নির্জলা একাদশী পালনের সঠিক নিয়ম ও গুরুত্ব
নির্জলা একাদশী পালনের সঠিক নিয়ম: নির্জলা একাদশী হলো হিন্দু সনাতন ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মুক্তি প্রদানকারি উপবাস, এই একাদশীকে হিন্দু ধর্মের সব ব্রতের মধ্যে সর্বোত্তম ব্রত বলে গণ্য করা হয়, এই একাদশী জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষের দিন পালন করা হয়।”নির্জলা” শব্দের অর্থ হলো “জলহীন,” অর্থাৎ এই দিনটি ভক্তরা সম্পূর্ণরূপে আহার ও জল পরিত্যাগ করে উপবাসটি পালন করেন।
ভগবান বিষ্ণুর প্রতি গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে নির্জলা একাদশী পালন করা হয়। এই উপবাসের মাধ্যমে ভক্তরা শারীরিক ও মানসিক শুদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি পাপ থেকে মুক্তি ও ঈশ্বরের কৃপা লাভের জন্য এই একাদশী উপবাস করেন। হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে নির্জলা একাদশীর মহিমা সম্পর্কে বিস্তার ভাবে বর্ণিত আছে, সেখানে বলা হয়েছে যে এই একাদশী উপবাস বিধি সম্মত ও নির্ভুল ভাবে করলে, সারা বছরের, সমস্ত একাদশীর সমান ফল প্রাপ্ত করা যায়।
তাই ভক্তরা প্রার্থনা, জপ, ও কীর্তনের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করেন। হে ভক্ত তাই আসুন শ্রীহরির প্রিয় ও ভক্তির জন্মদাতা এবং সর্ব পাপ হরন করি, এই নির্জলা একাদশী ব্রত পালনের সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি জেনে অধাতিক পথে অগ্রসর হই।
নির্জলা একাদশী ব্রত পালনের পূর্ব প্রস্তুতি অর্থাৎ দশমীর
পূর্ব প্রস্তুতি:নির্জলা একাদশীর পালনের আগের দিন অর্থাৎ দশমীর দিনে সমর্থ পক্ষে একাহার অর্থাৎ একবার খাবার খাবেন অবশ্যই যেন সাত্ত্বিক খাবার (নিরামিস) হয়, তামসিক ও রাজসিক খাবার ভুল করেও খাবেন না, রাত৯ টা থেকে ১২টার মধ্যে ভোজন সম্পন্ন করে নিলে সব থেকে ভালো। ঘুমানোর আগে খাবারের বাসন পত্র ধুয়ে রাখবেন, আর দাঁত ব্রাঁশ করে দাঁত ও মুখ গহব্বরে লেগে থাকা সব খাবার ভালো করে অবশ্যই পরিষ্কার করে নেবেন।
নির্জলা একাদশী ব্রত পালনের দিন করনীয় ও নিয়ম
সকাল স্নান:নির্জলা একাদশীর দিন ভোরে সূর্যোদয়ের ১ ঘন্টা ৩৬ মিনিটের মধ্যে অর্থাৎ ব্রাম্ভমূর্থে শয্যা ত্যাগ করে, স্নান করে পরিষ্কার ধৌত পোশাক পরিধান করবেন। এর পর আপনার বাড়ির ঠাকুর মন্দির পরিস্কার করে,পূজা অর্চনা করবেন, এবং শ্রী হরির কাছে সংকল্প করবেন।
সংকল্প: ঈশ্বরের পাদ পদে প্রার্থনা করবেন যাতে এই মঙ্গলময় পবিত্র নির্জলা একাদশীর ব্রত বিধি সম্মত ভাবে পালন করতে পারেন। এর সঙ্গে একাদশী সংকল্প মন্ত্রটি অবশ্যই বলবেন, (একাদশ্যাং নিরাহারঃ স্থিত্বা ওহম্ অপরেহহনি। ভোক্ষামি পুণ্ডরীকাক্ষ শরনং মে ভবাচ্যুত।।) এর অর্থ হলো হে পুণ্ডরিকাক্ষ, হে অচ্যুত,আমি একাদশীতে উপবাস পূর্বক পরদিন আহার করব। আপনি মদীয় শরণস্থান হোন। এবং নিজেও ঈশ্বরের কাছে প্রতিজ্ঞা করুন, যে আমি এই নির্জলা একাদশীর ব্রত বিধি সম্মত ভাবে পালন করবো।
