আমরা সকলেই জানি — শনিদেব হলেন কর্মফলদাতা। তিনি আমাদের প্রতিটি কাজের ভিত্তিতে উপযুক্ত ফল দিয়ে থাকেন। অনেকে তাকে ভয় পান, আবার কেউ কেউ অনুভব করেন যে শনির প্রভাবেই তাদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে। আসলে, শনিদেব ভয় পাওয়ার দেবতা নন — তিনি আমাদের জীবনে সতর্কতা, আত্মবিশ্বাস ও আত্মশুদ্ধির বার্তা নিয়ে আসেন।
যদি ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহকারে নিয়মিত শনি চালীসা পাঠ করা যায়, তবে তাঁর কৃপা লাভ করা একেবারেই সম্ভব। শনি চালীসা হল এমন একটি শক্তিশালী স্তোত্র, যা সহজ ভাষায় রচিত হলেও তার আধ্যাত্মিক প্রভাব গভীর। এটি পাঠ করলে জীবনের বাধা-বিপত্তি, মানসিক চাপ ও কর্মে বিঘ্ন কাটিয়ে উঠতে সাহস ও শক্তি পাওয়া যায়।

শনি চালীসা: শনিদেবের কৃপা পাওয়ার সহজ পথ
আপনি চাইলে নিচে ‘শনি চালীসা বাংলা অনুবাদসহ’ সম্পূর্ণ পাঠ দেওয়া হয়েছে। এতে উচ্চারণসহ সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে নতুন ভক্তরাও নির্ভয়ে ও সহজে পাঠ করতে পারেন।”
শনি চালীসা॥ দোহা ॥
জয় গণেশ গিরিজা সুমন, মঙ্গল করণ কৃপাল।
দীনন কে দুখ দূর করি, কিজে নাথ নিহাল॥
জয় জয় শ্রী শনিদেব প্রভু, সুনো বিনয় মহারাজ।
করহু কৃপা হে রবি তনয়, রাখো জন কি লাজ॥
শনি চালীসা॥ চৌপাই ॥
শনিদেবের রূপ ও মহিমা
জয়তি জয়তি শনিদেব দয়ালা। করত সদা ভক্তন প্রতিপালা॥
চারি ভুজা, তনু শ্যাম বিরাজে। মাথে রতন মুকুট ছবি ছাজে॥
পরম বিশাল মনোহর ভালা। টেড়ি দৃষ্টি ভ্রুকুটি বিকরালা॥
কুন্ডল শ্রবণ চমাচম চমকে। হিয় মাল মুক্তন মণি দমকে॥
কর মে গদা ত্রিশূল কুঠারা। পল বিচ করেঁ অরিহিঁ সংহারা॥
পিঙ্গল, কৃষ্ণিঁ, ছায়া নন্দন। যম, কৌণস্থ, রৌদ্র, দুখভঞ্জন॥
শৌরি, মন্দ, শনি, দশ নামা। ভানু পুত্র পূজহিঁ সব কামা॥
জা পর প্রভু প্রসন্ন হ্যাঁই জাহিঁ। রিঙ্কহুঁ রাও করেঁ ক্ষণ মাঁহিঁ॥
মহাকাব্যের ঘটনায় শনিদেবের প্রভাব
পর্বতহুঁ তৃণ হই নিহারত। তৃণহুঁ কো পর্বত করিঁ ডারত॥
রাজ মিলত বন রামহিঁ দীনহ্যো। কৈকেয়িহুঁ কি মতি হরি লীনহ্যো॥
বনহুঁ মে মৃগ কপট দেখায়ি। মাতু জানকী গই চুরায়ি॥
