হনুমান চালিশা বাংলা অর্থ সহ: অবিশ্বাস্য, মানসিক শান্তি, সাহস ও সুরক্ষার মূল সূত্র

হনুমান চালিশা বাংলা অর্থ সহ

হনুমান চালিশা অর্থসহ বাংলায় – মানসিক শান্তির নিশ্চিত উপায়

হনুমান চালিশা বাংলা অর্থ সহ : আধ্যাত্মিক শক্তি ও ভক্তির অনন্য প্রতিফলন হনুমান চালিশা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তির স্তোত্র, যা শ্রীরামভক্ত হনুমানজীর অসীম সাহস, নিঃস্বার্থ সেবা এবং অলৌকিক শক্তির অনুপম বর্ণনা বহন করে। মহাকবি গোস্বামী তুলসীদাসজী কর্তৃক রচিত এই চালিশাটি মোট ৪০টি চরণে বিভক্ত, যেখানে প্রতিটি চরণে প্রকাশ পেয়েছে ভগবান হনুমানের অসীম গুণ ও লীলার গৌরব।

এই পবিত্র স্তোত্রটি শুধু ভক্তির প্রকাশ নয়, বরং এটি মানসিক শক্তি, আত্মবিশ্বাস এবং জীবনের কঠিন সময়ে সাহস সঞ্চারের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। বাংলাভাষী ভক্তদের জন্য আমরা এখানে উপস্থাপন করছি হনুমান চালিশার প্রতিটি চরণ বাংলায় অর্থসহ, যাতে প্রতিটি পাঠক সহজেই এর গভীর তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারেন এবং ভগবান হনুমানের কৃপা লাভে নিজেকে আরও নিবেদিত করতে পারেন।


হনুমান চালিশার মূল ৪০ স্তোত্র ও বাংলা অনুবাদ সহ

হনুমান চালিশা দোহা ॥

শ্রীগুরু চরণ সরোজ রজ, নিজ মনু মুকুরু সুধারি।
বরনউ রঘুবর বিমল জসু, জো দায়ক ফল চারি॥

অর্থ: শ্রীগুরুদেবের চরণকমলের ধূলিকে আমি আমার হৃদয়-মনের আয়না পরিষ্কার করার জন্য গ্রহণ করি, যাতে আমি রঘুবরের (শ্রী রামচন্দ্র) নির্মল ও পবিত্র যশ বর্ণনা করতে পারি—যে যশ শ্রবণ করলে মানুষ ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ এই চার ফল লাভ করে।

বুদ্ধিহীন তনু জানিকে, সুমিরউ পবন কুমার।
বল বুদ্ধি বিদ্যা দেহু মোহিঁ, হরহুকলেশ বিকার॥

অর্থ: আমি নিজেকে বুদ্ধিহীন,জ্ঞানহীন ও দুর্বল মনে করে, পবনপুত্র হনুমানজীর স্মরণ করি, হে প্রভু, আপনি আমাকে বল, বুদ্ধি ও বিদ্যা প্রদান করুন এবং আমার সকল দুঃখ,দোষ ও ভ্রান্তি দূর করুন।

হনুমান চালিশার চৌপাই ॥

হনুমানজীর অপরিসীম জ্ঞান ও অলৌকিক শক্তির বর্ণনা

জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর।
জয় কপীশ তিহুঁ লোক উজাগর॥ ১॥

অর্থ: আপনার জয় হোক ! হে পবনপুত্র হনুমান! আপনাকে কোটি কোটি প্রণাম। আপনি অসীম জ্ঞান ও গুণের মহান সাগর। হে মহাবলী কপিশ্বর! আপনিই বল, বুদ্ধি ও দিব্য শক্তির (শিব-শক্তির) মূল উৎস। আপনার তেজে ত্রিলোক আলোকিত হয় – সমগ্র সৃষ্টির প্রতিটি কোণে আপনার প্রভা ছড়িয়ে পড়েছে।

