শ্রী শ্রী গুরু বন্দনা লিরিক্স আধ্যাত্মিকতার পথের

গুরু বন্দনা লিরিক্স

গুরু বন্দনা লিরিক্স জীবনের পথপ্রদর্শক

গুরু বন্দনা লিরিক্স:হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতিতে, “গুরু বন্দনা” একটি গুরুত্বপূর্ণ আরাধনা যা যে কোনো দেব দেবীর পূজা বা অনুষ্ঠান শুরু করার পূর্বে গুরু বন্দনা করতে হয়। গুরুকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই, গুরু বন্দনার মাধ্যমে শিষ্য গুরুদেব প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করে।

গুরু বন্দনা

আশ্রয় করিয়া বন্দোঁ শ্রীগুরু চরণ।
যাহা হৈতে মিলে ভাই কৃষ্ণপ্রেমধন।।

জীবের নিস্তার লাগি নন্দ-সুত হরি।
ভুবনে প্রকাশ হয় গুরু-রুপ ধরি।।

মহিমায় গুরু কৃষ্ণ এক করি জান।
গুরু-আজ্ঞা হৃদে সব সত্য করি মান।।

সত্য-জ্ঞানে গুরু-বাক্যে যাহার বিশ্বাস।
অবশ্য তাহার হয় ব্রজভূমে বাস।।

যার প্রতি গুরুদেব জন পরসন্ন।
কোন বিঘ্নে সেহ নাহি হয় অবসন্ন।।

কৃষ্ণ রুষ্ট হলে গুরু রাখিবারে পারে।
গুরু রুষ্ট হলে কৃষ্ণ রাখিবারে নারে।।

গুরু মাতা গুরু পিতা গুরু হন পতি।
গুরু বিনা এ সংসারে নাহি আর গতি।।

গুরুকে মনুষ্য জ্ঞান না কর কখন।
গুরু-নিন্দা কভু কর্ণে না কর শ্রবন।।

গুরু-নিন্দুকের মুখ কভু না হেরিবে।
যথা হয় গুরু-নিন্দা তথা না যাইবে।।

গুরুর বিক্রিয়া যদি দেখহ কখন।
তথাপি অবজ্ঞা নাহি কর কদাচন।।

গুরু-পাদপদ্মে রহে যার নিষ্ঠা ভক্তি।
জগৎ তারিতে সেই ধরে মহাশক্তি।।

হেন গুরু-পাদপদ্ম করহ বন্দনা।
যাহা হৈতে ঘুচে ভাই সকল যন্ত্রণা।।

গুরু-পাদপদ্ম নিত্য যে করে বন্দন।
শিরে ধরি বন্দি আমি তাহার চরণ।।

শ্রীগুরু-চরণ পদ্ম হৃদে করি আশ।
শ্রীগুরু-বন্দনা করে সনাতন দাস।।

হরে কৃষ্ণ„হরে কৃষ্ণ„কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম„ রাম রাম হরে হরে!!!!


গুরু ও শিষ্যের সম্পর্ক

শিষ্য ও গুরুদের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে, যা অতুলনীয়। শিষ্য যখন সত্যের সন্ধানে মগ্ন হন, তখন গুরুরই প্রয়োজন হয় তাকে পথ দেখানোর জন্য। এই সম্পর্কের মূল ভিত্তি হল শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস। একজন গুরু কখনোই নিজের স্বার্থে কাজ করেন না, বরং শিষ্যদের মঙ্গলার্থে, তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি ও নৈতিক উৎকর্ষের জন্য কাজ করেন।

গুরু শিষ্যকে জীবন সম্পর্কে গূঢ় জ্ঞান দেন, এবং সেই জ্ঞান তাকে আধ্যাত্মিক জীবনের সত্যি মানে ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করে।

গুরুর প্রতি শিষ্যের কর্তব্য

গুরুর প্রতি শিষ্যের শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও আনুগত্য থাকা অত্যন্ত জরুরি। গুরুই শিষ্যকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেন, তবে এর জন্য শিষ্যের বিনয়ী, অধ্যবসায়ী ও সৎ হওয়া প্রয়োজন।

শিষ্যের প্রধান দায়িত্ব হলো গুরুর আদেশ ও শিক্ষাকে যথাযথভাবে গ্রহণ ও অনুসরণ করা। কেবল জ্ঞান অর্জনই নয়, বরং তা জীবনে প্রয়োগ করাই প্রকৃত শিষ্যের কর্তব্য। গুরুর প্রতি অবিশ্বাস বা অবজ্ঞা শিষ্যেকে বিপথগামী এবং পাপিষ্ঠা করে তুলতে পারে। সুতরাং, গুরুর প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস রেখে, তার আদর্শ অনুসরণ করাই শিষ্যের প্রকৃত কর্তব্য।


