আজ আমরা রাধাষ্টমী ব্রত মাহাত্ম্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। রাধাষ্টমী ব্রত পালনের অসীম মাহাত্ম্য এবং এর পালন বিধি শাস্ত্রসম্মতভাবে জানার জন্য এই আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি এবং রাধারানীর কৃপা লাভের জন্য এই ব্রত পালন অত্যন্ত শুভ এবং ফলপ্রসূ।
রাধাষ্টমী ব্রত মাহাত্ম্য
শাস্ত্রের বর্ণনা অনুযায়ী, যারা রাধাষ্টমী ব্রত মাহাত্ম্য পালন করেন, তারা অপরিসীম পূণ্য লাভ করেন। পদ্মপুরাণে এবং অন্যান্য শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে যে এই ব্রত পালনের ফলে এক লক্ষ একাদশী ব্রত পালনের ফল অর্জিত হয়। এছাড়াও, এক হাজার কন্যা দানের পুণ্য এবং পর্বত পরিমাণ স্বর্ণ দানের ফলও লাভ করা যায়। এই ব্রত পালনে ভক্তরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধারানীর অপার কৃপা লাভ করেন, এবং জীবনে আধ্যাত্মিক উন্নতি পথে অগ্রসর হন ।
রাধারানী ও শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্ক
শ্রীমতি রাধারানী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূর্ণ শক্তি, যিনি কৃষ্ণের লীলা ও সেবা পরিচালনার জন্য প্রকট হয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারানী অভিন্ন সত্ত্বা, কিন্তু মাধুর্যরসের আস্বাদনের জন্য তারা দুই দেহ ধারণ করেছিলেন। গোলক বৃন্দাবনের সৃষ্টির আদিলগ্নে, শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বাম অঙ্গ থেকে রাধারানীকে প্রকাশ করেছিলেন, যিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রেম ও আনন্দ আস্বাদনে নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন।
২০২৪ সালের রাধাষ্টমী ব্রত কবে
২০২৪ সালের রাধাষ্টমী ব্রত ১১ সেপ্টেম্বর, বুধবার, উদযাপিত হবে। ভাদ্র মাসের ২৫ তারিকে শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে এই ব্রত পালিত হবে। ভগবানের বিশেষ কৃপা লাভের জন্য সারা বিশ্বের প্রতিটি ভক্তকে এই ব্রত পালন করা অবশ্য কর্তব্য। শাস্ত্র অনুযায়ী, এই ব্রত পালন করলে শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধারানী ভক্তদের প্রতি বিশেষ প্রসন্ন হন।
রাধাষ্টমী ব্রত কথা সংকল্প মন্ত্র
রাধাষ্টমী ব্রতের সূচনা করার পূর্বে সংকল্প মন্ত্র পাঠের করে করবেন, যা ব্রতের সঠিকতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংকল্প মন্ত্রটি হলো:
“ওঁ শ্রীমতে রাধিকায়ৈ ইদং ব্রতং অহং করিষ্যে।
শ্রীকৃষ্ণপ্রিয়ায়ৈ তত্প্রিয়ার্থং চ রাধিকায়ৈ নমঃ।।”
রাধাষ্টমী ব্রত মন্ত্র পাঠকরে রাধারানীর প্রতি আপনার ব্রত পালন করার সংকল্প করবেন এবং রাধারানীর কৃপা ও আশীর্বাদ কামনা করবেন ।
রাধারানী প্রণাম মন্ত্র
রাধারানীর প্রতি প্রণাম জানাতে নিম্নলিখিত মন্ত্রটি পাঠ করবেন মন্ত্রটি হলো:
“তপ্তকাঞ্চন গৌরাঙ্গী রাধে বৃন্দাবনেশ্বরী।
বৃষভানু সুতে দেবী প্রণমামি হরিপ্রিয়ে॥”