রামদূত অতুলিত বলধামা।
অঞ্জনি পুত্র পবনসুত নামা॥ ২ ॥

অর্থ: আপনি শক্তি ও ভক্তির এক অতুলনীয় দৃষ্টান্ত, ভগবান শ্রী রামের অনন্য ভক্ত ও নির্ভরযোগ্য দূতেরূপে পরিচিত। পবনদেবের কৃপায় প্রাপ্ত অসীম শক্তিতে সমৃদ্ধ, আপনি অঞ্জনী মাতার বীর সন্তান। আপনার বীরত্ব আজও ভক্তসমাজকে প্রেরণা জোগায়।

মহাবীর বিক্রম বজরংগী।
কুমতি নিবার সুমতি কের সঙ্গী॥
৩॥

অর্থ:“আপনার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ইন্দ্রের বজ্রের মতো অটুট ও দুর্জেয়, যা আপনার অতুলনীয় বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচায়ক। আপনি প্রখর বুদ্ধি ও দিব্য জ্ঞানে সমৃদ্ধ, যিনি অন্ধকারাচ্ছন্ন কুপ্রবৃত্তি ও দুষ্কর্মের ছায়াকে ধ্বংস করতে সক্ষম।

কঞ্চন বরণ বিরাজ সুবেসা।
কানন কুন্ডল কুঞ্চিত কেসা॥

অর্থ:আপনার পূর্ণ রূপটি সোনার মতো দীপ্তিময়, যা আপনাকে দেবতুল্য মহিমায় বিভূষিত করে। দেহ জুড়ে সুশোভিত পরিধানে আপনি অনন্য, আর কানে ঝুলে থাকা দীপ্তিময় কুন্ডল জ্যোতির ছটা ছড়িয়ে দেয়। আপনার কোঁকড়ানো কেশরাশি আপনার অলৌকিক সৌন্দর্য ও শক্তির পরিচায়ক, যা ভক্তদের হৃদয়ে শ্রদ্ধা ও ভক্তির উজ্জ্বল আলো জ্বালায়।

হাত বজ্র অর ধ্বজা বিরাজে।
কাঁধে মুঞ্জ জনেও সাজে॥

অর্থ: আপনার করধরে দীপ্তমান বিজয়পতাকা ও দেবশক্তির প্রতীক বজ্র ধারণ করে আছো, যা আপনার অপার বীরত্ব ও ঈশ্বরিক সামর্থ্যের প্রকাশ। তেমনি, আপনার কাঁধে শোভা পাচ্ছে পবিত্র যজ্ঞসূত্র, যা আপনার ধার্মিক জীবনযাপন, জ্ঞান ও তপস্যার গভীর চিহ্ন বহন করে।

বজরঙ্গবলীর বীররূপ, গৌরব ও ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা

সংকর সুভন কেশরী নন্দন।
তেজ প্রতাপ মহা জগ বন্দন॥

অর্থ: আপনি মহাদেবের ঐশ্বরিক অংশরূপ, পরাক্রান্ত কেশরী রাজার গর্বিত সন্তান। আপনার অপরিমেয় শক্তি ও দীপ্তিময় উপস্থিতিতে সমগ্র জগৎ শ্রদ্ধাভরে আপনাকে নতশিরে প্রণতি জানায়।

বিদ্যাবান গুণী অতি চাতুর।
রাম কাজ করিবে বেক আতুর॥

অর্থ:“আপনি এক অনন্য জ্ঞানের ধারক, অসীম গুণে সমৃদ্ধ এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী। আপনার অন্তরে শ্রীরামের প্রতি অকৃত্রিম ভক্তি বিরাজমান, আর সেই ভক্তির শক্তিতেই আপনি তাঁর প্রতিটি নির্দেশ পালনে সদা প্রস্তুত ও সর্বান্তঃকরণে নিবেদিতপ্রাণ।