গুরু বন্দনার উপকারিতা

গুরু বন্দনা হল গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। শাস্ত্র অনুযায়ী, গুরুই হলেন সেই দীপ, যিনি অজ্ঞানের অন্ধকার দূর করে শিষ্যকে জ্ঞানের আলোকিত পথে এগিয়ে নিয়ে যান। গুরুকে যথাযথভাবে সম্মান ও বন্দনা করলে তার আশীর্বাদ ও কৃপা লাভ করা যায়, যা শিষ্যের জীবনে অসংখ্য উপকার বয়ে আনে।

১. আধ্যাত্মিক উন্নতি

গুরু বন্দনা শিষ্যকে আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। একজন প্রকৃত গুরু শিষ্যকে সত্য, ধর্ম ও মোক্ষের পথ দেখান। গুরুর কৃপা ছাড়া আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন করা প্রায় অসম্ভব। তাই গুরুর প্রতি ভক্তি ও সমর্পণই শিষ্যকে আত্মজ্ঞান ও মুক্তির পথে পরিচালিত করে।

২. জ্ঞানের প্রসার ও আত্মবিকাশ

গুরুই হলেন জ্ঞানের ভাণ্ডার। তার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলে শিষ্যের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায়। গুরু বন্দনার মাধ্যমে শিষ্য তার গুরুর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার শিখতে পারে, যা তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৩. মানসিক শান্তি ও স্থিরতা

গুরুর আশীর্বাদে শিষ্য মানসিক অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা ও বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি পায়। গুরু শিষ্যকে সঠিক দিশা দেখান, যা তার জীবনে এক অটল স্থিরতা ও মানসিক শান্তি এনে দেয়। গুরু বন্দনা করলে হৃদয়ে আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয় এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে।

৪. নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা গঠন

গুরু বন্দনা একজন শিষ্যের নৈতিক চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গুরুর শিক্ষায় শিষ্য সৎ, বিনয়ী ও সংযমী হয়। সে আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখে এবং জীবনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারে, যা তার সার্বিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য।

৫. কর্মজীবনে সফলতা

শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নতিই নয়, গুরুর উপদেশ ও দীক্ষা অনুসরণ করলে কর্মক্ষেত্রেও সফলতা লাভ করা যায়। গুরুর দেওয়া জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দিকনির্দেশনা অনুসরণ করলে যে কোনো কাজে শিষ্য সিদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়।

৬. আত্মবিশ্বাস ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি

গুরু বন্দনা শিষ্যের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করে। গুরু শিষ্যকে সঠিক ও ভুলের পার্থক্য বোঝান, যা তাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা প্রদান করে।

৭. দুর্দশা ও বাধা দূরীভূত হয়

গুরু বন্দনা করলে শিষ্য জীবনের বিভিন্ন বাধা, কষ্ট ও দুর্দশা থেকে মুক্তি পায়। গুরুর কৃপায় শিষ্যের পথের সকল অন্তরায় দূর হয় এবং তার জীবন আনন্দ ও সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে।


উপসংহার

গুরু বন্দনা কেবল শুদ্ধ আচার নয়, এটি একটি আধ্যাত্মিক অভ্যাস যা শিষ্যকে জীবনের গভীর অর্থ বুঝতে সাহায্য করে। একজন প্রকৃত গুরু হচ্ছেন জীবনের একমাত্র সত্য পথপ্রদর্শক, যিনি নিজে সত্য জানেন এবং তার শিষ্যদের সেই সত্যের প্রতি অনুপ্রাণিত করেন। গুরু বন্দনা আমাদের মন ও মনের দুঃখ দূর করে আধ্যাত্মিক শান্তি প্রদান করে।

আমরা প্রতিদিন আমাদের গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, তাঁর আদর্শ ও শিক্ষায় আত্মসমর্পণ করে জীবনে সত্য ও জ্ঞানের আলোকে বাঁচতে পারি।

“গুরুর কৃপা ছাড়া জ্ঞানের আলো প্রাপ্তি অসম্ভব। তাই গুরুকে সর্বদা শ্রদ্ধা জানানো উচিত।”

গুরু বন্দনা কীর্তন সমাপ্ত।

আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি করতে আমাদের অন্যান্য পোস্ট গুলো পড়ুন!

১.সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার নিয়ম।

২.শ্রী কৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম লিরিক্স।

Share Please:

Leave a Comment