এই মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে আপনি রাধারানীর প্রতি আপনার প্রণাম নিবেদন করবেন এবং রাধারানী কৃপা প্রার্থনা করবেন।
রাধাষ্টমী ব্রত এর বিশেষ ফলাফল
১. এক লক্ষ একাদশী ব্রতের সমান ফল: রাধাষ্টমী ব্রত পালনে এক লক্ষ একাদশী ব্রতের ফল পাওয়া যায়।
২. এক হাজার কন্যাদানের সমান পূণ্য: এই ব্রত পালনের ফলে আপনি এক হাজার কন্যা দানের সমান পূণ্য অর্জন করতে পারেন।
৩. পর্বত পরিমাণ স্বর্ণ দানের ফল: এই ব্রত পালনে পর্বত পরিমাণ স্বর্ণ দানের মতো বিশাল পূণ্য লাভ করা যায়।
রাধাষ্টমী ব্রত পালন বিধি
রাধাষ্টমী ব্রত পালন অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে করতে হয়, যাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধারানী ভক্তদের প্রতি প্রসন্ন হন। নিচে এই ব্রতের পালন বিধি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
- ১. উপবাস: রাধাষ্টমী ব্রতে উপবাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেউ কেউ দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপবাস পালন করেন, আবার কেউ সারা দিন উপবাস করে পরদিন সূর্যোদয়ের পর অন্ন প্রসাদ গ্রহণ করেন। উপবাস পালন করলে মন ও শরীর উভয়ই পবিত্র থাকে, যা রাধারানীর প্রতি ভক্তির নিবেদন প্রকাশ করে।
- ২. পূজা-অর্চনা: সকালে স্নান সেরে পবিত্র ভাবে রাধারানী ও শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি বা চিত্রের সামনে পূজা-অর্চনা করা হয়। পূজা শুরু হয় তিলক, ফুল, ধূপ ও দীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে। এরপর ভক্তরা বিভিন্ন মন্ত্র পাঠ করে রাধারানী ও শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তাদের ভক্তি নিবেদন করেন।
- ৩. অভিষেক: মধ্যাহ্নকালে রাধারানীর অভিষেক করা হয়। অভিষেকের জন্য গঙ্গা জল, দুধ, মধু, ঘি, ও ফুলের নির্যাস ব্যবহার করা হয়। এটি রাধারানীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে করা হয়।
- ৪.ভোগ নিবেদন: রাধারানীর পছন্দের ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগ হিসেবে মিষ্টি, ফল, পায়েস, মালপোয়া, ইত্যাদি নিবেদন করা হয়। ভোগ নিবেদন শেষে সেই প্রসাদ ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
- ৫. কথা শ্রবণ:রাধারানীর লীলা ও মহিমা সম্পর্কিত কথা শ্রবণ করা অত্যন্ত ফলপ্রসূত। পদ্মপুরাণ, ব্ৰহ্মাণ্ড পুরাণ ও অন্যান্য পুরাণে বর্ণিত রাধারানীর মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবণ করা কর্তব্য। এর মাধ্যমে ভক্তদের আত্মিক উন্নতি হয়।
- ৬. অন্ন প্রসাদ গ্রহণ:দুপুর ১২ টার পরে রাধারানীর ভোগ নিবেদন শেষে ভক্তরা অন্ন প্রসাদ গ্রহণ করতে পারেন। যারা পূর্ণ দিবস উপবাস পালন করেন, তারা পরদিন সূর্যোদয়ের পর প্রসাদ গ্রহণ করেন।
রাধাষ্টমী ব্রতের বিশেষ উপকারিতা