প্রভু চরিত্র শুনিবে কো রসিয়া।
রাম লক্ষণ সীতা মন বাসিয়া॥

অর্থ: আপনি সর্বদা ভক্তিসহকারে শ্রীরামচন্দ্রের লীলাকথা শ্রবণ করতে ভালোবাসেন। শ্রীরাম, লক্ষ্মণ ও সীতা দেবীর হৃদয়ে আপনি স্থায়ীভাবে বিরাজমান; তাঁদের অন্তরে আপনি বিশ্বাস, ভক্তি ও নিঃস্বার্থ সেবার জীবন্ত প্রতিমূর্তি।

সূক্ষ্ম রূপ ধরি সিয়হি দেখাবা।
বিকট রূপ ধরি লংক জরাবা॥
৯॥

অর্থ: হে প্রভু! “আপনি ক্ষুদ্র ও নম্র রূপ ধারণ করে মা সীতার সম্মুখে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে তাঁর সঙ্গে কথোপকথন করেছিলেন। অতঃপর, প্রয়োজনে নিজের ভয়ংকর রূপ প্রকাশ করে সমগ্র লঙ্কাকে অগ্নিশিখায় ভস্ম করে দিয়েছিলেন।”

ভীম রূপ ধরি অসুর সংহারে।
রামচন্দ্র কে কাজ সাওঁরারে॥ ১০

অর্থ: ভীমের ন্যায় ভয়ংকর রূপ ধারণ করে আপনি অসুরদের বিনাশ করেছেন এবং ভগবান শ্রীরামের প্রদান করা প্রতিটি দায়িত্ব নিঃস্বার্থ ভক্তি ও অতুলনীয় দক্ষতার সঙ্গে সম্পূর্ণ করেছেন।

শ্রী হনুমানের পাণ্ডিত্য ও শ্রী রামের প্রতি অটল ভক্তি

লায়ে সঞ্জীবন লখন জিয়ায়ে।
শ্রী রঘুবীর হর্ষি উর লায়ে॥ ১১

অর্থ:হে প্রভু, আপনি সেই অলৌকিক সঞ্জীবনী বুটি সংগ্রহ করে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া লক্ষ্মণকে পুনর্জীবিত করতে সহায়তা করেন। আপনার এই মহৎ কীর্তি দেখে রঘুবীর শ্রীরাম পরম আনন্দে অভিভূত হয়ে আপনাকে গভীর স্নেহে বক্ষে আলিঙ্গন করেন।

রঘুপতি কীনহি বহুত বড়াই।
তুম মম প্রিয় ভরৎ সম ভাই॥ ১২

অর্থ: শ্রীরামচন্দ্র সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে আপনার সততা, ভক্তি, নম্রতা ও গুণের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন— ‘ ভরত আমার যেমন অন্তরে সর্বদা বিরাজমান, তেমনি তুমিও আমার হৃদয়ে সমভাবে প্রিয় ও শ্রদ্ধেয়।

সহস্র বদন তুমহর যশ গাবে।
আস কহি শ্রীপতি কণ্ঠ লাগাবে॥ ১৩

অর্থ:হে প্রভু! লক্ষ লক্ষ প্রাণী অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা ও ভক্তির সাথে আপনার গুণগান করছে, তখন ভগবান শ্রীরাম অন্তর থেকে প্রীত হয়ে আপনাকে এসো ভাই বলে, ভালোবাসায় বক্ষে ধারণ করলেন।

সনকাদিক ব্রহ্মাদি মুনীসা।
নারদ সারদ সহিত অহীসা॥ ১৪

অর্থ: মহর্ষি সনক, সনন্দন, সনাতন ও সনৎকুমার; সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা; দেবঋষি নারদ; বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতী; এবং অনন্ত শয্যায় শয়িত শ্রীশেষনাগ—এই সকল ঋষি, দেবতা ও দিব্য জ্ঞানসত্তাগণও আপনার অনন্ত গৌরব ও অপার মহিমার স্তব ও বন্দনা করেন, যা এই জগতের প্রতিধ্বনিত হচেছ।

যম কুবের দিগপাল যাহাঁ তে।
কবি কোবিদ কহি সকে কহাঁ তে॥ ১৫

অর্থ:যখন মৃত্যু-দাতা যমরাজ, ধন-সম্পদের অধিপতি কুবের, এবং চার দিকের রক্ষাকর্তা দিক্‌পালগণ পর্যন্ত আপনার অপার মহিমা কীর্তন করতে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন, তখন আমি এক সাধারণ কবি হয়ে আপনার ঐশ্বর্য ও গৌরবের যথাযথ মাহাত্ম্য বর্ণনা কীভাবে শব্দে প্রকাশ করতে পারি?

