শ্রীমতী রাধাষ্টমী ব্রত কথা: রাধার জন্ম কাহিনী সূর্যদেবের বর প্রার্থনা

শ্রীমতী রাধাষ্টমী ব্রত কথা

রাধাষ্টমী ব্রত কথা:ঋষি শৌনক মহামতি সুতকে জিজ্ঞাসা করলেন:
“হে সুত! অন্যান্য দেবতাদের উপাসনার চেয়ে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনাই শ্রেষ্ঠ বলে জানি। আরও শুনেছি, তাহার থেকে শ্রীমতী রাধার আরাধনা অধিকতর পুণ্যপ্রদ ও শ্রেষ্ঠ। অতএব, শ্রীরাধার অর্চনা বিষয়ে কোনও ব্রতাদির কথা বলুন।”

সূত বললেন:
“হে ঋষিগণ! আমি একটি গোপনীয় ব্রতের কথা বলছি শুনুন। একদিন দেবর্ষি নারদ শ্রীকৃষ্ণের নিকটে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন—’ভগবন্! আপনার শ্রীমুখে অনেক ব্রতের কথা শুনেছি, এখন শ্রীমতী রাধিকার জন্মদিনের ব্রত শুনতে ইচ্ছা করি।’

শ্রীকৃষ্ণ বললেন—’দেবর্ষি! তুমি আমার পরম ভক্ত। সেজন্য তোমার কাছে বলছি, শ্রবণ কর। কোনো এক সময় সূর্যদেব ত্রিলোক ভ্রমণ করতে করতে নানাপ্রকার ঐশ্বর্য দেখে মনে মনে তপস্যার সংকল্প করে, মন্দর পর্বতের গুহায় কঠোর তপস্যা আরম্ভ করলেন। এইরূপে দীর্ঘদিন গত হলো। সূর্যের কঠোর তপস্যা আর পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় দেবতারা ভীত হলেন। ইন্দ্র দেবগণসহ আমার কাছে এসে সব কথা বলতে, আমি বললাম, দেবগণ, সূর্য থেকে তোমাদের কোনো ভয় নাই। তোমরা নিজ নিজ স্থানে যাও। আমি সূর্যদেবকে তপস্যা থেকে ক্ষান্ত করবো।

রাধাষ্টমী ব্রত কথা এর গোপনীয়

সূর্যদেবের বর প্রার্থনা:
এরপর আমি সূর্যের কাছে গেলাম। সূর্য আমাকে দেখে খুব আনন্দিত হলেন। তিনি বললেন—’হে শ্রীহরি! আপনার দর্শন পেয়ে আমার জন্ম ও তপস্যা সার্থক হলো। যিনি সৃষ্টি, স্থিতি, সংহার কর্তা, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর যাঁকে সব সময় চিন্তা করেন, তাঁকে দর্শন করে আমি ধন্য হলাম।’

আমি সন্তুষ্ট হয়ে সূর্যকে বললাম—’হে দিবাকর। তুমি তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করেছ। এখন বর প্রার্থনা কর। তুমি আমার পরম ভক্ত, সেজন্যই তোমাকে দর্শন দিলাম।’

এই কথা শুনে সূর্য বললেন—’আমাকে একটি গুণবতী কন্যার বর দিন। আপনি চিরদিন সেই কন্যাটির বশীভূত থাকবেন। এছাড়া আমার আর কোনো ইচ্ছা নাই।’

আমি তথাস্তু বলে তাকে বললাম—’এই ত্রিলোকে আমি একমাত্র শ্রীরাধিকারই বশীভূত। শ্রীমতী রাধা এবং আমাতে কোনো প্রভেদ নাই। আমি পৃথিবীর ভার লাঘবের জন্য বৃন্দাবনে নন্দালয়ে অবতীর্ণ হবো। তুমিও সেখানে বৃষভানু নামে রাজা হয়ে জন্মগ্রহণ করবে। শ্রীমতী রাধা তোমার কন্যারূপে অবতীর্ণ হবে।’


শ্রীমতী রাধার জন্ম ও পূজা:

রাধাষ্টমী ব্রত কথা:তারপর শ্রীহরি মথুরায় জন্মগ্রহণ করে নন্দালয়ে এলেন। সূর্যদেব বৈশ্যকুলে জন্মগ্রহণ করে বৃষভানু রাজা হলেন। গোপকন্যা কীর্তিদার সঙ্গে তার বিবাহ হলো। যথাকালে ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষে অষ্টমী তিথিতে বিশাখা নক্ষত্রে কীর্তিদার গর্ভে শ্রীমতী রাধিকা জন্মগ্রহণ করলেন। গোপ-গোপীরা আনন্দোৎসবে মেতে উঠলো। আমার মায়ায় মুগ্ধ হয়ে রাধিকা আমাকেই পতিত্বে বরণ করতে ইচ্ছা করলেন।

