সরস্বতী পূজার নিয়ম ও মন্ত্র |পুরোহিত না পেলে নিজেই করুন সরস্বতী পূজা

আপনি যদি সরস্বতী পূজার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান, তবে এই পোস্টটি আপনার জন্য। এখানে সরস্বতী পূজার সম্পূর্ণ বিধি শাস্ত্রমতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতে আপনি পূজার সঠিক প্রস্তুতি থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পাবেন।

সরস্বতী পূজার নিয়ম

এই পোস্টে আমরা সরস্বতী পূজার নিয়ম নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আলোচনা করেছি: পূজার প্রস্তুতি: পূজার ফর্দ তৈরি এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকা। আচমন ও বিষ্ণু স্মরণ মন্ত্র: শুদ্ধতা বজায় রাখার প্রাথমিক ধাপ। জলশুদ্ধি ও সূর্য অর্ঘ্য: পবিত্র জল ও সূর্যদেবের স্মরণ। গুরুস্মরণ ও আসনশুদ্ধি: গুরু ও আসনকে পবিত্র করার পদ্ধতি। করশুদ্ধি ও পুষ্পশুদ্ধি: পূজার উপকরণকে শুদ্ধ করা। পঞ্চগব্য ও পঞ্চামৃত শোধন: পঞ্চগব্য ও পঞ্চামৃত প্রস্তুতির নিয়ম। সঙ্কল্প ও ঘটস্থাপন: পূজার সংকল্প গ্রহণ এবং ঘট স্থাপন। চক্ষুৰ্দ্দান ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা: মূর্তির প্রতি প্রাণ সঞ্চারের প্রক্রিয়া। পঞ্চদেবতার পূজা ও প্রধান পূজা: সরস্বতী দেবীর পূজার প্রধান অংশ। পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র ও আরতি: পুষ্পাঞ্জলি এবং আরতির সঠিক নিয়ম। হোম ও সরস্বতী স্তোত্রম্: হোম যজ্ঞ ও স্তোত্র পাঠ। বিসর্জন: পূজার শেষ ধাপ।

এই নির্দেশিকা অনুসরণ করে আপনি সরস্বতী পূজার প্রতিটি ধাপ নিজেই সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন, এমনকি পুরোহিতের সাহায্য ছাড়াই। এটি আপনাকে সরস্বতী পূজার সঠিক পদ্ধতি শেখাবে না, বরং আপনার ভক্তি ও আত্মবিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।

মা সরস্বতীর পূজার তাৎপর্য এবং উপযুক্ত প্রস্তুতি: ভারতবর্ষে পাশাপাশি সারা বিশ্বে মা সরস্বতী যুগ যুগ ধরে জ্ঞান এবং বিদ্যার দেবী হিসেবে পূজিত হয়ে আসছেন। বাকদেবী আমাদের জীবনে বিদ্যা, শিক্ষা এবং সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটান। মা সরস্বতীর আরাধনার মাধ্যমে আমরা আমাদের অর্জিত জ্ঞান ধরে রাখতে পারি এবং জীবনে আরও উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারি।

মা সরস্বতীর পূজা শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়; এটি আমাদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধির এবং জীবনের জটিলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য আত্মবিশ্বাস এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জোগানোর এক শক্তিশালী মাধ্যম। আজকের যুগে সারা বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও মা সরস্বতীর পূজা অর্চনা মাধ্যমে বাকদেবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়, যেখানে বিদ্যা এবং সংস্কৃতির উদযাপন করা হয়। পূজার এই আচার আমাদের জীবনে আধ্যাত্মিক উন্নতির পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি নিয়ে আসে, যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্যের পথে পরিচালিত করে।

পূজার সঠিক প্রস্তুতি: সরস্বতী পূজার আগে সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। পূজার জন্য প্রথমে মনোযোগ সহকারে পূজার পদ্ধতি বুঝে নিতে হবে। পূজার সময় প্রয়োজনীয় শারীরিক অঙ্গভঙ্গি বা মুদ্রা এবং “ন্যাস” শেখা উচিত। পূজা করার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করুন, তবে সব উপকরণ না পেলে, গভীর ভক্তি ও শ্রদ্ধা সাথে পূজা করলে পূজার আসল উদ্দেশ্য পূরণ হবে।

যাঁরা বিদেশে থাকেন বা যাঁদের পূজার সকল সামগ্রী সহজলভ্য নয়, তাঁরা স্থানীয়ভাবে যা কিছু পূজার সামগ্রী পাওয়া যায় তা দিয়েই পূজা করতে পারেন। মূর্তি না থাকলে মা সরস্বতীর ছবি বা বই ব্যবহার করা যেতে পারে। পূজার মূল উদ্দেশ্য সামগ্রী নয়, বরং মনের বিশুদ্ধতা ও গভীর ভক্তি।