রামায়ণে হনুমানের ভূমিকা ও আদর্শ সেবক হিসেবে পরিচিতি

তুম উপকার সুগ্রীবহিঁ কীনহা।
রাম মিলায়ে রাজপদ দীনহা॥ ১৬

অর্থ: আপনি সুগ্রীবের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে শ্রীরামচন্দ্রের সঙ্গে মিলিত হতে সাহায্য করেন। আপনার সেই মহান উদ্যোগের ফলে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র তাঁকে পুনরায় তাঁর হারানো রাজ্য ও সিংহাসন ফিরিয়ে দেন।

তুমহরো মন্ত্র বিভীষণ মানা।
লংকেশ্বর ভএ সব জগ জানাঃ॥ ১৭

অর্থ: আপনার মহান পরামর্শ অনুসরণ করে বিভীষণ শ্রীরামের শরণ গ্রহণ করেন, ফলস্বরূপ, সমগ্র বিশ্ব জানে—তিনি লঙ্কার ন্যায়পরায়ণ রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

যুগ সহস্র যোজন পর ভানু।
লীল্যো তাহি মধুর ফল জানু॥ ১৮

অর্থ: হে প্রভু! সূর্যের প্রখর দীপ্তিকে একটি মিষ্টি ফল ভেবে নিয়েছিলে, আর সেই নিষ্পাপ বিশ্বাসে সহস্র যোজন দূরে অবস্থান করেও এক লাফে সেখানে পৌঁছে সূর্যকে গিলে ফেলেছিলে — আপনার অসীম সাহস ও অলৌকিক শক্তির সে ছিল এক অবিস্মরণীয় নিদর্শন।

প্রভু মুদ্রিকা মেলি মুখ মাহীঁ।
জলধি লাঁংঘী গয়ী অচরজ নাহীঁ॥ ১৯

অর্থ: প্রভু শ্রীরামের আঙুলির আংটি মুখে ধারণ করে যখন আপনি বিশাল সমুদ্র অতিক্রমে ঝাঁপ দিলেন, তখন সেই বিশাল সমুদ্রের জলরাশির পার হওয়া ছিল আপনার ভক্তি আর সাহসের প্রমাণ — এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়।

দুর্গম কাজ জগতকে জেতে।
সুগম অনুগ্রহ তুমহারে তেতে॥ ২০

অর্থ: এই জগতের যত দুঃসাধ্য ও কঠিন কর্ম আছে, যা মানুষের নিজ শক্তি বাইরে, হে ঈশ্বর! আপনার অনুকম্পা ও কৃপাশক্তির স্পর্শে সেই অসাধ্য কর্ম অতি সহজেই সম্পন্ন হয়ে যায় এবং সব অন্ধকার মুছে আলোর পথে আলোকিত হয়ে ওঠে।

হনুমান চালিশা বাংলা অর্থ সহ

শ্রী রামের কৃপায় প্রাপ্ত আশীর্বাদ ও মহাশক্তির উৎস

রাম দুআরে তুম রাখবারে।
হোত না আজ্ঞা
বিনু পৈসারে॥ ২১

অর্থ: আপনি স্বয়ং শ্রীরামচন্দ্রের পবিত্র ধামের দ্বারে প্রহরী রূপে বিরাজমান; আপনার অনুমতি ব্যতীত সেখানে কারোরই প্রবেশ সম্ভব নয়।

