
একাদশী ব্রত কি
একাদশী উপবাসের নিয়ম: হিন্দু সনাতন ধর্মে একাদশী ব্রত সর্বশ্রেষ্ঠ ও পবিত্রতম ব্রতগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি সমস্ত শুভ কর্মের শিরোমণি এবং মোক্ষ প্রাপ্তির এক বিশেষ মার্গ। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, প্রতি মাসে দুইবার একাদশী তিথি উদযাপিত হয়—একবার শুক্লপক্ষে এবং আরেকবার কৃষ্ণপক্ষে।
যাঁরা শাস্ত্র অনুযায়ী নিষ্ঠা ও ভক্তির সাথে একাদশী উপবাস পালন করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে বৈকুণ্ঠ ধামে স্থান লাভ করেন। কারণ, একাদশী দেবী স্বয়ং শ্রীহরির অংশ থেকে উৎপন্ন, আর এই তিথিতে সকল প্রকার পাপ, অন্ন ও পঞ্চ রবিশস্যের মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করে। তাই একাদশীর দিন যদি কেউ অন্ন ও পঞ্চ রবিশস্য গ্রহণ করেন, তবে সেইসব পাপ তাদের দেহে প্রবেশ করে, যা আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে বিরাট বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
অতএব, আমাদের সকলের উচিত একাদশী ব্রত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা, ভগবান বিষ্ণুর কৃপা লাভের জন্য এই পবিত্র উপবাসে অটল থাকা এবং জীবনের সমস্ত পাপমোচন করে আধ্যাত্মিক অগ্রগতি সাধন করা। এখন আসুন, আমরা বিস্তারিত জানি একাদশী ব্রতের সঠিক নিয়ম ও বিধি।
একাদশী ব্রত পালনের সঠিকন তিথি নির্ণয়
শ্রী চৈতন্য চরিতামৃতে মধ্যলীলায় সনাতন গোস্বামী শিক্ষার অন্তর্গত, মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য একাদশী ব্রতের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন—
“একাদশী, জন্মাষ্টমী, বামনদ্বাদশী।
শ্রী রাম নবমী আর নৃসিংহ চতুর্দশী।।
এই সবে বিদ্যা ত্যাগ অবিদ্যাকরণ।
অকরণে দোষ, কৈলে ভক্তির লংভনা।।”
(শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত ২৪/৩৪১-৩৪২)
একাদশী উপবাসের তিথি নির্ণয়
একাদশী উপবাসের ক্ষেত্রে তিথির বিশুদ্ধতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শাস্ত্রমতে, একাদশীর সূর্যোদয়ের পূর্বে অরুণোদয় কাল (সূর্যোদয়ের এক ঘণ্টা ছত্রিশ মিনিট পূর্ব) যদি দশমী তিথি বিদ্যমান থাকে, তবে সেই একাদশী ব্রত গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। অন্যদিকে, একাদশীর শেষ ভাগে যদি দ্বাদশী তিথির সংযোগ ঘটে, তবে সেটি গ্রহণযোগ্য এবং শাস্ত্রসম্মত।
একাদশী ব্রত সম্পর্কিত আরও বিস্তারিত নিয়ম ও বিধান জানতে ‘শ্রী হরি ভক্তিবিলাস’ গ্রন্থের ১২-১৩ অধ্যায় অধ্যয়ন করা উচিত। এই শাস্ত্রানুসারে একাদশীর সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে ভক্তি ও ধর্মের পথ সুদৃঢ় হয়।
একাদশী ব্রত পালনের প্রস্তুতি: দশমী তিথিতে করণীয়
একাদশী ব্রত পালনের জন্য যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রতের সাফল্য ও শুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য, উপবাসের আগের দিন অর্থাৎ দশমী তিথিতে কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে চলা উচিত।