পূজার ধাপ এবং বিসর্জন:যদি পুরোহিত না পাওয়া যায়, তাহলে পূজার সময় নিজেকে ব্রাহ্মণ হিসেবে কল্পনা করে মনোযোগ দিয়ে পূজার প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করুন। যদি এটি সংক্ষিপ্ত একদিনের পূজা হয়, তাহলে পূজা শেষে বিসর্জনের মন্ত্র পাঠ করা আবশ্যক। এটি পূজার এক গুরুত্বপূর্ণ শেষ ধাপ যা পূজার সম্পূর্ণতাকে নিশ্চিত করে।

পূজার উদ্দেশ্য: সরস্বতী পূজার প্রধান লক্ষ্য আমাদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করা এবং জীবনের জটিলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার পথ সুগম করা। মা সরস্বতীর করুণায় আমরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে পারি এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে পারি। যদি কোনো ধাপে ভুল হয় বা কোনো উপকরণ না থাকে, তবে আন্তরিকভাবে মা সরস্বতীর কাছে ক্ষমা চেয়ে পূজার কাজ সম্পন্ন করুন। ভক্তি এবং আন্তরিকতাই মা সরস্বতীর কৃপা লাভের জন্য যথেষ্ট।

পূজার মাধ্যমে জীবনের উন্নতি: মা সরস্বতীর আশীর্বাদ আমাদের জীবনের সমস্ত বাধা দূর করে আলোর পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। তাই, যতটুকু সামর্থ্য আছে তা দিয়েই পূজা করুন এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নতি ও সাফল্য অর্জনের জন্য তাঁর আশীর্বাদ প্রার্থনা করুন। মা সরস্বতীর কৃপায় আপনার জীবন আলোকময় হোক এবং সাফল্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হোক।

সূচিপত্র

সরস্বতী পূজার ফর্দ দ্রব্য

সিঁদুর, পুরোহিতবরণ, তিল, হরতকী, পঞ্চগুঁড়ি, পঞ্চশষ্য, পঞ্চরত্ন, পঞ্চপল্লব, ঘট, কুণ্ডহাঁড়ি, তেকাঠা, দর্পণ, তীরকাঠি ৪টি, বেষ্টনীসূত্র, ঘটাচ্ছাদন গামছা, বরণডালা, সশীষ ডাব, এক সরা আতপ চাউল, পুষ্পাদি, আসনাঙ্গুরীয়ক, মধুপর্কের বাটি, নৈবেদ্য, কুচা নৈবেদ্য, সরস্বতী শাটী,নারায়ণের ধুতি, চাঁদমালা, বিল্বপত্রমালা, থালা, গেলাস, শঙ্খ, লৌহ, নথ, রচনা, আমের মুকুল, যবের শীষ, কুল, বাসক ফুল, আবির, অভ্র, মস্যাধার ও লেখনী। হোমের দ্রব্যাদি: বালি, খড়কে, গব্যঘৃত ২৫০ গ্রাম, পান, পানের মশলা, হোমের বিল্বপত্র ২৮টি, পাকা কলা ৬টি, কর্পূর, পূর্ণপাত্র ও দক্ষিণা।

জলপাত্র বা মৃৎপাত্র, দর্পণ,দোয়াত কলম ও পঞ্চপল্লব, তীরকাঠি, সূত্র বেষ্টনী, ঘট ও সশীষ ডাব, তেকাঠি, বস্ত্ৰাদি,শীর্ষচক্র, কাঁসর ও লাঠি, চামর,পিতলের স্ট্যাণ্ডে শঙ্খ, চাঁদমালা,সিংহাসনে শালগ্রাম শিলা,পুরোহিতবরণ ধুতি, পূজারীর কোষাকুষি, পুষ্পপাত্র,মিষ্টান্ন,আতপ চাউল নৈবেদ্য-সন্দেশ, কাটা ফল প্রসাদ,পঞ্চপ্রদীপ, গঙ্গাজলের ঘটি, ধূপদানি, ঘণ্টা, কর্পূর দানি, হোমকুণ্ড, মধুপর্কের বাটি, পিতলের ও মাটির প্রদীপ, পঞ্চামৃতের পাথরবাটি, পঞ্চগব্যের মৃৎপাত্র, পুস্তকাদি, ডায়েরী, খাতাপত্র, আলতা, সিঁদুর, ধূপ, দেশলাই, ঘি, মধু, পঞ্চশষ্য, আটকলাই ইত্যাদি, পূজারীর আসন, প্রশস্তি পাত্র বা বরণডালা, তাম্রকুণ্ড, ঘটাচ্ছাদন গামছা