সব সুখ লহে তুমহারে শরণা।
তুম রক্ষক কাহু কো ডর না॥ ২২

অর্থ: এই সংসারের সমস্ত সুখ আপনার পবিত্র চরণেই নিহিত। যারা আপনার শরণে আশ্রয় গ্রহণ করে, তারা আপনার কৃপায় সকল প্রকার আনন্দ ও শান্তি লাভ করে। যেখানে আপনিই রক্ষাকর্তা, সেখানে ভয়ের কোনো স্থানই থাকে না।

আপন তেজ সমহারো আপৈ।
তীনো লোক হাঁক তে কাঁপে॥ ২৩

অর্থ:আপনি স্বয়ম্ভূ; আপনার দীপ্তি শক্তি আপনি নিজেই সংযত করে ধারণ করেন। আপনার বিজয়ঘোষের প্রলয়ঙ্কর গর্জনে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল—এই ত্রিলোক কাঁপতে থাকে।

ভূত পিশাচ নিকট নাহিঁ আবৈ।
মহাবীর জব নাম শুনাবে॥২৪

অর্থ: যখন কেউ আন্তরিক ভক্তিভাবে ‘মহাবীর’ শ্রীহনুমানজির নাম স্মরণ করেন, তখন কোনো অপদেবতা, ভূত-প্রেত বা নেতিবাচক শক্তি তার নিকটে আসতে পারে না। শ্রীহনুমানের কৃপায় সেই ভক্ত সর্বদা সুরক্ষিত থাকেন।

নাসৈ রোগ হরে সব পীড়া।
জপত নিরন্তর হনুমত বীরা॥ ২৫

অর্থ:যে ভক্ত আন্তরিক ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে নিরন্তর আপনার পবিত্র নাম স্মরণ ও জপ করেন, তাঁর জীবনের সকল দুঃখ-কষ্ট ও রোগ আপনার কৃপায় দূরীভূত হয় এবং সংসারে শান্তি ও কল্যাণের অধিষ্ঠান হয়।

হনুমানজীর গৌরবগাথা, শক্তি প্রদর্শন ও দেবতা সমান সম্মান

সঙ্কট তেঁ হনুমান ছুঁড়াবে।
মন ক্রম বচন ধ্যান জৈ লাবৈ॥ ২৬

অর্থ: যে ভক্ত হৃদয়, বাক্য ও কর্মে নিষ্ঠাভরে আপনার ধ্যান করেন, আপনি তাঁকে সকল বিপদ ও বিঘ্ন থেকে রক্ষা করেন এবং শান্তি ও কল্যাণ দান করেন।

সব পর রাম তপস্বী রাজা।
তিন কে কাজ সকল তুম সাজা॥ ২৭

অর্থ: শ্রীরাম তপস্বী রাজাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, তিনি ধর্ম, ত্যাগ,মর্যাদা ও আদর্শের জীবন্ত প্রতীক। আপনি তাঁর প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তি,পূর্ণ বিশ্বাস, বিনম্র সেবা ও আত্মনিবেদন দ্বারা তাঁর সমস্ত কার্য সম্পন্ন করেছেন এবং তাঁর প্রতিটি সংকল্পকে সফল করে তুলেছেন। আপনার নিঃস্বার্থ ভক্তিতেই ভগবান শ্রীরাম সর্বদা সন্তুষ্ট থাকেন।

অউর মনোরথ যো কোই লাভে।
সোই অমিত জীবন ফল পাবেঃ॥ ২৮

অর্থ: যে ভক্ত আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধার সাথে মনোবাঞ্ছা পূর্তির উদ্দেশ্যে আপনার উপাসনা ও স্মরণ করেন, আপনার কৃপায় তিনি তার প্রত্যাশিত ফল লাভ করেন এবং অনন্ত কল্যাণে পরিপূর্ণ হন।

চারো যুগ পরতাপ তুমহারা।
হৈ প্রসিদ্ধ জগত উজিয়ারা॥ ২৯

অর্থ: হে প্রভু, আপনার দিব্য মাহাত্ম্য চার যুগ জুড়ে প্রসিদ্ধ, সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিতে আপনার কীর্তির ছড়িয়ে আছে। সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আজ তোমার কীর্তির জ্যোতিতে উদ্ভাসিত, আর ভক্ত হৃদয় তোমার গৌরবগাথায় অনুপ্রাণিত।