১.নিরামিষ আহার গ্রহণ
দশমী তিথির দিন সমর্থ পক্ষে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুধুমাত্র একাহার, নিরামিষ আহার গ্রহণ করা উচিত। এই দিনে কোনোভাবেই তামসিক বা আমিষজাত খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়। সন্ধ্যার মধ্যে বা সর্বোচ্চ রাত ১২টার আগে নিরামিষ অন্ন ভোজন সম্পন্ন করা বাঞ্ছনীয়। কারণ, একাদশীর দিনে শরীরে খাদ্যের কোনো অবশিষ্ট অংশ থাকা উচিত নয়, যা পরবর্তী উপবাসের পবিত্রতা নষ্ট করতে পারে।
২.দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করা
খাবার গ্রহণের পর ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করতে হবে এবং মুখগহ্বর সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করতে হবে। মুখের ভেতরে কোনো খাদ্যকণা বা অবশিষ্টাংশ যেন না থাকে, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এতে একাদশীর দিন উপবাস রাখার সময় শুদ্ধতা বজায় থাকবে এবং ব্রতের সুফল লাভ করা সম্ভব হবে।
৩.বাসন ধোয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
দশমীর দিন ব্যবহৃত সমস্ত থালা-বাসন ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখতে হবে। কোনোভাবেই একাদশীর দিনের জন্য এটো বাসন জমিয়ে রাখা উচিত নয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা শুধুমাত্র শারীরিক শুদ্ধতার জন্য নয়, বরং এটি মানসিক ও আধ্যাত্মিক শুদ্ধতার প্রতীক।
৪.দাম্পত্য সম্পর্ক ও সহবাস থেকে বিরত থাকা
শাস্ত্র অনুযায়ী, একাদশী ব্রতের আগের দিন, অর্থাৎ দশমী তিথিতে, দাম্পত্য সম্পর্ক ও সহবাস থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা উচিত। সহবাস করলে শরীর ও মন দুটোই অপরিষ্কার হয়ে যায়, যা একাদশী ব্রতের পবিত্রতা নষ্ট করে। ব্রতের মূল উদ্দেশ্য হলো ইন্দ্রিয় সংযম ও আত্মসংযমের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক শুদ্ধি অর্জন করা। তাই ব্রতের আগের দিন থেকেই সংযম পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একাদশীতে পালনীয় কিছু বিশেষ সতর্কতা
একাদশী ব্রত পালনের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি, যাতে ব্রতের পূর্ণতা বজায় থাকে। নিচে একাদশীর দিনে অনুসরণীয় কিছু নির্দেশিকা দেওয়া হলো—
- রক্তপাত এড়িয়ে চলুন:একাদশীতে সবজি বা ফল কাটার সময় সতর্ক থাকুন, যাতে কোনোভাবেই রক্তপাত না ঘটে। কারণ, একাদশীর দিনে রক্তক্ষরণ বর্জনীয়। যদি রক্তপাত হয়, তবে ব্রত সম্পূর্ণ হবে না।
- প্রসাধনী ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন: একাদশীর দিনে শরীর ও চুলে কোনো ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না। যেমন—তেল (শরীর ও মাথায়), সুগন্ধি বা পারফিউম, সাবান ও শ্যাম্পু ইত্যাদি।
- সকল ক্ষৌরকর্ম নিষিদ্ধ: একাদশীর দিনে কোনো ধরনের ক্ষৌরকর্ম করা উচিত নয়। যেমন— চুল, দাড়ি,গোঁফ এবং নখ কাটবেন না।