রাধাষ্টমী ব্রত পালনে ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারানীর অপার কৃপা লাভ করেন। পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে, যারা রাধাষ্টমী ব্রত পালন করেন, তারা বৈকুণ্ঠ ধামে বাস করার সৌভাগ্য লাভ করেন। এছাড়াও, রাধারানী এবং শ্রীকৃষ্ণের ভক্তির মাধ্যমে ভক্তরা তাদের জীবনে অসীম আনন্দ ও শান্তি লাভ করেন।
রাধাষ্টমী ব্রত মাহাত্ম্য সম্পর্কে কিছু কথা
রাধাষ্টমী ব্রত মাহাত্ম্য পালনের মাধ্যমে ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারানীর অনন্ত কৃপা লাভ করতে পারেন। তাই এই পবিত্র ব্রত পালন করার সংকল্প নিন এবং আপনার পরিবার ও বন্ধুদেরও এই ব্রত পালনে উৎসাহিত করুন। ভক্তির সহকারে রাধারানীর পূজা-অর্চনা ও ব্রত পালন করলে আপনার জীবন ভগবত কৃপায় পূর্ণ হয়ে উঠবে।
আপনারা সকলেই রাধাষ্টমী ব্রত পালনে অংশ নিন এবং রাধারানীর কৃপা লাভ করে আপনার জীবনকে পবিত্র করুন।
আমাদের আরো পোস্ট দেখার জন্য নিচে ক্লিক করুন।
১.অঙ্গে মাখো মাখো রে এই না ব্রজের ধুলা লিরিক্স।
২.সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার নিয়ম।
FAQs রাধাষ্টমী ব্রত মাহাত্ম্য সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্নোত্তর নিচে দেওয়া হলো:
প্রশ্ন:-2024 সালের রাধাষ্টমী ব্রত কবে ?
উত্তর:-রাধাষ্টমী ব্রত ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালন করা হয়। ২০২৪ সালে এটি ১১ সেপ্টেম্বর উদযাপিত হবে।
প্রশ্ন:-রাধাষ্টমী ব্রত পালনে কী ধরনের পূজা করা হয়?
উত্তর:-রাধাষ্টমী ব্রতে ভক্তরা উপবাস পালন করেন, রাধারানী ও শ্রীকৃষ্ণের পূজা করেন, মন্ত্র পাঠ করেন, এবং ভোগ নিবেদন করেন। মধ্যাহ্নকালে রাধারানীর অভিষেক এবং রাধারানীর লীলা ও মহিমা সম্পর্কিত কথা শ্রবণ করা হয়।
প্রশ্ন:-রাধাষ্টমী ব্রত পালনে কী কী ফল লাভ করা যায়?
উত্তর:-রাধাষ্টমী ব্রত পালনে এক লক্ষ একাদশী ব্রত পালনের ফল, এক হাজার কন্যা দানের সমান পূণ্য এবং পর্বত পরিমাণ স্বর্ণ দানের ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও, ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধারানীর কৃপা লাভ করেন।
প্রশ্ন:-রাধাষ্টমী ব্রত পালনে কি সকলেই অংশ নিতে পারেন?
উত্তর:-হ্যাঁ, রাধাষ্টমী ব্রত পালনে সকল ভক্তই অংশ নিতে পারেন। ভক্তির সহকারে এই ব্রত পালন করলে যে কেউ শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারানীর কৃপা লাভ করতে পারেন।
প্রশ্ন:-রাধাষ্টমী ব্রত পালন করলে কী কী উপকারিতা হয়?
উত্তর:-রাধাষ্টমী ব্রত পালনে ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারানীর অপার কৃপা লাভ করেন, যা তাদের আধ্যাত্মিক জীবনে মহৎ প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, তারা বৈকুণ্ঠ ধামে বাস করার সৌভাগ্য লাভ করেন।
প্রশ্ন:-রাধাষ্টমী ব্রত পালন করতে গেলে কী কী নিয়ম মেনে চলতে হয়?
উত্তর:-রাধাষ্টমী ব্রত পালন করতে গেলে উপবাস পালন, পূজা-অর্চনা, অভিষেক, ভোগ নিবেদন, রাধারানীর লীলার কথা শ্রবণ এবং পরের দিন সূর্যোদয়ের পরে অন্ন প্রসাদ গ্রহণের নিয়ম মেনে চলতে হয়।