সাধু সন্ত কে তুম রখবারে।
অসুর নিকন্দন রাম দুলারে॥ ৩০

অর্থ: তুমি সাধু-সন্তদের সর্বদা রক্ষা করো, অধর্মের পথ বেছে নেওয়া অসুরদের বিনাশ করো এবং তুমি মহাপরাক্রমশালী শ্রীরামচন্দ্রের অন্তরের প্রিয় সহচর ও ভক্ত। তোমার জীবনের মূল উদ্দেশ্যই হলো ধর্মের প্রতিষ্ঠা, ভক্তদের কল্যাণ এবং অধর্ম ও অন্যায়ের নিধন।

শ্রী হনুমানের ভক্তরক্ষা, বিপদ মুক্তি ও কল্যাণ সাধন

অষ্টসিদ্ধি নৌ নিধি কে দাতা।
অস বর দিন জানকী মাতা॥ ৩১

অর্থ: হে মহাবীর শ্রীহনুমান! তুমি অষ্টসিদ্ধি ও ন’ধনের অক্ষয় দাতা, তোমার কৃপায় ভক্তের জীবনে আসে অপার কল্যাণ ও ঐশ্বর্য। এই অনুপম বর তুমি লাভ করেছো স্বয়ং জনকনন্দিনী মাতা সীতার করুণাময় আশীর্বাদে। তাই তোমার কৃপাপ্রাপ্ত হলে সংসারের সকল দুঃখ, দারিদ্র্য ও সংকট দূর হয়ে যায়, আর ভক্ত হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় চিরশান্তি ও ভগবৎভক্তি।

রাম রসায়ন তুমহারে পাসা।
সদা রহো রঘুপতি কে দাসা॥ ৩২

অর্থ: তুমি চিরকাল রঘুকুলেশ্বর শ্রীরামের প্রেমরসে নিমগ্ন, তাঁর পাদপদ্মে একান্তভাবে নিবেদিত। হৃদয়ে সদা রামের নাম, রঘুনাথই তোমার প্রাণ, তুমি তাঁর চিরদিনের দাস—ভক্তির মহান এক নিদর্শন।

তুমহারে ভজন রাম কো পাবৈ।
জনম জনম কে দুখ বিসরাবে॥ ৩৩

অর্থ: হৃদয় দিয়ে তোমার ভজন করলেই, স্বয়ং শ্রী রাম চন্দ্র কে পাওয়া যায়। এবং তাঁর অনুকম্পার ছোঁয়ায়, জন্ম জন্মান্তরের পাপ ও দুঃখ অচিরেই নষ্ট হয়ে যায়।

অন্তকাল রঘুবরপুর জাই।
যাঁহা জন্ম হরিভক্ত কাহাই॥ ৩৪

অর্থ: যদি কোনো ব্যক্তি জীবনের অন্তিম সময়ে ভগবান শ্রীরামের নাম স্মরণ করে ও হৃদয়ে তাঁকে ধারণ করে, তবে সে শ্রীরামের ঐশ্বরিক ধামে গমন করে। পরবর্তী জন্মে সে একজন পরম হরিভক্তরূপে এই মর্ত্যলোকে জন্মলাভ করে এবং ভগবৎসেবায় আত্মনিয়োগ করে।

ঔর দেবতা চিত্ত না ধরই।
হনুমত সেই সর্ব সুখ করই॥ ৩৫

অর্থ: যখন মন একনিষ্ঠভাবে শুধুমাত্র শ্রীরামদূত হনুমানজীর ভক্তিতে নিমগ্ন হয়, তখন আর কোনো দেবতার প্রতি মন আকৃষ্ট হয় না। তাঁর নিষ্কাম সেবার মাধ্যমে সমস্ত প্রকার সুখ-সমৃদ্ধি স্বতঃসিদ্ধভাবে লাভ হয়।

