অপরা একাদশী ব্রত কথা:- হিন্দু ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্রত হিসেবে পরিচিত। এই ব্রতটি জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে পালিত হয়। শ্রীকৃষ্ণ মহারাজ যুধিষ্ঠিরকে এই ব্রতের মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করে বলেন, অপরা একাদশী ব্রত পালনে ভক্তগণ অশেষ পুণ্যের অধিকারী হন এবং গুরুতর পাপ থেকে মুক্তি লাভ করেন।
অপরা একাদশীর মাহাত্ম্য
মহারাজ যুধিষ্ঠির যখন এই ব্রত সম্পর্কে জানতে চান, শ্রীকৃষ্ণ তাকে বলেন, অপরা একাদশী এক অসাধারণ পুণ্যপ্রদানকারী ব্রত, যা জগতে প্রসিদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি এনে দেয়। এই ব্রত পালনকারী ব্যক্তি ব্রহ্মহত্যা, গোহত্যা, ভ্রুণহত্যা, পরনিন্দা, পরস্ত্রীগমন এবং মিথ্যাভাষণের মতো গুরুতর পাপ থেকে মুক্তি লাভ করেন। শ্রীকৃষ্ণ আরও বলেন, যারা মিথ্যাসাক্ষ্য প্রদান করেন, ওজনে ছলনা করেন কিংবা শাস্ত্রের মিথ্যা ব্যাখ্যা দেন, তারাও এই ব্রত পালনে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
অপরা একাদশী ব্রতের পুণ্যফল
এই ব্রত পালনে প্রাপ্ত পুণ্য অতি উচ্চমানের। মকররাশিতে সূর্য অবস্থানকালে মাঘ মাসে প্রয়াগে স্নান, শিবরাত্রিতে কাশীতে উপবাস, গয়াধামে পিণ্ডদান—এই সকল আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যে পুণ্য লাভ হয়, তা অপরা একাদশী ব্রত পালনে সহজেই অর্জিত হয়। এছাড়াও, এই ব্রত পালন না করলে জীবন ব্যর্থ হয়ে যায়, ঠিক যেমন জলে বুদবুদের মতো।
ব্রতের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব
অপরা একাদশী ব্রত পাপের বিনাশের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। এটি পাপরূপ বৃক্ষের কুঠার, পাপরূপ কাষ্ঠের দাবাগ্নি, এবং পাপের অন্ধকারকে ধ্বংসকারী সূর্যের মতো কাজ করে। শ্রীবিষ্ণুর পূজা এবং এই ব্রত পালনের মাধ্যমে ভক্তগণ সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি লাভ করেন এবং বিষ্ণুলোকে স্থান পান।
অপরা একাদশী উপসংহার
অপরা একাদশী ব্রত হিন্দু ধর্মের এক অনন্য ব্রত, যা সমস্ত পাপের বিনাশ করে এবং ভক্তদের আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে পরিচালিত করে। এই ব্রত পালনে অসাধারণ পুণ্য লাভ হয় এবং এটি ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে।
প্রো (সুবিধা) | কনস (অসুবিধা) |
---|---|
পাপ মোচন: ব্রহ্মহত্যা, গোহত্যা, ভ্রুণহত্যা ইত্যাদি গুরুতর পাপ থেকে মুক্তি। | সাধারণ অসুবিধা: একদিনের জন্য উপবাস রাখার কারণে কিছু মানুষের শারীরিক অস্বস্তি। |
পুণ্য অর্জন: মাঘ মাসে প্রয়াগে স্নান, শিবরাত্রিতে কাশীতে উপবাসের মতো পুণ্য লাভ। | স্বাস্থ্য সমস্যা: দীর্ঘ সময় উপবাস রাখার কারণে কিছু মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। |
আধ্যাত্মিক উন্নতি: ভক্তদের আধ্যাত্মিক উন্নতি ও শান্তি লাভ। | সময় ও প্রচেষ্টা: ব্রত পালনের জন্য সময় এবং প্রচেষ্টার প্রয়োজন। |
বিশেষ সুবিধা: ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বিশেষ পুণ্য অর্জন। |
বিভিন্ন পোস্ট দেখার জন্য নিচে ক্লিক করুন।
১.মোহিনী একাদশী ব্রত কথা: বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষে পবিত্র ব্রত।
২.সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার নিয়ম।
FAQ:অপরা একাদশী ব্রত কথা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর।
প্রশ্ন:-অপরা একাদশী কী?
উত্তর:অপরা একাদশী হলো হিন্দু ধর্মে একটি বিশেষ ব্রত, যা জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে পালন করা হয়। এই ব্রত পাপ থেকে মুক্তি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য পরিচিত।
প্রশ্ন:-অপরা একাদশী ব্রত পালন করার উপকারিতা কী কী?
উত্তর:-অপরা একাদশী ব্রত পালন করলে ব্রহ্মহত্যা, গোহত্যা, ভ্রুণহত্যা, পরনিন্দা, পরস্ত্রীগমন, মিথ্যাভাষণ ইত্যাদি গুরুতর পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি পুণ্য অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় এবং ভক্তকে বিষ্ণুলোকে স্থান দেয়।
প্রশ্ন:-অপরা একাদশী ব্রত পালনের জন্য কী কী নিয়ম অনুসরণ করতে হয়?
উত্তর:-অপরা একাদশী ব্রত পালনকারীদের দিনব্যাপী উপবাস রাখতে হয় এবং শ্রীবিষ্ণুর পূজা করতে হয়। সাধারণত, এই ব্রত পালনের সময় পবিত্রতা ও সৎসংগ বজায় রাখতে হয় এবং মন্দ আচরণ থেকে বিরত থাকতে হয়।
প্রশ্ন:-অপরা একাদশীর দিন বিশেষ কী কী আচার-অনুষ্ঠান করা হয়?
উত্তর:-অপরা একাদশীর দিন ভক্তরা উপবাস করেন, শ্রীবিষ্ণুর মন্দিরে যান, এবং বিশেষ পূজা ও অর্চনা করেন। এছাড়াও, ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ এবং গীতার শ্রবণ করা হয়।
প্রশ্ন:-অপরা একাদশী ব্রতের মাহাত্ম্য কোথায় বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর:-অপরা একাদশী ব্রতের মাহাত্ম্য ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে বর্ণিত হয়েছে। এই গ্রন্থে ব্রতের গুরুত্ব এবং পালনের ফলাফল বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রশ্ন:-অপরা একাদশী ব্রত পালনের মাধ্যমে কীভাবে পুণ্য লাভ করা যায়?
উত্তর:-অপরা একাদশী ব্রত পালনের মাধ্যমে মকররাশিতে সূর্য অবস্থানকালে মাঘ মাসে প্রয়াগে স্নান, শিবরাত্রিতে কাশীতে উপবাস, গয়াধামে পিণ্ডদান ইত্যাদি পুণ্য কার্যগুলি সহজেই অর্জিত হয়।
প্রশ্ন:-অপরা একাদশীর দিন উপবাস না করলে কী হতে পারে?
উত্তর:-অপরা একাদশীর দিন উপবাস না করলে পাপের বিনাশ এবং পুণ্য লাভের সুযোগ হারিয়ে যেতে পারে। এই দিন বিশেষ ধর্মীয় গুরুত্বসম্পন্ন, তাই নিয়মিত ব্রত পালন করা উচিত।