- সংযম বজায় রাখুন: ব্রতের শুদ্ধতা রক্ষাতে এইদিনে মিথ্যাভাসন, রাগ, হিংসা, কুটিলতা, পরনিন্দা,পরচর্চা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া স্ত্রী-সংসর্গ পরিহার করা উচিত।
এই নিয়মগুলো মেনে চললে একাদশী ব্রত আরও পবিত্র ও ফলপ্রসূ হবে।
একাদশী ব্রতর গুরুত্ব
একাদশী তিথি হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত পবিত্র ও শুভ দিন, যা “হরিবাসর” নামে পরিচিত। একাদশী উপবাস, ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা এবং আত্মশুদ্ধি এক বিশেষ দিন। শাস্ত্র মতে, দশমীযুক্ত একাদশী পালন বর্জনীয় এবং মহাদ্বাদশী উপস্থিত হলে একাদশীর পরিবর্তে দ্বাদশী পালন করতে হয়।
একাদশী ব্রতের মূল উদ্দেশ্য হলো শরীর ও মনকে সংযত রেখে আত্মশুদ্ধির পথে অগ্রসর হওয়া। পাঁচ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পাঁচ কর্মেন্দ্রিয় এবং মন—এই একাদশ ইন্দ্রিয়কে সংযত রেখে, নিষ্ঠা ও ভক্তির সাথে একাদশী পালন করে ভগবান বিষ্ণুর বিশেষ কৃপালাভ করা এবং জীবনের সকল পাপ মোচন ও আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং বাধাবিগ্ন দূর করা। এই দিনে নির্জলা উপবাস, ভজন-সঙ্গীত, রাত্রি জাগরণ এবং পরের দিন (দ্বাদশী) সঠিক সময়ে পারণ করা একাদশী ব্রতের মূল বিধান।
একাদশীতে উপবাসের প্রকারভেদ
একাদশীর দিনে উপবাস রাখা বাধ্যতামূলক। উপবাসের বিভিন্ন ধরন হয়— একাদশীতে মূলত চারপ্রকারের উপবাস প্রচলিত আছে যথা—নিরাহার, দুগ্ধাহার, ফলাহার ও অনুকল্প।
১. নিরাহার উপবাস: সম্পূর্ণ জল ও খাদ্য পরিহার করে উপবাস রাখা। নিরাহার— দুই প্রকারের নির্জলা ও সজলা। নির্জলা একাদশী শ্রেষ্ঠব্রত। নির্জলা ব্ৰত করলে জল ও পান করা যাবে না। সজলা ব্রতে সরবত, হাল্কা গরম জল ও গরমজলে লেবুর রস মিশ্রিত করে পান করা যেতে পার।
২. দুগ্ধাহার—এই শ্রেণীর উপবাসে দিনে একবার অথবা দুবার ক্রীম ছাড়া দুধ গ্রহণ যেতে পারে। দেশী গরুর দুধ সর্বোত্তম। মনুষ্যের স্বাস্থ্যও দীর্ঘায়ু প্রদান করতে, গোমাতার দুধের সমান কোন শ্রেষ্ঠ আহার নেই।
৩. ফলাহার: ফল গ্রহণ করা। ফলাহার—এতে শুধু ফল ও ফলের রস গ্রহণ করা যেতে পারে। উপবাসের জন্য আঙ্গুর, বেদানা ও পেপে হিতকারক কিন্তু আপেলের সংরক্ষিত পদ্ধতি খারাপ হওয়ার জন্য একাদশীতে খাওয়া উচিত নয়।
৪. অনুকল্প উপবাস: যারা কঠোর উপবাস পালন করতে অসমর্থ, তারা অল্প পরিমাণ জল, দুগ্ধ, ফল বা পঞ্চগব্য এছারাও একাদশীতে বর্জিত সবজি বাদে রন্ধন করে প্রভু কে নিবেদন করে প্রসাদ রূপে গ্রহণ করতে পারেন।
শাস্ত্রমতে, জল, ফল, দুধ, ঘৃত, ওষধ গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয় না। তবে সম্পূর্ণ শক্তিহীন অবস্থায় বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
একাদশীতে ব্রত পালনের পদ্ধতি ও মূল কার্যক্রম
একাদশীর দিন সকালবেলা সূর্য উদয়ের পূর্বে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করবেন। এবং এর পর আপনার বাড়ির ইষ্ট দেবতার সামনে গিয়ে একাদশী সংকল্প মন্ত্র পাঠ করবেন।