উপবাস পালন:একাদশীর মূল নিয়ম শুধুমাত্র উপবাস রাখা নয়, শ্রী হরির প্রতি শরণাগত,শ্রদ্ধা ও প্রেম পরায়ণ হওয়া। উপবাস শুরু করুন সূর্যোদয়ের আগে থেকে অর্থাৎ একাদশীর তিথি পড়ার আগে থেকে, এই দিন জলসহ সব ধরনের খাদ্য ও পানীয় খাবা তো দুরের কথা মনে মনেও খাবার কথা চিন্তাও করবেন না। সারাদিন ভগবানের নাম স্মরণ করুন এবং ভজন-সংকীর্তন করুন, ধর্ম গ্রন্থ গীতা ভাগবত পড়ুন এবং মনোযোগ সহকারে ঈশ্বরের নাম “হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র” জপ করুন।
পূজা ও আরাধনা:সন্ধ্যা বেলায় শ্রী হরির পূজা অর্চনা করুন। একাদশীর ব্রতকথা, একাদশীর মহত্ত্ব পাঠকরুন এবং বাড়ির অন্য সদর্শদের শোনার জন্য উৎসাহ করুন। আর নাম সংকীর্তন কীর্তন করুন এবং “হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র” জপ এর মাধ্যমে সারা রাত্রি অতিবাহিত করুন।
একাদশী ব্রত পারনের নিয়ম
পরের দিন স্নান করে সূচিশুদ্ধ হয়ে শ্রী হরির পূজা অর্চনা করবেন, এবং দ্বাদশীতে একাদশী পারণের সময় একাদশী পারণের মন্ত্র উচ্চারণ করে (অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব। প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টি প্রদো ভব ।।) এর অর্থ হলো হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি । এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানদৃষ্টি তথা জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন। বলে ভগবান বিষ্ণুর চরণামৃত পান করে নির্জলা একাদশী উপবাস ভঙ্গ করবেন। আর অবশ্যই পারণের সময়ের মধ্যে পারণ করবেন, সময়মত পারণ করলেই তবে একাদশী ব্রত সম্পূর্ণ হয়। সব একাদশী ও মহাদ্বাদশী পারনের সময় তালিকা ইত্যাদি পঞ্জিকা, বৈষ্ণব পঞ্জিকাতে পেয়ে যাবেন।
যদি আপনার সামর্থে কুলায় তাহলে একাদশী ব্রত পূর্ণ হওয়ার পর ব্রাহ্মণ ভোজন করবেন এবং দক্ষিণা দেবেন এবং গরীব ও অভাবগ্রস্তদের মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্র দান করতে পারেন। এই নিয়মগুলি মেনে নির্জলা একাদশী ব্রত পালন করলে পাপমুক্তি ও পূণ্য অর্জন হয় বলে বিশ্বাস করা যায়। এবং একাদশী উপবাস সফলভাবে পালন করা যায়।
এই হলো নির্জলা একাদশী ব্রত পালনের সঠিক নিয়ম। “হরে কৃষ্ণ”
আমাদের অন্য পোস্ট গুলি পড়ুন।
১.সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার নিয়ম।
২.বাড়িতে শিব পূজার নিয়ম ও সঠিক পদ্ধতি।
নির্জলা একাদশী পালনের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন এবং উত্তর।
প্রশ্ন:-নির্জলা একাদশীর নিয়ম কি?
উত্তর:-নির্জলা একাদশীর নিয়ম প্রাতস্নান,পূজা অর্চনা,সংকল্প,নাম সংকীর্তন,ব্রত কথা,নাম জপ,রাত্রি জাগরণ,পরের দিন একাদশী পারণ এই হলো একাদশী নিয়ম।
প্রশ্ন:-নির্জলা একাদশী কিভাবে পালন করা হয়?
উত্তর:-নির্জলা একাদশীর দিন ভোরে শয্যা ত্যাগ করে, স্নান করে সূচিশুদ্ধ হয়ে, শ্রী হরির পূজা অর্চনা করে, শ্রী হরির কাছে সংকল্প করে,পূজা ও আরাধনা করে,সারা দিন নাম সংকীর্তন করে,সন্ধ্যা বেলায় ভগবান বিষ্ণুর পূজা অর্চনা করে,ব্রত কথা,নাম জপ এর মাধমে রাত্রি জাগরণ করে,পরের দিন একাদশী পারণ করে একাদশী পালন করা হয়।
প্রশ্ন:-নির্জলা একাদশীর পর কি খাওয়া উচিত?
উত্তর:-নির্জলা একাদশীর পর ভগবান বিষ্ণুর চরণামৃত পান করা,এবং মহাপ্রসাদ খাওয়া উচিত ।
প্রশ্ন:-নির্জলা একাদশীর উপবাস কিভাবে খুলতে হয়?
উত্তর:-ভগবান বিষ্ণুর চরণামৃত পান করে নির্জলা একাদশী উপবাস খুলতে হয় ।