সরস্বতী পূজা পদ্ধতির আচমন বিধি।

দুই পা এবং দুই হাত ধুইয়া আসনে উপবেশন করিবে। অতঃপর গোকর্ণের (গরুর কান) ন্যায় হাতের তেলো করিয়া, একটি মাষকলাই ডুবিতে পারে, এতটুকু পরিমাণ জল লইয়া (অধিক বা অল্প পরিমাণ নহে) তাহা দর্শন করতঃ পান করিবে। এইরূপ তিনবার করিবে। পরে হাত ধুইয়া মস্তকে ও পদে জলের ছিটা দিবে, দক্ষিণ হস্তের বাঁকানো অঙ্গুষ্ঠ, তর্জনী ও মধ্যমা এই তিন অঙ্গুলি মিলিত করিয়া মুখ স্পর্শ করিবে, অঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনী দ্বারা নাসিকা স্পর্শ করিয়া, তৎপরে অঙ্গুষ্ঠ ও অনামিকা দ্বারা চক্ষুদ্বয় ও তৎপরে কর্ণদ্বয় পুনঃ পুনঃ স্পর্শ করিবে। তৎপরে অঙ্গুষ্ঠ ও কণিষ্ঠাঙ্গুলি মিলনে নাভিদেশে এবং হস্ততল দ্বারা হৃদয় স্পর্শ করিবে, পরে সমস্ত অঙ্গুলি দ্বারা মস্তক এবং অঙ্গুলির অগ্রভাগ দ্বারা বাহুদ্বয় স্পর্শ করিবে।

বিষ্ণুস্মরণ মন্ত্র।

ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণু
ওঁ তদ্‌বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ। দিবীব চক্ষুরাগতম্। 
ওঁ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যং বরেণ্যং বরদং শুভং নারায়ণং নমস্কৃত্যং সর্বকর্মানি কারয়েৎ।
ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণু
ওঁ শঙ্খচক্রধরং বিষ্ণুঃ দ্বিভূজং পীতবাসসম্। প্রারম্ভে কর্মনাং বিপ্রঃ পুণ্ডরীকং স্মরেৎ হরিম্।
ওঁ শ্রীহরি ওঁ শ্রীহরি ওঁ শ্রীহরি।
নমো অপবিত্রঃ পবিত্রবা সর্বাবস্থাং গতোঽপিবা।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং সবাহ্যাভ্যন্তরং শুচিঃ।
নমো শুচিঃ নমো শুচিঃ নমো শুচিঃ।
ওঁ মাধবো মাধবো বাচি, মাধবো হৃদি স্মরন্তি মাধবঃ সর্বে সর্বকার্যেষু মাধবঃ।
ওঁ শ্ৰীমাধবঃ ওঁ শ্ৰীমাধবঃ ওঁ শ্ৰীমাধবঃ।

সরস্বতী পূজায় জলশুদ্ধি মন্ত্র।

সরস্বতী পূজা অঙ্কুশমুদ্রা

অঙ্কুশমুদ্রা দ্বারা কোশার জলে তীর্থ আবাহন করিয়া পাঠ করিবে,
ওঁ গঙ্গে চ যমুনেচৈব গোদাবরী সরস্বতী।
নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু।

সূর্য অর্ঘ্য বিধি ও দান মন্ত্র।

কুশীতে তিল তুলসী গঙ্গাজল দূর্বা রক্তচন্দন সহ জবা পুষ্প লইয়া – বিষ্ণুরোম তৎসদ অদ্য মাঘমাসি শুক্লপক্ষে পঞ্চম্যাং তিথৌ অমুক গোত্রেন ( যিনি পূজা করছেন তেনার গোত্র বলিবেন) ময়া অমুক দেবশর্মণঃ ( যিনি পূজা করছেন তেনার নাম বলিবেন) কায়িক বাচিক মানসিক সাংসারিক চতুর্বিধ পাতক দূরিত ক্ষয়দ্বারা আত্মশুদ্ধিপূর্বক কর্মফলসিদ্ধার্থং সূর্যার্ঘদানারম্ভ ক্রিয়তে শুভম ভবতু। ওঁ নম বিবস্বতে ব্রহ্মণ ভাস্বতে বিষ্ণু তেজসে জগৎপবিত্রে শুচয়ে কর্মদায়িনে, ইদং অর্ঘম্ ওঁ নমঃ শ্ৰীসূৰ্য্যায় নমঃ।

সূর্য প্ৰণাম মন্ত্র:

লোকেশ ত্বং জগচ্চক্ষু সৎকর্মং তব ভাসিতম্ করোমি তঞ্চ নির্বিঘ্নং পূর্ণমস্তু তদর্চ্চনাৎ। ওঁ জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্, ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।

গায়ত্রীপাঠ মন্ত্র।

ওঁ ভূর্ভুবঃস্বঃ তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ।

গুরুস্মরণ বিধি ও মন্ত্র।

নিম্নলিখিত মন্ত্র পাঠে নিজ গুরু স্মরণ করিবে।
অখণ্ডমণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্। 
তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।
অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জনশলাকয়া। 
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ॥
গুরুব্রহ্মা গুরুবিষ্ণুঃ গুরুদেবো মহেশ্বরঃ।
গুরুরেব পরংব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ॥