লক্ষণহিঁ শক্তি বিকল করিডারা। মচিগা দল মে হাহাকারা॥
রাবণ কি গতি মতি বউরায়ি। রামচন্দ্র সোঁ বৈর বাড়ায়ি॥
দিও কীট করিঁ কঞ্চন লঙ্কা। বজে বজরঙ্গ বীর কি ডঙ্কা॥
নৃপ বিক্রম পর তুহিঁ পগু ধারা। চিত্র ময়ূর নিগলি গ্যো হারা॥
হার নৌলখা লাগ্যো চোরি। হাথ পায়র ডরবায় তোড়ি॥
ভারি দশা নিকৃষ্ট দেখায়ো। তেলিহিঁ ঘর কোলহূ চলায়ো॥
বিনয় রাগ দীপক মহঁ কিনহ্যো। তব প্রসন্ন প্রভু হ্যাঁই সুখ দিনহ্যো॥
হরিশচন্দ্র নৃপ নারি বিকানী। আপহুঁ ভরে ডোম ঘর পানি॥
তৈসে নল পর দশা সিরানী। ভুঁজীমীন কূদ গই পানি॥
শ্রী শঙ্করহিঁ গহ্যো জব জায়ি। পার্বতী কো সতী করায়ি॥
তনিক বিলোকত হিঁ করিঁ রীসা। নভ উড়ি গ্যো গৌরিসুত সীসা॥
পাণ্ডব পর ভ্যো দশা তোমহারি। বচী দ্রৌপদী হোতি উঘারি॥
কৌরব কে ভি গতি মতি মার্যো। যুদ্ধ মহাভারত করিঁ ডার্যো॥
শনিদেবের বাহন, ধাতু ও পূজার ফলাফল
রবি কহঁ মুখ মহঁ ধরি ততকালা। লেকর কুদি পর্যো পাতালা॥
শেষ দেবলখি বিনতী লায়ি। রবি কো মুখ তে দিও ছুড়ায়ি॥
বাহন প্রভু কে সাত সাজানা। জগ দিগ্গজ গর্দভ মৃগ স্বানা॥
জম্ভুক সিংহ আদি নখ ধারী। সো ফল জ্যোতিষ কহত পুকারী॥
গজ বাহন লক্ষ্মী গৃহ আভ্যায়ে। হয় তে সুখ সম্পত্তি উপজায়ে॥
গর্দভ হানি করে বহু কাজা। সিংহ সিদ্ধিকর রাজ সমাজা॥
জম্ভুক বুদ্ধি নষ্ট কর ডারে। মৃগ দে কষ্ট প্রাণ সংহারে॥
যব আভ্যাঁহিঁ প্রভু স্বান সওয়ারী। চোরি আদি হোয় ডর ভারী॥
তৈসহিঁ চারি চরণ ইহ নামা। স্বর্ণ লৌহ চাঁদী অরু তামা॥
লৌহ চরণ পর যব প্রভু আভ্যাঁহে। ধন জন সম্পত্তি নষ্ট করাভ্যাঁহে॥
সমতা তাম্র রজত শুভকারী। স্বর্ণ সর্ব সুখ মঙ্গল ভারী॥
জো ইহ শনি চরিত্র নিত গাওয়্য। কভুহুঁ না দশা নিকৃষ্ট সাওয়্য॥
অদ্ভুত নাথ দিখাভ্যাঁ লীলা। করেঁ শত্রু কে নশি বলি ঢীলা॥
জো পণ্ডিত সুযুক্ত বুলায়ি। বিধি বত শনি গ্রহ শান্তি করায়ি॥
পীপর জল শনি দিবস চড়াবত। দীপ দান দে বহু সুখ পাবত॥
কহত রাম সুন্দর প্রভু দাসা। শনি সুমিরত সুখ হোত প্রকাশা॥
শনি চালীসা॥ দোহা ॥
পাঠ শনিচর দেব কো, কি হোঁ ভক্ত তৈয়ার।
করত পাঠ চালিস দিন, হো ভবসাগর পার॥
শনির বীজ মন্ত্র
শনির বীজ মন্ত্র হল: “ওঁ ঐং হ্রীং শ্রীং শনৈশ্চরায় নমঃ”।
শনি দেব কে? (Who is Shani Dev?)