একাদশীতে শারীরিক ও মানসিকভাবে পবিত্রতা বজায় রাখা অত্যান্ত জরুরি। একাদশীতে নিরাহার একাদশীর ব্রত রেখে কোনো কিছু না খাওয়া কে নিরাহার বলে, যদি উহাতেও অসমর্থ হন তাহলে একাদশীর দিন কেবল পঞ্চ রবিশষ্য বর্জন করবেন, একাদশীতে ফল মূলাদি অনুকল্প গ্রহণের বিধান রয়েছে। একাদশীতে যে চার প্রকারের একাদশীর উপবাস রয়েছে ওর মধ্যে থেকে যে কোনো এক প্রকারের উপবাস করতে পারেন।
সংকল্প মন্ত্র:—
একাদশ্যাং নিরাহারঃ স্থিত্বা ওহম অপরেহহনি
ভক্ষামি পুণ্ডরীকাক্ষ শরনং মে ভাবাচ্যুত।
একাদশী ব্রতের প্রধান কার্যক্রম এবং পূজা ও প্রার্থনা রাত্রি জাগরণ পদ্ধতি
একাদশী ব্রত পালনের অন্যতম প্রধান কার্যক্রম হল নিরন্তর কৃষ্ণভাবনাময় হয়ে ভগবান বিষ্ণুর পূজা আরাধনা ও ভক্তি, কীর্তন করা। এই বিশেষ দিনে উপবাস রেখে মৌন থেকে র্অথাৎ অন্য পরিজন এর সঙ্গে যত কম সম্ভব কথা বলে, সারাদিন ভগবদ্গীতা পাঠ, বিষ্ণু সহস্রনাম স্তোত্র পাঠ, একাদশী মহত্ত্ব পাঠ ও হরিনাম সংকীর্তন এবং হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করা, সময়মতো ধূপ, দীপ, ফুল, ফল ও নৈবেদ্য নিবেদন করে শ্রীহরির পূজা প্রার্থনা করা। কারণ মৌন থেকে সারাক্ষণ ঈশ্বরের আরাধনায় ব্রতী থাকলে অত্যন্ত শুভ ফল লাভ করা যায়।
এছাড়াও একাদশীতে রাত্রি জাগরণ করে ভগবান বিষ্ণুর নামস্মরণ ও সংকীর্তন করা অত্যন্ত পুণ্যজনক, তবে যারা রাত্রি জাগরণে অসমর্থ, তারা অন্তত দীর্ঘ সময় ধরে ভজন-কীর্তন ও প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বরকে স্মরণ করবেন। একাদশী ব্রত সম্পন্ন হলে অবশ্যই দ্বাদশী তিথির একাদশী পারন করবেন। এই সব আচার-অনুষ্ঠান পালন করলে ভগবান বিষ্ণুর অপার কৃপা লাভ করা সম্ভব।
একাদশী পারন মন্ত্র ও নিয়ম
দ্বাদশী তিথির সূর্যোদয়ের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একাদশী ব্রত পারণ করা উচিত। আপনি যদি নির্জলা একাদশী ব্রত করেন তাহলে দ্বাদশীতে নির্ধারিত পারনের সময় চরণামৃত দ্বারা একাদশী ব্রত পারন করবেন। আর যদি ফলাহার বা অনুকল্প একাদশী ব্রত করেন তাহলে দ্বাদশীতে নির্ধারিত পারনের সময় অন্নপ্রসাদ দ্বারা একাদশী ব্রত পারন করবেন। একাদশী ব্রত নির্দিষ্ট সময়মত পারণ করলে তবেই একাদশী ব্রত সম্পূর্ণ হয়। মহাদ্বাদশী উপস্থিত হলে একাদশী বদলে মহাদ্বাদশী তিথিতেই একাদশী ব্রত পালন করা নিয়ম।
“পরণ কালে নিম্নোক্ত মন্ত্রটি পাঠ করতে হয়”
১. একাদশী ব্রত পারণ মন্ত্র:
“ওঁ বিষ্ণুর্বিষ্ণুর্বিষ্ণুঃ! মম একাদশ্যামুপবাসং পরিপূর্ণং ভবত্বিতি।।”
বাংলা অর্থ: হে বিষ্ণু! হে সর্বব্যাপী প্রভু! আমি একাদশীর উপবাস পালন করেছি, এখন পারণ করছি। অনুগ্রহ করে এই ব্রতকে সফল করুন।
২.শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী পারণের মন্ত্র:
“পুণ্যাহম্ পারয়ামি ব্রতসিদ্ধিঃ ভবত্বিতি।।”
বাংলা অর্থ: আমি এই পূণ্যময় ব্রত পারণ করছি, ভগবান যেন এই ব্রতের সিদ্ধি দান করেন।