পূজায় আসনশুদ্ধি মন্ত্র ও বিধি

ভূমিতে ত্রিকোণমণ্ডল অঙ্কন করিয়া-
“ওঁ আধারশক্তয়ে কমলাসনায় নমঃ” মন্ত্রে পূজা করিয়া মণ্ডলোপরি আসন স্থাপন করতঃ আসন স্পর্শ করিয়া পাঠ্য,যথা-“অস্য আসনোপবেশনমন্ত্রস্য মেরুপৃষ্ঠঋষিঃ সুতলং ছন্দঃ কুৰ্ম্মোদেবতা আসনোপবেশনে বিনিয়োগঃ। ওঁ পৃথ্বিত্বয়া ধৃতালোকা দেবিত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা। ত্বঞ্চ ধারয় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরুচাসনম্৷৷” (বামে) “ওঁ গুরুভ্যো নমঃ, ওঁ পরমগুরুভ্যো নমঃ, ওঁ পরাপরগুরুভ্যো নমঃ”, ওঁ পরমেষ্টিগুরুভ্যো নমঃ”, (দক্ষিণে) “ওঁ গণেশায় নমঃ”,(উর্দ্ধে) ওঁ ব্রহ্মণে নমঃ, (অধঃ) ওঁ অনন্তায় নমঃ, (মধ্যে) “ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবতায়ৈ নমঃ।”

করশুদ্ধি মন্ত্র ও বিধি

অতঃপর “ঐং বং অস্ত্রায় ফট্” মন্ত্রে গন্ধপুষ্প দ্বারা করতল দ্বয় (হাত) শোধন করে ছোটিকার দ্বারা (তুড়ি) দশদিগ্বন্ধন করতঃ পুষ্পশুদ্ধি করিবে।

পূজায় পুষ্পশুদ্ধি মন্ত্র।

পুষ্পে পূজনীয় দেবতার আবির্ভাব চিন্তা করিয়া,- “পুষ্পকেতু রাজাইতে শতায় সম্যক সম্বন্ধায় হূং” মন্ত্রে পুষ্প স্পর্শ করিয়া
ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুষ্পে পুষ্পসম্ভবে।
পুষ্পচয়াবকীর্ণে চ হুঁম্ ফট্ স্বাহা।।”

এই মন্ত্রে পুষ্প শোধন করিবে।

পঞ্চগব্য শোধনমন্ত্র।

  • গোমুত্র – ওঁ ভূর্ভুবঃস্বঃ তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ। ওঁ
  • গোময় – ওঁ গাবশ্চিদ্ ঘা সমন্যবঃ, সজাত্যেন মরুতঃ- সবন্ধবঃ। রিহতে ককুভো মিথঃ।
  • দুগ্ধ – ওঁ গব্যো ষু নো যথা পুরোশ্বয়োত রথয়া। বরিবস্যা -মহোনাম্৷৷
  • দধি – ওঁ দধিক্ৰাণো অকারিষং জিষ্ণোরশ্বস্য বাজিনঃ। সুরভি নো মুখাকরোৎ প্র ণ আয়ুংষি তারিষৎ৷
  • ঘৃত – ওঁ ঘৃতবর্তী ভুবনানামভিশ্রিয়োবী, পৃথ্বি মধুদুঘে সুপেশসা। দ্যাবা পৃথিবী বরুণস্য ধর্মণা বিষ্কভিতে অজরে ভূরিরেতসা-
  • কুশোদক – ওঁ দেবস্য তা সবিতুঃ প্রসবেঽশ্বিনোবাহুভ্যাং পূষ্ণো হস্তাভ্যাং গৃহামি” অতঃপর গায়ত্রী পাঠ করিয়া একীকরণ করিবে।

পঞ্চামৃত শোধনমন্ত্ৰ।

  • দুগ্ধ – ওঁ গব্যো ষু নো যথা পুরোশ্বয়োত রথয়া। বরিবস্যা-মহোনাম্৷
  • দধি – ওঁ দধিক্ৰাণো অকারিষং জিঞ্চোরশ্বস্য বাজিনঃ। সুরভি নো মুখাকরোৎ প্র ণ আয়ুংষি তারিষৎ৷
  • ঘৃত – ওঁ ঘৃতবর্তী ভুবনানামভিশ্রিয়োবী, পৃথ্বি মধুদুঘে সুপেশসা। দ্যাবা পৃথিবী বরুণস্য ধর্মণা বিষ্কভিতে অজরে ভূরিরেতসা-
  • শর্করা – ওঁ দৌরাপঃ কনিক্রদং সিন্ধোরাপো মরুতো মাদয়ন্তাং ঘৰ্ম্মজ্যোতিঃ।-
  • মধু – ওঁ মধুবাতা ঋতায়তে মধুক্ষরন্তি সিন্ধবঃ। মাধ্বীর্ণঃ সন্তোষধীঃ। ওঁ মধু নক্তোমুতোষসো মধুমৎ পার্থিবং রজঃ। মধু দ্যৌরস্তু নঃ পিতা। ওঁ মধুমান্নো বনস্পতিমধুমাঁ অস্ত্ৰ সূৰ্য্যঃ। মাধ্বীর্গাবো ভবন্তু নঃ। ওঁ মধু ওঁ মধু ওঁ মধু৷

