আপনার ঘরে কি শান্তি, সমৃদ্ধি ও করুণা কামনা করেন? তাহলে মা লক্ষ্মীর চরণে নিবেদিত এই “মা লক্ষ্মী আবাহন গীত” আপনার হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। প্রতিটি শব্দেই আছে ভক্তির সুর, মাতৃ আরাধনার গভীর আহ্বান—যা পারে আপনার জীবনে আনতে শুভ শক্তির আলো।
লক্ষ্মীদেবী হিন্দু ধর্মে ধন, সৌভাগ্য, শান্তি ও ঐশ্বর্যের প্রতীকরূপে পূজিত হন। তিনি শুধু সম্পদের দেবী নন, বরং এক চিরস্নিগ্ধ মাতৃসত্তা, যিনি সংসারে সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির আশীর্বাদ বর্ষণ করেন। হিন্দু ঘরের আঙ্গিনায় প্রতি বৃহস্পতিবার বা লক্ষ্মীবারে ভক্তেরা তাঁকে স্নেহ ও শ্রদ্ধায় আহ্বান করে, প্রদীপ জ্বেলে,নৈবেদ্য সাজিয়ে, ধূপ-ফুল দিয়ে পূজা করে।
এই মহামায়ার আগমনের প্রার্থনায় রচিত একটি হৃদয়স্পর্শী কাব্যরূপ প্রার্থনা হলো — “শ্রীশ্রী লক্ষ্মীদেবীর আবাহন গীত”।
এই গীতের প্রতিটি পঙক্তিতে রয়েছে মায়ের প্রতি এক অন্তরসিদ্ধ নিবেদন, একাগ্র ভক্তি আর করুণাময়ীর চরণে আত্মসমর্পণের আবেদন। এটি শুধু গীত নয় — এটি এক লক্ষ্মী স্তোত্র নির্ভেজাল ভক্তির ঝর্ণাধারা, যা মায়ের চরণে প্রবাহিত হয় গভীর আন্তরিকতায়।

মা লক্ষ্মী আবাহন গীতের মূল পাঠ:
“এসো মা লক্ষ্মী, বসো মা লক্ষ্মী, তব কনক-অঞ্চলখানি উড়ায়ে, থাকো মা লক্ষী ঘরেতে আমার।
বিলাও দু’হাতে করুণা সিদ্ধিকণা, থাক দূরে, সব দুঃখ, ওমা পাপ-নাশিনী।।”
ব্যাখ্যা:এই অংশে ভক্ত মা লক্ষ্মীকে অনুরোধ করছে যেন তিনি ঘরে স্থায়ীভাবে অবস্থান করেন। তাঁর সোনার আঁচল যেন শান্তির বাতাস বইয়ে দেয়। ভক্ত কামনা করে যে, মা তাঁর করুণা ও সিদ্ধির কণা বিলিয়ে দিয়ে সংসার থেকে দুঃখ ও পাপ দূর করুন। মা যেন পাপ-নাশিনী রূপে ঘরে বিরাজ করেন।
“সর্বদা পূজিব মাগো চরণ কমলখানি, থাকো মাগো গৃহেতে হইয়া অচলা।
মাগো, তব কৃপা ছায়া পাইব সকলে, রক্ষা করো মোরে বিপদ কালে।।”
ব্যাখ্যা:ভক্ত বলছে— “হে মা, আমি সদা তোমার চরণকমলে পূজা নিবেদন করব। তুমি যেন আমার গৃহে অচল রূপে (স্থায়ীভাবে) থাকো। তোমার কৃপা-ছায়ায় আমার পরিবার-পরিজনের সব বিপদ থেকে রক্ষা হোক।”
“মাগো এসো, নিদয়া হয়ো না, দিও করুণা দৃষ্টি, পদছায়া দেহ এ অধম সন্তানে।
যেন পাই মাগো তব অপার করুণা, ওমা তুমি মোরে ছেড়ে যেও না।।”
ব্যাখ্যা:ভক্ত আবারও অনুনয় করছে— “হে মা, এসো! দয়া করো, আমার প্রতি করুণা দৃষ্টিতে চেয়ে দেখো। এই অধম সন্তানের ওপর তোমার পবিত্র পদছায়া বর্ষিত হোক। আমি যেন তোমার অসীম করুণা লাভ করি, তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না।”
“তোমারই শুভচরণ স্পর্শে, জেগেওঠে হৃদয় শক্তির ছোঁয়া।
ওমা, সবার শীর্ষে দিব স্থান, হৃদয় ভরে পূজিব তোমার চরণকমলখানি।।”
ব্যাখ্যা:ভক্ত অনুভব করে যে, লক্ষ্মী চরণ বন্দনা মায়ের চরণ-স্পর্শে অন্তর থেকে শক্তি ও উৎসাহের জাগরণ ঘটে। তাই মা লক্ষ্মীর চরণকমলই জীবনের সর্বোচ্চ স্থান পায়, এবং ভক্ত তার সমস্ত হৃদয় দিয়ে সেই চরণ পূজা করতে চায়।
“মোর পানে চাও মাগো করুণা-নয়নে, দাও শান্তির পরশ, এ ক্লান্ত হৃদয়ে।
