাম।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রদক্ষিণ করিতেছি।
(ঘড়ির কাঁটার দিক অনুযায়ী, অর্থাৎ বাঁ দিক থেকে ডান দিকে বৃত্তাকারে ঘুরে প্রদক্ষিণ করুন।)

ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ । মন্ত্রপুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করিলাম।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে মন্ত্রপুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করিতেছি।
(অঞ্জলিতে ফুল নিয়ে নিবেদন করুন।)


১৯. জন্মাষ্টমী পূজার শেষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণাএর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা মন্ত্র

আবাহনং ন জানামি ন জানামি তবার্চনম্।
পূজাং চৈব ন জানামি ক্ষম্যতাং পরমেশ্বর ॥

হে পরমেশ্বর, আমি জানি না কীভাবে আপনার আবাহন করতে হয়, আপনার উপাসনা করতে হয়, আপনার পূজা করতে হয়। তাই আমি আপনাকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং ভক্তিহীনং সুরেশ্বর।
যৎ পূজিতং ময়া দেব পরিপূর্ণং তদস্তু মে ॥

হে দেবেশ্বর, আমি মন্ত্রহীন, ক্রিয়াহীন এবং ভক্তিহীন। এই পূজাটিকে আপনি সম্পূর্ণ বলে গ্রহণ করুন।

কায়েন বাচা মনসেন্দ্রিয়ৈর্বা বুদ্ধ্যাত্মনা বা প্রকৃতিস্বভাবত্।
করোমি যদ্ যৎ স কলং পরস্মৈ সদ্গুরবে ইতি সমর্পয়ে তৎ ॥

হে গুরুদেব, দেহ, বাক্য, মন, ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি, আত্মা বা প্রকৃতিগত স্বভাব অনুযায়ী আমি যা কিছু করি, সবই আমি আপনাকে অর্পণ করছি।

(এভাবে বলে ডান হাতে জল নিয়ে ছেড়ে দিন এবং দুইবার আচমন করুন।)


২০. চন্দ্র পূজা বিধি

(পানের পাতায় চন্দন দিয়ে চন্দ্রের ছবি আঁকুন এবং নিম্ন মন্ত্রগুলি দ্বারা পূজা করুন।)

মন্ত্র:
সোমেশ্বরায় সোমায় তথা সোমোদ্ভবায় চ।
সোমস্য পতয়ে নিত্যং তুভ্যং সোমায় বৈ নমঃ ॥

অমৃতসম সোমেশ্বর এবং সোম (চন্দ্র) কে আমি নমস্কার করি এবং যজ্ঞে ব্যবহৃত সোমলতা ও চন্দ্র থেকে উৎপন্নকে আমি নিত্য নমস্কার জানাই।

চন্দ্রমসে নমঃ। ধ্যায়ামি। সর্বোপচারার্থে গন্ধাক্ষতপুষ্পং সমর্পয়ামি।
চন্দ্রের ধ্যান করে, সকল উপচার সম্পূর্ণ হোক এই কামনায়, গন্ধ, ফুল, অক্ষত অর্পণ করছি।

(চন্দ্রদেবতাকে অর্ঘ্য দিন।)
(অঞ্জলিতে গন্ধ, ফুল, অক্ষত, জল নিয়ে নিম্ন মন্ত্রগুলি উচ্চারণ করে দেবতার সামনে থালায় অর্ঘ্য দিন।)

মন্ত্র:
ক্ষীরোদর্ণবসম্ভূত অত্রিগোত্রসমুদ্ভব।
গৃহাণার্ঘ্যং শশাঙ্কেশ রোহিণীসহিতো মম ॥

ক্ষীরসাগর থেকে উৎপন্ন, অত্রিগোত্রে জন্মগ্রহণকারী, রোহিণীসহ অবস্থানকারী, হে চন্দ্র, আপনি এই অর্ঘ্য গ্রহণ করুন।

জ্যোৎস্নাপতে নমস্তুভ্যং জ্যোতিষাং পতয়ে নমঃ।
নমস্তে রোহিণীকান্ত অর্ঘ্যং নঃ প্রতিগৃহ্যতাম্ ॥

হে জ্যোৎস্নাপতি, চাঁদের আলোয়ের অধিপতি, আপনাকে আমি নমস্কার করছি। হে রোহিণীকান্ত চন্দ্র, আপনি এই অর্ঘ্য গ্রহণ করুন। আমি আপনাকে নমস্কার জানাই।

চন্দ্রমসে নমঃ। ইদমর্ঘ্যং দত্তং ন মম।
চন্দ্রকে আমি নমস্কার করছি। এই অর্ঘ্য আমি প্রদান করলাম। এটি আর আমার নয়।


২১. ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অর্ঘ্য প্রদান বিধি

(অঞ্জলিতে গন্ধ, ফুল, অক্ষতা, জল নিন এবং নিম্ন মন্ত্রের উচ্চারণ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সামনে থালায় ছেড়ে দিন।)

জাতঃ কংসবধার্থায় ভূভারোত্তারণায় চ।
পাণ্ডবানাং হিতার্থায় ধর্মসংস্থাপনায় চ॥
কৌরবানাং বিনাশায় দৈত্যানাং নিধনায় চ।
গৃহাণার্থং ময়া দত্তং দেবক্যা সহিতো হরে॥