বেদীশোধন মন্ত্র।

কুশোদক দ্বারা বেদীতে জলের ছিটা দিয়া পাঠ করিবে — ওঁ দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসবেঽশ্বিনোৰ্ব্বাহুভ্যাং পূষ্ণো হস্তাভ্যামাদদে৷ ওঁ বেদ্যা বেদিঃ সমাপ্যতে বহিষা বহিরিন্দ্রিয়ম্। যূপেন যূপ আপ্যায়তাং প্রণীতো অগ্নিরগ্নিনা

দেবী স্বরসতী পূজায় স্বস্তিবাচন মন্ত্র।

তাম্রপাত্রে (কুশীতে) আতপতণ্ডুল (আতপ চাল) লইয়া স্বস্তিবাচন করিবে,যথা –
“কৰ্ত্তব্যেহস্মিন্  গণেশাদিনানাদেবতাপূজাপূর্ব্বক
শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবী মস্যাধারলেখনীপূজাকর্ম্মণি
ওঁ পুণ্যাহং ভবন্তোঽধিব্রুবন্তু, ওঁ পুণ্যাহং ভবন্তোঽধিক্রবস্তু, ও পুণ্যাহং ভবন্তোঽধিব্রুবন্তু। ওঁ পুণ্যাহম্, ওঁ পুণ্যাহ, ওঁ পুণ্যাহম্৷৷
ওঁ কৰ্ত্তব্যেহস্মিন্ন—–গণেশাদিনানাদেবতাপূজাপূর্ব্বক      শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবী মস্যাধার লেখনী পূজাকর্ম্মণি ওঁ স্বস্তি ভবন্তোঽধিক্ৰবন্তু, ওঁ স্বস্তি ভবন্তোঽধিক্রবস্তু, ওঁ স্বস্তি ভবন্তোঽধিক্রবস্তু। ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি॥
ওঁ কৰ্ত্তব্যেহস্মিন্—–গণেশাদিনানাদেবতা পূজাপূর্ব্বক–শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবী মস্যাধারলেখনীপূজাকর্ম্মণি ঋদ্ধিং
ওঁভবন্তোঽধিধ্রুবন্তু, ওঁ ঋদ্ধিং ভবন্তোঽধিক্রবস্তু, ওঁ ঋদ্ধিং ভবন্তোঽধিক্ৰবন্তু।
ওঁ ঋধ্যতাম, ওঁ ঋধ্যতাম, ওঁ ঋধ্যতাম্॥”
মন্ত্রপাঠ করিয়া আতপচাউল বিকীরণ করিবেন স্ববেদোক্ত সূক্তপাঠ করিবে।

স্বস্তিসূক্ত (সাম)

“ওঁ সোমং রাজানাং বরুণমগ্নিমন্বারভামহে।
আদিত্যং বিষ্ণুং সূর্য্যং ব্রহ্মাণঞ্চ বৃহস্পতিম্।
ওঁ স্বস্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ। স্বস্তি নস্তাক্ষো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতিদধাতু ৷৷ ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি।”

পরে কৃতাঞ্জলি হইয়া সাক্ষ্যমন্ত্ৰ পাঠ করিবে।

সাক্ষ্যমন্ত্র

“ওঁ সূৰ্য্যঃ সোমো যমঃ, কালঃ সন্ধ্যে ভূতান্যহ ক্ষপা। পবনো দিকপতির্ভুমিরাকাশং খচরামরাঃ।
ব্রাহ্মং শাসনমাস্থায় কল্পধ্বমিহ॥”
*স্ত্রী ও শূদ্রপক্ষে সর্বত্র কেবল, “স্বস্তি” শব্দ প্রয়োগ করিবে। “পুণ্যাহং, সন্নিধিম্ ও ঋদ্ধিং” এই শব্দ “ওঁ” এইমন্ত্র উচ্চারণ করিবে না। “ওঁ” পরিবর্তে “নমঃ” শব্দ প্রয়োগ হইবে।

স্বরসতী পূজায় বরণ করার নিয়ম

কর্তা স্বয়ং পূজাকরণে অশক্ত হইলে পূজক ও তন্ত্রধারক বরণ করিবে। কর্তা পূর্বাস্যে এবং বৃত ব্রাহ্মণ উত্তরাস্যে উপবেশন করিবে। কৰ্ত্তা কৃতাঞ্জলি হইয়া বলিবে “ওঁ সাধুভনাস্তাম্।” বৃত ব্রাহ্মণ বলিবে “ওঁ সাধ্ব হমাসে।” কৰ্ত্তা বলিবে “ওঁ অৰ্চ্চয়িষ্যামো ভবন্তম্।” ব্রাহ্মণ বলিবে “ওঁ অৰ্চ্চয়।” কৰ্ত্তা গন্ধপুষ্প, যজ্ঞোপবীত ও বস্ত্রাঙ্গুরীয়ক গ্রহণ করিয়া “এতানি গন্ধপুষ্পবস্ত্রাঙ্গুরীয়কযজ্ঞোপবীতানি ও ব্রাহ্মণায় নমঃ” মন্ত্রে ব্রাহ্মণকে দান করিবে। ব্রাহ্মণ বলিবে “ওঁ স্বস্তি।”