শনি দেব হিন্দু ধর্মে একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রহদেবতা, যিনি ন্যায়বিচার ও কর্মফলের প্রতীক হিসেবে পূজিত হন। তিনি সূর্যদেব ও ছায়াদেবীর পুত্র।
- দর্শনে: শনি দেবকে সাধারণত গাঢ় নীল বা কালো বর্ণের, হাতে দণ্ড ধারণকারী এবং পক্ষীরাজ পাখির (কাক/শনি যান) উপর উপবিষ্ট অবস্থায় কল্পনা করা হয়।
- গ্রহগত দিক থেকে: তিনি নবগ্রহদের অন্যতম শক্তিশালী গ্রহ।
- আধ্যাত্মিক দিক থেকে: তিনি কর্মফলদাতা – যিনি ভালো কাজের ফল দেন আশীর্বাদ হিসেবে এবং খারাপ কাজের জন্য দিয়ে থাকেন শিক্ষা এবং শোধনের সুযোগ।
- লোকবিশ্বাসে: শনি মানেই সর্বনাশ নয়। বরং, তিনি আমাদের নিজের ভুল বোঝার ও সংশোধনের সুযোগ দেন।
শনি চালীসা কবে এবং কীভাবে পাঠ করবেন?
কীভাবে পাঠ করবেন:
- চালীসা পাঠ করার পূর্বে স্নান করে পরিষ্কার কাপড় পরুন
- বাড়ির মন্দিরে বা কোনো শুদ্ধ ও শান্ত স্থান বেছে নিন
- একটি তিল তেলের প্রদীপ ও ধূপ জ্বালিয়ে মন দিয়ে চালীসা পাঠ করুন
- শেষে শনিদেবকে প্রণাম করে নিজের মনোবাসনা প্রকাশ করুন
কোন দিনে পড়বেন?
- শনিবার – সবচেয়ে শুভ দিন শনিদেবের জন্য
- অমাবস্যা দিনেও বিশেষ ফলপ্রদ
- চাইলে প্রতিদিন সকাল বা সন্ধ্যায়ও পাঠ করা যায়
শনি চালীসা পাঠের বৈজ্ঞানিক ও মনোবৈজ্ঞানিক দিক
বহু গবেষণা বলছে, যখন একজন ব্যক্তি নির্দিষ্ট মন্ত্র বা স্তোত্র পাঠ করে, তার মনঃসংযোগ বাড়ে, কর্টিসল হরমোন (স্ট্রেস হরমোন) কমে, এবং স্নায়বিক স্থিরতা আসে।
- শনি চালীসার ছন্দ ও শব্দ তরঙ্গ মস্তিষ্ককে শান্ত করে
- এর পাঠে রিল্যাক্সেশন ও মেডিটেটিভ এফেক্ট তৈরি হয়
- এতে অন্তর থেকে আত্মবিশ্বাস ও শক্তি বাড়ে
শনি চালীসা কী?
শনি চালীসা হল একটি ৪০টি চরণের স্তোত্র, যেটি শনিদেবকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে। এই স্তোত্র পাঠ করলে শনির দোষ কমে যায়, এবং জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি, কর্মে সাফল্য ও মানসিক স্থিরতা ফিরে আসে।
স্বরূপ: ভক্তি ও প্রার্থনার মিলিত রূপ
অর্থ: প্রতিটি চরণে শনিদেবের গুণ, লীলা ও কৃপা বর্ণনা করা হয়েছে
শনি চালীসা পাঠের উপকারিতা
- শনির সাড়ে সাতি ও ধৈয়া দোষ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়
- চাকরি, ক্যারিয়ার ও ব্যবসায় উন্নতি হয়
- মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দূর হয়
- আর্থিক সমস্যার নিরসন ঘটে
- পারিবারিক শান্তি বজায় থাকে
- শত্রু, মামলা-মকদ্দমা থেকে মুক্তি ঘটে
- পরিবারে সম্পর্কের দূরত্ব কমে
- আত্মবিশ্বাস ও মানসিক শক্তি বাড়ে
- ধর্মীয় চেতনা ও মনঃসংযোগ বৃদ্ধি পায়
- দুর্ঘটনা বা অপঘাত থেকে সুরক্ষা মেলে
- অলৌকিক ভাবে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে
কেন শনিদেবকে ভয় নয়, ভক্তি করুন?