যথাকালে আয়ান ঘোষের সঙ্গে শ্রীরাধার বিবাহ হলো বটে, কিন্তু আমাকে পরম পুরুষজ্ঞানে আমার সঙ্গে বিহার করতে লাগলেন। শ্রীমতী রাধার এই জন্মদিনে গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য ও বসন-ভূষণ দ্বারা শ্রীমতী রাধার পূজা করে, নানা প্রকার মহোৎসব, ক্রীড়া কৌতুকাদি করতে হয়। রাধার সখীবৃন্দ, গোপিকাবৃন্দ, কীর্তিদা, বৃষভানু, প্রভৃতিরও পূজা করতে হয়।


শ্রীমতী রাধার চরণে ভক্তির মাহাত্ম্য:

শ্রীমতি রাধা রানীর চরনে আরাধনা পরম শান্তি ও ভক্তির উৎস। শাস্ত্রে বলা হয়েছে, যিনি শ্রীমতী রাধা রানীর আরাধনা করেন, তিনি শ্রীকৃষ্ণের কৃপা স্বাভাবিকভাবেই লাভ করেন। কারণ রাধা এবং কৃষ্ণ অভিন্ন; রাধার আরাধনা কৃষ্ণের আরাধনার চেয়েও মহত্তর বলে গণ্য হয়। রাধাষ্টমীর ব্রত পালনে, ভক্তের হৃদয়ে যে শুদ্ধ ভক্তির জন্ম হয়, তা জীবনের সমস্ত বাধা-বিঘ্ন দূর করে এবং পরমসুখের পথকে প্রসারিত করে। এই ব্রতে অংশগ্রহণকারী ভক্তরা গন্ধ, পুষ্প, নৈবেদ্য, এবং কীর্তনের দ্বারা শ্রীমতী রাধা রানীর আরাধনা করে, যার কারণে তাদের জীবনে পরম শান্তি ও কল্যাণের পথ প্রশস্ত হয়।


রাধা-কৃষ্ণের পূজায় একাগ্রতা

শ্রীমতী রাধা শুধু শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তমা নয়, তিনি ভক্তির প্রতীক। তাঁর প্রতি নিবেদিত মন ও ব্রত পালনের দ্বারা কৃষ্ণভক্তি পূর্ণতা লাভ করে। শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, “যে ব্যক্তি একবার শ্রীমতী রাধার নাম উচ্চারণ করে, তিনি সহস্র তপস্যার ফল অর্জন করেন।” তাই, রাধাষ্টমী ব্রত শুধু একটি পার্থিব আচার নয়, এটি ভক্ত ও ভগবানের একাত্মতার সেতু। এই ব্রতের ফলেই জীবনে প্রকৃত আনন্দ ও পরম মুক্তি লাভ হয়।


শ্রীমতী রাধাষ্টমী ব্রত কথা সমাপ্তি

এই ব্রতের অনুষ্ঠানে সর্বদুঃখ দূর হয় ও পরম শান্তিলাভ হয়। ধনৈশ্বর্যে গৃহ পূর্ণ হয় এবং সর্বস্থানে বিজয় লাভ হয়। ভক্তের কাছে এই ব্রতের কথা বললে সমস্ত অমঙ্গল দূর হয়, কিন্তু ভণ্ড, পাষণ্ড, ভক্তিহীন নাস্তিকের কাছে প্রকাশ করলে অমঙ্গল হয়। শ্রীকৃষ্ণের কাছে এই কথা শুনে নারদ মর্ত্যে এই ব্রত প্রচার করলেন আর নিজেও ব্রতপালন করলেন।

১.রাধাষ্টমী ব্রত মাহাত্ম্য ও নিয়ম পালন বিধি।

২.সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার নিয়ম।

Share Please:
অস্বীকৃতি

এই লেখা ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক তথ্য সরবরাহের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এতে বর্ণিত পুজা পদ্ধতি, মন্ত্র এবং অন্যান্য তথ্য প্রাচীন শাস্ত্র, লোকাচার ও ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছে। পাঠকদের অনুরোধ করা হচ্ছে, নিজের বিশ্বাস ও সুবিধা অনুযায়ী পুজা পদ্ধতি গ্রহণ করুন। যেকোনো ধর্মীয় কাজ করার আগে যোগ্য পণ্ডিত বা বিদ্বান থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই লেখায় দেওয়া তথ্য ব্যবহারের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে ব্যবহারকারীর ওপর থাকবে।

Leave a Comment