পরে কর্তা আতপচাউল লইয়া ব্রাহ্মণের দক্ষিণজানু স্পর্শ করিয়া বরণবাক্য পাঠ করিবে – যথা,- “বিষ্ণুৱোঁ তৎসদদ্য মাঘেমাসি শুক্লেপক্ষে শ্রীপঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশৰ্ম্মা মৎসঙ্কল্পিত শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবী লেখনী-ম -মস্যাধার-পূজাকর্ম্মণি পূজককৰ্ম্ম (তন্ত্রধারককর্ম্ম)—করণায়—অমুকগোত্রং অমুকদেবশৰ্ম্মাণমেভির্গন্ধাদিভিরভ্যর্চ্চ ভবন্তমহং বৃণে।” বৃত ব্রাহ্মণ বলিবে “বৃতোহস্মি।” কৰ্ত্তা কৃতাঞ্জলি হইয়া বলিবে, “ওঁ যথাবিহিত পূজককর্ম্ম (তন্ত্রধারককর্ম্ম) কুরু।” ব্রাহ্মণ বলিবে “ওঁ যথাজ্ঞানং করবাণি৷” অতঃপর সঙ্কল্প করিবে।

স্বরসতী পূজায় সঙ্কল্প করার নিয়ম

তাম্রপাত্র কুশ, তিল, ফল (হরিতকী), পুষ্প ও জলাদির দ্বারা পূর্ণ করতঃ পাতিত দক্ষিণজানু হইয়া পূৰ্ব্বাস্যে বা উত্তরাস্যে উপবেশন করিয়া সঙ্কল্প করিবে, যথা-
“বিষ্ণুরোঁ তৎসদদ্য মাঘেমাসি শুক্লেপক্ষে শ্রীপঞ্চমান্তিথৌ–অমুকগোত্রঃ(কর্তার গোত্র)–শ্রীঅমুকদেবশর্ম্মা–অমুককামঃ(কর্তার নাম) গণেশাদিনানাদেবতা পূজাপূর্ব্বক শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবী লেখনী মস্যাধার-পূজককর্ম্মাহং করিষে (পরার্থে “অমুকগোত্রস্য শ্রীঅমুকস্য করিষ্যামি”)। অতঃপর স্ববেদোক্ত সঙ্কল্পসূক্ত পাঠ্য।

সঙ্কল্পসূক্ত

“ওঁ দেবো বো দ্রবিণোদাঃ পূর্ণাং বিষ্টাসিচম্। উদ্বা সিঞ্চধ্বমুপবা পূণধ্বমাদিদ্বো দেব ওহতে৷৷ ওঁ অস্য সঙ্কল্পিতার্থস্য সিদ্ধিরস্তু।
ওঁ অয়মারম্ভ শুভায় ভতু।”

সামান্যার্ঘ্য

ভূমিতে ত্রিকোণমণ্ডল করিয়া মণ্ডলে “ওঁ আধারশক্তয়ে নমঃ, ওঁ কূৰ্ম্মায় নমঃ, ওঁ অনন্তায় নমঃ, ওঁ পৃথিব্যৈ নমঃ” মন্ত্রে গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করিয়া “ফট্” মন্ত্রে প্রোক্ষণীপাত্র (কোশা) প্রক্ষালন করতঃ মণ্ডলোপরি স্থাপন করিবে। পরে (ঐং) মূলমন্ত্রে অথবা ওঁ মন্ত্রে পাত্র জলপূর্ণ করিয়া “ওঁ অং অর্কমণ্ডলায় দ্বাদশকলাত্মনে নমঃ” ওঁ উং সোমমণ্ডলায় ষোড়শকলাত্মনে নমঃ, ওঁ মং বহ্নিমণ্ডলায় দশকলাত্মনে নমঃ” মন্ত্রে পূজা করিয়া পাত্রস্থ জলে গন্ধপুষ্পাদি প্রদান করতঃ ধেনুমুদ্রা, যোনিমুদ্রা, অবগুণ্ঠনমুদ্রা ও মৎস্যমুদ্রা প্রদর্শন করতঃ অঙ্কুশমুদ্রায় “ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি, নর্মদে, সিন্ধু, কাবেরী, জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু।”
মন্ত্রে তীর্থাবাহন করিয়া পাত্রস্থ জল দ্বারা পূজোপকরণ ও নিজেকে অভ্যুক্ষণ করিয়া দ্বারপূজা করিবে।

সরস্বতী পূজার মুদ্রা

দ্বারপূজা

জলদ্বারা “ফট্” মন্ত্রে দ্বারদেশ অভ্যুক্ষণ করতঃ দ্বারদেবতাগণের আবাহন করিয়া পূজা করিবে, যথা- “এতে গন্ধপুষ্পে ও গাং গণেশায় নমঃ” এইক্রমে “ওঁ মহালক্ষ্ম্যৈ নমঃ, ওঁ সরস্বত্যৈ নমঃ, ওঁ বিঘ্নায় নমঃ, ওঁ ক্ষেত্রপালায় নমঃ, ওঁ গাং গঙ্গায়ৈ নমঃ, ওঁ যাং যমুনায়ৈ নমঃ, ওঁ অস্ত্রায় নমঃ।” অশক্তপক্ষে “ওঁ দ্বারদেবতাগণেভ্যো নমঃ” পরে বিঘ্নাপসারণ করতঃ মাষভক্তবলি প্রদান করিবে।

