
তুলসী দেবীকে হিন্দু ধর্মে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তমা হিসেবে পূজিত করা হয়। “নমো নম তুলসী কৃষ্ণ প্রিয়সী” একটি ভক্তিমূলক স্তোত্র, যা তুলসী দেবীর মাহাত্ম্য ও তার আশীর্বাদের গুরুত্ব বর্ণনা করে। এই স্তোত্র পাঠ করলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কৃপা লাভ হয় এবং মন পবিত্র হয়। তুলসী দেবীকে ভক্তরা শুদ্ধতা, ভক্তি ও সৎকর্মের প্রতীক হিসেবে দেখে থাকেন। তাই প্রতিদিন ভক্তিভরে তুলসী স্তোত্র উচ্চারণ করলে সংসার জীবনের বাধা দূর হয় এবং ঈশ্বরের চরণে নিবেদিত হওয়ার সুযোগ লাভ করা যায়।
“নম নম তুলসী কৃষ্ণ প্রেয়সী”—এই শ্লোকটি হিন্দু ধর্মের ভক্তিমূলক সংস্কৃতিতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তুলসীকে শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তমা বলে মনে করা হয় এবং তাঁর পুজো ভক্তের আধ্যাত্মিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তুলসী কেবলমাত্র একটি পবিত্র গাছ নয়, এটি ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা, এবং শুদ্ধতার প্রতীক।
দেবী তুলসীর মাহাত্ম্য
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী, তুলসী দেবী ভগবান বিষ্ণুর এক বিশেষ উপাস্য রূপ। স্কন্দপুরাণ, পদ্মপুরাণ, এবং অন্যান্য শাস্ত্রে তুলসীর মাহাত্ম্যের কথা বলা হয়েছে। তুলসীকে ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্তা এবং লক্ষ্মীর এক রূপ হিসেবে গণ্য করা হয়। তুলসী পাতাকে ছাড়া বিষ্ণু এবং কৃষ্ণের পূজা অসম্পূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
তুলসী দেবীর আরতি নমো নম তুলসী কৃষ্ণ প্রিয়সী শ্লোকের ব্যাখ্যা
শ্লোক:
নমো নমঃ তুলসী কৃষ্ণপ্রেয়সী নমো নমঃ
তুলসী কৃষ্ণপ্রেয়সী নমো নমঃ
রাধাকৃষ্ণ-সেবা পাব এই অভিলাষী
রাধাকৃষ্ণ-সেবা পাব এই অভিলাষী
তুলসী কৃষ্ণ প্রেয়সী নমো নমঃ
যে তোমার শরণ লয়,তার বাঞ্ছা পূর্ণ হয়
যে তোমার শরণ লয়,তার বাঞ্ছা পূর্ণ হয়
কৃপা করি কর তারে বৃন্দাবনবাসী
কৃপা করি কর তারে বৃন্দাবনবাসী
তুলসী কৃষ্ণ প্রেয়সী নমো নমঃ
মোর এই অভিলাষ,বিলাস-কুঞ্জে দিও বাস
মোর এই অভিলাষ,বিলাস-কুঞ্জে দিও বাস
নয়নে হেরিব সদা যুগলরুপরাশি
নয়নে হেরিব সদা যুগলরুপরাশি
তুলসী কৃষ্ণ প্রেয়সী নমো নমঃ
এই নিবেদন ধর,সখীর অনুগত কর
এই নিবেদন ধর,সখীর অনুগত কর
সেবা অধিকার দিয়ে কর নিজ দাসী
সেবা অধিকার দিয়ে কর নিজ দাসী
নমো নমঃ তুলসী কৃষ্ণ প্রেয়সী নমো নমঃ
দীন কৃষ্ণদাসে কয়,এই যেন মোর হয়
দীন কৃষ্ণদাসে কয়,এই যেন মোর হয়
শ্রী রাধাগোবিন্দ-প্রেমে সদা যেন ভাসি
শ্রী রাধাগোবিন্দ-প্রেমে সদা যেন ভাসি
শ্রী রাধাগোবিন্দ-প্রেমে সদা যেন ভাসি
শ্রী রাধাগোবিন্দ-প্রেমে সদা যেন ভাসি
নমো নমঃ তুলসী কৃষ্ণ প্রেয়সী নমো নমঃ
“নমো নমঃ তুলসী কৃষ্ণ প্রেয়সী নমো নমঃ।রাধা-কৃষ্ণ সেবাপ্রদে দেবী নমো নমঃ।।”
এই শ্লোকের মাধ্যমে তুলসীকে প্রণাম জানানো হয় এবং তাঁকে রাধা-কৃষ্ণের সেবার অধিকারিণী হিসেবে সম্মান করা হয়। তুলসীর মাধ্যমে ভক্তরা সরাসরি কৃষ্ণের আশীর্বাদ লাভ করতে পারেন।
দ্রষ্টব্য: এই রচনাটি ঐতিহ্যবাহী বৈষ্ণব ভক্তির অনুপ্রেরণায় স্বরচিত একটি সংস্করণ।
তুলসী পুজোর মাহাত্ম্য
প্রতিদিন তুলসীর পুজো করলে পরিবারের মধ্যে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং শুভ শক্তির বিকাশ ঘটে। তুলসী পাতা ব্যবহার করা হয় প্রসাদ তৈরিতে এবং এটি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও অত্যন্ত উপকারী। তুলসী পুজোর বিশেষ দিনগুলোর মধ্যে রয়েছে—কার্তিক মাসের তুলসী বিবাহ, একাদশী, এবং শ্রাবণ মাসের বিশেষ দিনগুলো।
উপসংহার
“নম নম তুলসী কৃষ্ণ প্রেয়সী” শ্লোকটি কেবলমাত্র একটি মন্ত্র নয়, এটি ভক্তের হৃদয়ের অন্তর্নিহিত অনুভূতির প্রকাশ। তুলসীর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রদর্শন করলে জীবনে আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটে এবং শ্রীকৃষ্ণের কৃপা লাভ করা যায়।
তাই, প্রতিদিন তুলসী সেবন ও পুজো করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও পবিত্র ও কল্যাণময় করে তোলা উচিত।