পবনপুত্রের চমৎকার কীর্তিকথা ও জীবনে কল্যাণের বার্তা

সঙ্কট কাটে মিটে সব পীড়া।
যো সুমিরে হনুমত বলবীরা॥ ৩৬

অর্থ: জীবনের যাবতীয় বিপদ, কষ্ট ও দুঃখ ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায়, যখন কোনো ভক্ত আন্তরিক ভক্তি ও বিশ্বাস নিয়ে পরাক্রান্ত, বলশালী হনুমানজির স্মরণ করেন। পবনপুত্র হনুমানের কৃপায় জীবনে শান্তি, নিরাপত্তা ও সাহসের অভ্যুদয় ঘটে।

জয় জয় জয় হনুমান গোসাঁই।
কৃপা করহু গুরুদেব কি নাই॥ ৩৭

অর্থ: জয় হনুমান গোস্বামী! হে পবনপুত্র, হে শক্তিসম্পন্ন প্রভু, আপনি কেবল রামদূত নন—আপনি আমাদের চেতনার দীপ, শুদ্ধ বিশ্বাসের প্রেরণা। আপনি যেভাবে শ্রীগুরুর ন্যায় অসীম করুণায় আপনার ভক্তদের উপর দয়া বর্ষণ করেন, আমরাও সেই অনন্ত আশীর্বাদ লাভের আশায় আপনার চরণে শরণাগত হই।
আপনার কৃপা হোক আমাদের জীবনের পাথেয়, আপনার শক্তি হোক আমাদের সকল বাধা-বিপদের রক্ষাকবচ। হে মহাবলশালী, আমাদের অন্তর থেকে সমস্ত ভয়, ক্লেশ ও অন্ধকার দূর করে জীবনে আনুন শান্তি, সাহস ও সদ্বুদ্ধির জ্যোতি। আপনার শরণেই মুক্তি, আপনার স্মরণেই কল্যাণ। জয় হনুমান গোস্বামী! আপনি আমাদের হৃদয়ে গুরুদেবের মতো করুণা করুন!

যো শত বার পাঠ কর কোই।
ছুটহি বন্দি মহা সুখ হোই॥ ৩৮

অর্থ: যে ভক্ত আন্তরিক বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে একশো বার শ্রীহনুমান চালিশার পাঠ করেন, তিনি জীবনের সব বন্ধন, দুঃখ-কষ্ট ও বাধা-বিপত্তি থেকে ধীরে ধীরে মুক্তি লাভ করেন। শ্রীহনুমানজীর আশীর্বাদে তাঁর জীবনে শান্তি, আনন্দ ও পরম কল্যাণের স্রোত বয়ে যায়। এই চালিশার শক্তি তাঁকে মানসিক, পারিবারিক ও আধ্যাত্মিক স্তরে অপরিসীম সুখ ও সাফল্য প্রদান করে।

যো ই পড়ে হনুমান চালিশা।
হোয় সিদ্ধি সাখী গৌরীসা॥ ৩৯

অর্থ:যে ভক্ত নিষ্ঠা ও একাগ্রচিত্তে প্রতিদিন হনুমান চালিশার পাঠ করেন, তিনি জীবনের অলৌকিক সিদ্ধি ও আশীর্বাদ লাভ করেন। এই সত্যের সাক্ষ্য স্বয়ং মহাদেব শিব দিয়েছেন, যিনি নিজে ভক্তির মহিমা উপলব্ধি করে হনুমানজির প্রশংসা করেছেন। হনুমান চালিশার প্রতিটি স্তব ও শ্লোকে লুকিয়ে আছে ঈশ্বরপ্রাপ্তির পথ ও চেতনার জাগরণ।

তুলসীদাস সদা হরিচেরা।
কীজে নাথ হৃদয় মহঁ ডেরা॥ ৪০

অর্থ: তুলসীদাসজী সর্বদা পরম ভক্তি ও নিষ্ঠার সঙ্গে ভগবান শ্রীহরির চরণে নিজেকে সমর্পিত করে রেখেছেন। হে প্রভু, করুণাসাগর! আপনি অনুগ্রহ করে আমার হৃদয়ে চিরকাল অধিষ্ঠান করুন, যাতে আমার মন সর্বদা আপনার ভক্তিতেই নিমগ্ন থাকে এবং আমি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আপনার চরণসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে পারি।