বিঘ্নাপসারণ

মূলমন্ত্রে (ঐং) দিব্যদৃষ্টিদ্বারা দিব্যবিঘ্ন, “ওঁ অস্ত্রায় ফট্” মন্ত্রে অন্তরীক্ষের বিঘ্ন ও ভূমিতে বামপদের গোড়ালী দ্বারা তিনবার আঘাত করিয়া ভৌমবিঘ্ন অপসারণ করিবে।

মাষভক্তবলি

ভূমিতে স্ববামে ত্রিকোণমণ্ডল অঙ্কিত করিয়া তদুপরি নূতন মৃৎপাত্রে বা বিল্বপত্রে মাষকলাই, দধি ও আতপচাউল একত্র করতঃ স্থাপন করিবে। পরে ভূতগণের আবাহন করিবে, যথা- “ওঁ ভূতাদয় ইহাগচ্ছত ইহাগচ্ছত, ইহতিষ্ঠত ইহতিষ্ঠত, ইহসন্নিধত্ত ইহসন্নিরুধ্যধ্বম, অত্রাধিষ্ঠানং কুরুত মম পূজাং গৃহীত৷৷” অতঃপর

“বং এতস্মৈ মাষভক্তবলয়ে নমঃ” মন্ত্রে শোধন, “এতে গন্ধপুষ্পে ও মাষভক্তবলয়ে নমঃ, এতদধিপতয়ে ওঁ শ্রীবিষ্ণবে নমঃ,” মন্ত্রে অর্চ্চনা করিয়া- “এষ মাষভক্তবলি ওঁ ভূতাদিভ্যো নমঃ” মন্ত্রে উৎসর্গ করিবে।

পরে কৃতাঞ্জলি হইয়া পাঠ্য- “ওঁ ভূতাঃ প্রেতাঃ পিশাচাশ্চ তে বসন্ত্যত্র ভূতলে। তে গৃহ্নন্তু ময়াদত্ত বলিরেষ প্রসাধিতঃ। পূজিতা গন্ধপুষ্পাদ্যৈবলিভিস্তাপিতাস্তথা। দেশাদস্মাৎ বিনিঃসৃত্য পূজাং পশ্যন্ত মৎকৃতাম্৷৷ এষ মাষভক্তবলিঃ ওঁ ভূতাদিভ্যো নমঃ।

ওঁ ভূতাদয়ঃ ক্ষমধ্বম্৷৷” অতঃপর কিছু অক্ষত বা শ্বেতসর্ষপ গ্রহণ করিয়া- “ওঁ অপসৰ্গন্তু তে ভূতা যে ভূতা ভুবি সংস্থিতা। যে ভূতা বিঘ্নকর্তারস্তে নশ্যন্ত শিবাজ্ঞয়া ৷৷ ওঁ বেতালাশ্চ পিশাচাশ্চ রাক্ষসাশ্চ সরীসৃপাঃ। ওঁ অপসপন্ত তে সৰ্ব্বে চণ্ডিকাস্ত্রেণ তাড়িতাঃ ।” মন্ত্র পাঠ করতঃ “ফট্” মন্ত্রে দশদিকে ছড়াইয়া দিবে।

প্রাণায়াম

প্রথমে ডান নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস টেনে ভেতরে বায়ু ভরুন এবং মূল মন্ত্র “ঐং” ষোড়শ(১৬)বার জপ করুন। এরপর দুই নাসারন্ধ্র বন্ধ করে চতুষষ্ঠি (৬৪) বার মন্ত্র জপ করতে করতে শ্বাস ধরে রাখুন। পরে ডান নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন এবং এটি দ্বাত্রিংশ (৩২) বার মন্ত্র জপের সময় নিন।

এরপর প্রক্রিয়াটি উল্টোভাবে করুন। ডান নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস টেনে ভেতরে বায়ু ভরুন, দুই নাসা বন্ধ করে কুম্ভক করুন এবং বাঁ নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস ছেড়ে দিন। তারপর বাঁ নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস টেনে ভেতরে বায়ু ভরুন, কুম্ভক করুন এবং ডান নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস ছেড়ে দিন।

এই প্রক্রিয়া তিনবার করলে একবার প্রাণায়াম সম্পন্ন হয়। পূর্ণ প্রাণায়ামের জন্য শ্বাস টানার সময় (পূরক) ষোড়শবার, শ্বাস ধরে রাখার সময় (কুম্ভক) চতুষষ্ঠিবার এবং শ্বাস ছাড়ার সময় (রেচক) দ্বাত্রিংশবার জপ করতে হয়।