অন্তিমে রেখো চরণে, এই চাহি বারে বারে, তুমিই তরণী মাগো এ ভব সংসারে।।”
ব্যাখ্যা:শেষ স্তবকে ভক্ত অনুরোধ করে— “হে মা, তুমি করুণাভরা নয়নে আমার দিকে চাও। আমার ক্লান্ত ও জর্জরিত হৃদয়ে শান্তির পরশ দাও। আমি প্রার্থনা করি যেন মৃত্যুর সময় তোমার চরণেই স্থান পাই। হে মা, তুমি-ই একমাত্র তরণী (উদ্ধারকারিণী) এই দুঃখের সংসার থেকে।”
লক্ষ্মীদেবীর আবাহন গীতটির আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
এই গীতটি শুধুমাত্র একটি প্রার্থনা নয়, এটি একটি গভীর আত্মসমর্পণ। এটি বোঝায় যে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা, কষ্ট এবং সংগ্রামে একমাত্র মা লক্ষ্মীর কৃপাই আমাদের শক্তি ও নির্ভরতার উৎস। ভক্তের প্রার্থনা যেন মায়ের করুণাময় দৃষ্টিতে জীবনের সমস্ত দুঃখের অবসান ঘটে।
কবে মা লক্ষ্মী আবাহন গীত পাঠ করবেন?
- প্রতি লক্ষ্মীবার বা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে পাঠ করলে বিশেষ ফল লাভ হয়।
- কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা বা দীপাবলির সময়ও এই আবাহন গীত পাঠ করা অত্যন্ত শুভ।
- গৃহলক্ষ্মী হিসেবে মা লক্ষ্মীর আরাধনায় প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় গীতটি পাঠ করতে পারেন।
উপসংহার
“শ্রীশ্রী লক্ষ্মীদেবীর আবাহন গীত” শুধুমাত্র একটি কবিতা নয়, এটি লক্ষ্মী কৃপা পাওয়ার উপায়, লক্ষ্মীর প্রতি আমাদের আকুতি, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতিচ্ছবি। এই গীত পাঠ করলে হৃদয়ে এক শান্তি ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি অনুভব হয়। গৃহে মা লক্ষ্মীর স্থায়ী আগমন ও আশীর্বাদ লাভের জন্য এই গীতের আবাহন অনন্ত কাল ধরে ভক্তরা গেয়ে চলেছেন।
লক্ষ্মী আরাধনা সম্পর্কে আরও নিবন্ধ পড়ুন – শান্তি, কৃপা ও সমৃদ্ধির পথ খুঁজে নিন।
*বৃহস্পতিবার ব্রতকথা ও লক্ষ্মীর পাঁচালী।
FAQলক্ষ্মী আবাহন গীত – সাধারণত জিজ্ঞাসা করা প্রশ্ন ।
প্রশ্ন: লক্ষ্মী আবাহন গীত কী?
উত্তর:
লক্ষ্মী আবাহন গীত একটি ভক্তিমূলক স্তোত্র, যা দেবী লক্ষ্মীকে গৃহে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য গাওয়া হয়। এতে মা লক্ষ্মীর কৃপা, করুণা ও শান্তির জন্য আকুল আহ্বান জানানো হয়। এই গীত সাধারণত লক্ষ্মীপূজা, কোজাগরী লক্ষ্মী ব্রত বা শুভ শুক্রবারে পাঠ করা হয়।
প্রশ্ন: লক্ষ্মী আবাহন গীত কখন পাঠ করা উচিত?
উত্তর:
এই গীত সন্ধ্যা সময় বা পূজার শুরুতে পাঠ করা উত্তম। বিশেষত লক্ষ্মীপূজার দিন, কোজাগরী পূর্ণিমা, দীপাবলি বা সপ্তাহের শুক্রবার সন্ধ্যায় মা লক্ষ্মীর আবাহনের জন্য এটি পাঠ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: লক্ষ্মী আবাহন গীত পাঠে কী ফল পাওয়া যায়?
উত্তর:
এই গীত ভক্তির সাথে পাঠ করলে গৃহে শান্তি, সমৃদ্ধি ও সুখের পরিবেশ তৈরি হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। মা লক্ষ্মীর কৃপা লাভের জন্য এটি অত্যন্ত ফলপ্রদ, কারণ এতে রয়েছে হৃদয় থেকে উৎসারিত প্রার্থনা ও মঙ্গল কামনা।