॥ হনুমান চালিশা দোহা ॥

পবনতনয় সঙ্কট হরন, মঙ্গল মূর্তি রূপ।
রাম লখন সীতা সহ, হৃদয় বসহু সুরভূপ॥

অর্থ:হে পবনপুত্র মহাবীর হনুমান! আপনি, বিশ্ববন্দিত দুঃখ-দূরকারী, ভক্তজনের পরম আশ্রয় ও কল্যাণময় শুভ-স্বরূপ। তোমার অসীম শক্তি, নিরন্তর ভক্তি ও শ্রীরামচন্দ্রের প্রতি তোমার অকপট প্রেম সনাতন ভক্তদের হৃদয়ে চিরস্মরণীয়।

প্রভু, আমার হৃদয়মন্দিরে তুমি চিরকাল অধিষ্ঠিত হও, সদা বিরাজ করো শ্রীরাম, মাতাসীতা ও লক্ষ্মণ সহ। তোমার উপস্থিতিতেই আমার চেতনায় জাগুক শুদ্ধতা, সাহস ও ধর্মপথে চলার অনুপ্রেরণা। এই দুঃসময়ের জীবনপথে তুমি হও আমার শক্তি, আমার ভরসা।

হে মহাশক্তিধর বজরংগবলী, তোমার কৃপা ছাড়া জীবনের সকল দুঃখ-কষ্ট দূর হওয়া সম্ভব নয়। তাই তোমার চরণে মাথা নত করে প্রার্থনা করি— আমার অন্তরে আপনি স্থায়ী আসন গ্রহণ করো, যাতে আমার মন সর্বদা শ্রীরাম নামের ভক্তিতে নিমগ্ন থাকে এবং তোমার আশীর্বাদে আমি কল্যাণময় জীবনের পথে অগ্রসর হতে পারি।

জয় হনুমান! জয় শ্রী রাম! হনুমান চালিশা বাংলা অর্থ সহ অনুবাদ সম্পূর্ণ


হনুমান চালিশা পাঠের উপকারিতা:

  • শত্রু ও ভয়ের হাত থেকে রক্ষা করে।
  • মানসিক শান্তি ও সাহস বৃদ্ধি করে।
  • শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা দূর করে।
  • ভগবান রামের প্রতি ভক্তি জাগায়।
  • আত্মবিশ্বাস এবং একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়।

উপসংহার:

হনুমান চালিশা কেবলমাত্র স্তোত্র নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক শক্তির উৎস। বাংলায় এর অর্থ বোঝার মাধ্যমে আমরা এর গভীর তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারি এবং দৈনিক পাঠ করে জীবনকে করে তুলতে পারি আরো শক্তিশালী, শান্তিপূর্ণ ও ভগবানপ্রেমে পূর্ণ।

ভক্তিভাব ও ঈশ্বরচিন্তা বৃদ্ধির জন্য আমাদের অন্যান্য আধ্যাত্মিক লেখাগুলি পড়ুন।

*শ্রী হনুমান চালিশা লিরিক্স বাংলা শক্তি এবং সাহস এর পথ।

Share Please:
অস্বীকৃতি

এই লেখা ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক তথ্য সরবরাহের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এতে বর্ণিত পুজা পদ্ধতি, মন্ত্র এবং অন্যান্য তথ্য প্রাচীন শাস্ত্র, লোকাচার ও ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছে। পাঠকদের অনুরোধ করা হচ্ছে, নিজের বিশ্বাস ও সুবিধা অনুযায়ী পুজা পদ্ধতি গ্রহণ করুন। যেকোনো ধর্মীয় কাজ করার আগে যোগ্য পণ্ডিত বা বিদ্বান থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই লেখায় দেওয়া তথ্য ব্যবহারের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে ব্যবহারকারীর ওপর থাকবে।

Leave a Comment