অনেকেই ভুলভাবে মনে করেন শনি মানেই কষ্ট। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, শনি আমাদের জীবনের ভুলের জন্য শিক্ষা দেন। তিনি আমাদের আত্মশুদ্ধির পথ দেখান। শনি চালীসা সেই সংযোগ তৈরি করে ভক্ত ও দেবতার মধ্যে।
শনি চালীসা পাঠ করতে চান?
কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি—এক সময় ছিল যখন জীবন একেবারে দিশাহীন মনে হতো। অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত ছিলাম, সঙ্গে ছিল প্রচণ্ড মানসিক চাপ। তখন এক আস্থাভাজন গুরুজনের পরামর্শে প্রতি শনিবার শনি চালীসা পাঠ শুরু করি। প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মনে শান্তি অনুভব হতে থাকে। নিয়মিত পাঠ চালিয়ে যাওয়ার ফলে তিন মাসের মধ্যে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন আসে—কাজে মনোযোগ বাড়ে, সিদ্ধান্তে দৃঢ়তা আসে, এমনকি পারিবারিক সম্পর্কেও ইতিবাচকতা ফিরে আসে।
এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি উপলব্ধি করেছি, শনি চালীসা কেবল ধর্মীয় স্তোত্র নয়—এটি এক গভীর মানসিক বল এবং জীবনের প্রতি নতুন আশার উৎস।
উপসংহার
জীবনের বাধা-বিপত্তি, কর্মে বিঘ্ন, মানসিক চাপ—এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে শনি চালীসা এক অলৌকিক আশ্রয়। এটি শুধুমাত্র একটি শাস্ত্রীয় স্তোত্র নয়, বরং বাস্তব জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত এক আত্মিক অভিজ্ঞতা।
জীবনের কঠিন সময়ে যখন কেউ ভগবানের স্মরণে অবিচল থাকে, তখনই তার জীবনে আসে আলো। শনি চালীসা পাঠ সেই আলোকে আহ্বান করার এক নির্ভরযোগ্য পথ।
চলুন আজ থেকেই শুরু করি — প্রতি শনিবার একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে, শ্রদ্ধাভরে পাঠ করি শনি চালীসা।
ভগবান শনিদেবের আশীর্বাদে আপনার জীবনে আসুক শান্তি, সাফল্য ও সমৃদ্ধি।
“শুভ শনিবার ” হয়ে উঠুক আপনার জীবনের প্রতিটি দিন শুভ, শান্ত ও সৌভাগ্যময়।
ভক্তিভাব ও ঈশ্বরচিন্তা বৃদ্ধির জন্য আমাদের অন্যান্য আধ্যাত্মিক লেখাগুলি পড়ুন।
- *শ্রী হনুমান চালিশা লিরিক্স বাংলা শক্তি এবং সাহস এর পথ।
- *হনুমান চালিশা অর্থসহ বাংলায় – মানসিক শান্তির নিশ্চিত উপায়।
FAQ (প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন)
প্রশ্ন : শনি চালীসা কখন পড়া শ্রেয়?
উত্তর: শনিবার সূর্যোদয়ের পর অথবা সন্ধ্যায় পড়া শ্রেয়। তবে প্রতিদিন সকালে স্নান করে পড়লে ভালো ফল মেলে।
প্রশ্ন : শনি চালীসা কি মহিলারা পাঠ করতে পারেন?
উত্তর: অবশ্যই পারেন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যেকোনো ভক্তই এই পাঠ পাঠ করতে পারেন। এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত।
প্রশ্ন : শনি চালীসা কি শনির দোষ কাটায়?
উত্তর: হ্যাঁ, নিয়মিত শনিদেবের স্তোত্র বা চালিশার পাঠ করলে শনিদেবের কৃপা লাভ হয় এবং জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আসে।