কংসের বধ করার জন্য, ভূমিতে উপস্থিত দুষ্টদের ভার হ্রাস করার জন্য, পাণ্ডবদের মঙ্গল সাধনের জন্য, ধর্মসংস্থাপনা করার জন্য, কৌরবদের বিনাশ করার জন্য এবং দানবদের ধ্বংস করার জন্য অবতার ধারণকারী; দেবকীর সাথে আগত হে হরি, আমি প্রদত্ত এই অর্ঘ্য গ্রহণ করুন।

ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ। ইদমর্ঘ্যং দত্তং ন মম।

ত্রাহি মাং সর্বলোদেশ হরে সংসারসাগরাত্।
ত্রাহি মাং সর্বপাপঘ্ন দুঃখশোকার্ণবাত্প্রভো॥

হে সর্বলোকেশ্বর (শ্রীকৃষ্ণ), আপনি আমাকে এই সংসারসাগর থেকে রক্ষা করুন। সকল পাপ নাশকারী হে শ্রীকৃষ্ণ, আপনি আমাকে দুঃখ ও শোকের সমুদ্র থেকে রক্ষা করুন।

সর্বলোকেেশ্বর ত্রাহি পতিতং মাং ভবর্ণবে।
ত্রাহি মাং সর্বদুঃখঘ্ন রোগশোকার্ণবাদ্ধরে॥

হে জগদীশ, ভবসাগরে পতিত আমায় আপনি ভবসাগর পার করিয়ে দিন। সকল দুঃখ নাশকারী হে শ্রীকৃষ্ণ, আপনি আমাকে এই শোকসাগর থেকে রক্ষা করুন।

দুর্গতাংস্ত্রায়সে বিষ্ণো যে স্মরন্তি সকৃত্ সকৃত্।
ত্রাহি মাং দেবদেবেশ ত্বত্তো নান্যোস্তি রক্ষিতা॥

হে পরমেশ্বর স্বরূপ, যারা একবারও আপনার স্মরণ করে, তাদের আপনি দুর্গতি থেকে রক্ষা করেন। হে দেবাধিদেব, আপনার মতো রক্ষক আর কেউ নেই, আপনি আমাকে রক্ষা করুন।

যদ্বা ক্বচন কৌমারে যৌবনে যচ্চ বার্ধকে।
তৎপুণ্যং বৃদ্ধীমায়াতু পাপং দহ হালায়ুধ॥

কিশোরাবস্থা, যৌবন ও বার্ধক্যে আমি যা কিছু পুণ্য করেছি, তা বৃদ্ধি করুন এবং আমার সমস্ত পাপ বিনাশ করুন, হে হালায়ুধ (শ্রীকৃষ্ণ), আপনার চরণে বিনীত প্রার্থনা।

ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ। প্রার্থনা সমর্পয়ামি।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রার্থনা করছি।
(হাত জোড় করে প্রার্থনা করুন এবং ভগবানের কৃপায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। শেষে দু’বার আচমন করুন।)

ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়।
ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়।


উপসংহার

জন্মাষ্টমী পূজার মূল আচার, মন্ত্রোচ্চারণ ও আরতি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে ভক্তের হৃদয়ের বন্ধনকে অটুট করে। এই পূজা কেবল একটি আচার নয়, এটি কৃষ্ণপ্রেমের এক অপূর্ব প্রকাশ। নিষ্ঠা ও ভক্তিসহকারে জন্মাষ্টমী পালন করলে জীবনে কল্যাণ, শান্তি ও আনন্দ নেমে আসে।


কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পূজা পদ্ধতি (পর্ব ১) সম্পূর্ণ জানতে নিচে লিংক এ ক্লিক করুন।

>> শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পূজা পদ্ধতি (পর্ব ১)

আমাদের অন্যান্য পোস্ট গুলো পড়ুন:-

Share Please:
অস্বীকৃতি

এই লেখা ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক তথ্য সরবরাহের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এতে বর্ণিত পুজা পদ্ধতি, মন্ত্র এবং অন্যান্য তথ্য প্রাচীন শাস্ত্র, লোকাচার ও ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছে। পাঠকদের অনুরোধ করা হচ্ছে, নিজের বিশ্বাস ও সুবিধা অনুযায়ী পুজা পদ্ধতি গ্রহণ করুন। যেকোনো ধর্মীয় কাজ করার আগে যোগ্য পণ্ডিত বা বিদ্বান থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই লেখায় দেওয়া তথ্য ব্যবহারের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে ব্যবহারকারীর ওপর থাকবে।

আপনার মতামত জানাতে এবং নতুন ধর্মীয় পোস্টের আপডেট পেতে WhatsApp গ্রুপে যোগ দিন! Join Now

নমস্কার! আমি শ্রী গোপাল চন্দ্র — একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু সনাতনী। আমি বিগত সাত বছরের ও অধিক সময় ধরে, হিন্দু ধর্ম, সনাতন সংস্কৃতি এবং ভারতীয় আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য নিয়ে নিয়মিতভাবে অনুশীলন ও লেখালেখি করে আসছি। আমি হিন্দু ধর্মের প্রাচীন ঐতিহ্য, ধর্মগ্রন্থ, এবং আধ্যাত্মিকতার জ্ঞান সহজ ভাষায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করি, যাতে সকলেই এই মহান ধর্মের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আমি বিশ্বাস করি যে সনাতন ধর্ম শুধু একটি ধর্ম নয়, এটি একটি জীবনধারা, যা আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং জীবনের প্রকৃত অর্থ বোঝায়।"

Leave a Comment