৩.একাদশী পারণের সময় ভগবান বিষ্ণুকে নিবেদন করার মন্ত্র:
“ওঁ নমো নারায়ণায় নম:।।”
বাংলা অর্থ: ভগবান নারায়ণকে নমস্কার জানাই।
৪.পারণের পূর্বে নিবেদন মন্ত্র (খাদ্য গ্রহণের আগে):মন্ত্র:
“অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে শঙ্করপ্রাণবল্লভে।
জ্ঞানবৈরাগ্যসিদ্ধ্যর্থং ভিক্ষাং দেহি চ পার্বতী।।”
বাংলা অর্থ: হে দেবী অন্নপূর্ণা! আপনি সর্বদা পরিপূর্ণ, মহাদেবের প্রিয়। জ্ঞান ও বৈরাগ্যের জন্য আমাকে এই ভিক্ষা প্রদান করুন।
৫.পারণের পর কৃতজ্ঞতা ও ক্ষমা প্রার্থনার মন্ত্র
“ক্ষান্তং ময়াকৃৎ যদক্ষণতায়া।
গোবিন্দ গোবিন্দ হরে মাধব।।”
বাংলা অর্থ: যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তবে হে গোবিন্দ! হে মাধব! দয়া করে ক্ষমা করুন।
একাদশী ব্রতে দান-পুণ্যের মাহাত্ম্য
একাদশীতে দান-পুণ্যে: একাদশীতে দান-পুণ্যের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। শাস্ত্রমতে, একাদশীর পরের দিন পারণের পর সামর্থ্য অনুযায়ী দরিদ্র, ব্রাহ্মণ ও অভাবী ব্যক্তিদের মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র বা অর্থ দান করলে অশেষ পুণ্য লাভ হয়। এই দিনে দান করলে তা বহুগুণ ফলপ্রসূ হয় এবং জন্মান্তরে কল্যাণ বয়ে আনে। তাই একাদশীর ব্রত পালন শেষে সামর্থ্য অনুযায়ী দান করা উচিত, যা আত্মশুদ্ধি ও ঈশ্বরের কৃপা লাভের অন্যতম মাধ্যম।
আধ্যাত্মিক জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে আমাদের অন্যান্য পোস্ট পড়ুন।
*নির্জলা একাদশী পালনের সঠিক নিয়ম।
*সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার সঠিক নিয়ম।
(FAQ) একাদশীর উপবাস সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর এখানে!
প্রশ্ন:-একাদশীর উপবাস কখন শুরু করতে হয়?
উত্তর:-একাদশী উপবাসের ক্ষেত্রে তিথির নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একাদশী দিন সকালবেলা সূর্য উদয়ের পূর্বে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করে একাদশীর উপবাস শুরু করুন।
প্রশ্ন:-একাদশীর উপবাস ভাঙার খাবার?
উত্তর:-আপনি যদি নির্জলা একাদশী ব্রত করেন তাহলে দ্বাদশীতে নির্ধারিত পারনের সময় চরণামৃত দ্বারা একাদশী ব্রত পারন করবেন। আর যদি ফলাহার বা অনুকল্প একাদশী ব্রত করেন তাহলে দ্বাদশীতে নির্ধারিত পারনের সময় অন্নপ্রসাদ দ্বারা একাদশী ব্রত পারন করবেন।
প্রশ্ন:-একাদশীতে কি কি করা উচিত নয়?
উত্তর:-একাদশীর দিনে মিথ্যাভাসন, রাগ, হিংসা, কুটিলতা, পরনিন্দা,পরচর্চা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাবেন এছাড়া স্ত্রী-সংসর্গ পরিহার করবেন। আর একাদশীর দিনে কোনো ধরনের ক্ষৌরকর্ম করা উচিত নয়। যেমন— চুল, দাড়ি,গোঁফ এবং নখ কাটবেন না।
প্রশ্ন:-একাদশীতে কি ঔষধ খাওয়া যাবে?
উত্তর:-শাস্ত্রমতে, জল, ফল, দুধ, ঘৃত, ঔষধ গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয় না। তবে সম্পূর্ণ শক্তিহীন অবস্থায় বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।