যদি এত দীর্ঘ জপ সম্ভব না হয়, তাহলে ষোড়শ(১৬)বারের পরিবর্তে চার(৪)বার, চতুষষ্ঠি(৬৪)বারের পরিবর্তে ষোড়শ(১৬)বার এবং দ্বাত্রিংশ(৩২)বারের পরিবর্তে আট(৮)বার জপ করলেও প্রাণায়াম সিদ্ধ হয়। এই প্রক্রিয়া শেষ করার পর ভূতশুদ্ধি করতে হবে।

ভূতশুদ্ধি নির্দেশাবলী

এইগুলি মনোযোগ সহকারে বিশেষভাবে চিন্তা করিবে। ‘রং’ মন্ত্রে জলের ধারা দিয়া বহ্নিপ্রাকার (যেন চতুর্দিকে বহ্নি দ্বারা বেষ্টিত স্থানে বসিয়া আছি) এইরূপ চিন্তা করতঃ চিত্তাবে হস্তদ্বয় উপুর্যুপরি (ক্রোড়ে) রাখিয়া ‘সোহহং’ এই মন্ত্রে হৃৎপ্রদেশস্থ দীপকলিকাকার জীবাত্মাকে মূলাধারস্থিত কুলকুণ্ডলিনীর সহিত সুষুম্নাপথে মূলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মণিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ এবং আজ্ঞা নামক ষট্‌চক্র (চতুর্দল, ষড়দল, দশদল, দ্বাদশদল, ষোড়ষদল, ও দ্বিদলপদ্ম) ভেদ করিয়া শিরোঽবস্থিত অধোমুখ সহস্রদল কমলের কর্ণিকামধ্যস্থ পরমাত্মাতে সংযোগ করিয়া তথায় দৈহিক পৃথিবী, জল, তেজ, বায়ু, আকাশ, গন্ধ, রূপ, রস, স্পর্শ, শব্দ, নাসিকা, জিহ্বা, চক্ষু, ত্বক, কর্ণ, বাক্, হস্ত, পদ, পায়ু, উপস্থ, প্রকৃতি, মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার, এই চতুর্বিংশতি তত্ত্বকে বিলীন ভাবনা করিয়া তৎপরে অঙ্গুষ্ঠদ্বারা বামনাসাপুট রোধ করিয়া ‘যং’ এই ধূম্রবর্ণ বায়ুবীজ চিন্তা করিয়া প্রাণায়ামানুসারে ১৬ বার জপ করতঃ বামনাসা দ্বারা সমস্ত দেহ বায়ুতে আপূরণ করিবে। পরে উভয় নাসা টিপিয়া ধরিয়া ঐ ‘যং’ বীজটী ৬৪ বার জপ করিতে করিতে কৃষ্ণবর্ণ পাপপুরুষের সহিত নিজদেহ শোষণ চিন্তা করিবে। তৎপরে ঐ ‘যং বীজ ৩২ বার জপে দক্ষিণনাসা দ্বারা বায়ু ত্যাগ করিবে।

পরে দক্ষিণনাসাপুটে ‘রং’ রক্তবর্ণ এই বহ্নিবীজ চিন্তা করিয়া ১৬ বার জপপূর্বক বায়ুদ্বারা দেহ পূরণ করিবে এবং ৬৪ বার জপে কুম্ভক করিয়া মূলাধারস্থিত বহ্নিদ্বারা কৃষ্ণবর্ণ পাপপুরুষ সহিত দগ্ধ চিন্তা করিয়া পুনরায় বত্রিশবার জপে বামনাসা দ্বারা দগ্ধীভূত পাপপুরুষের ভষ্মের সহিত বায়ু পরিত্যাগ করিবে।

পরে ‘ঠং’ এই চন্দ্রবীজ শুক্লবর্ণ চিন্তা করিয়া ১৬ বার জপে পূর্বরূপ দেহ পূরণপূর্বক ‘বং’ এই বরুণবীজ ৬৪ বার জপে কুম্ভক করিয়া ললাটে চন্দ্র আনয়ন করিয়া চন্দ্রবিগলিত মাতৃকাবর্ণাত্মিকা সুধা দ্বারা সমস্ত দেহ পুনরায় রচনা করিবে। পরে ‘লং’ পৃথ্বীবীজটিকে চিন্তা করিয়া ৩২ বার জপে দেহকে সুদৃঢ় চিন্তা করিয়া দক্ষিণনাসা দ্বারা বায়ু ত্যাগ করিবে। অনন্তর হংসঃ এই মন্ত্রে জীবাত্মাকে বিলীন কুলকুণ্ডলিনী সহ চতুর্বিংশতি তত্ত্বকে স্ব স্ব স্থানে স্থাপন করিয়া নিজ শরীরকে অভীষ্টদেবের সদৃশ চিন্তা করিবে।

প্রাণায়ামের অনুক্রমানুসারে ভূতশুদ্ধি করিতে হয়। 

মাতৃকান্যাস

অস্য মাতৃকামন্ত্রস্য ব্রহ্মঋষিগায়ত্রীচ্ছন্দো মাতৃকাসরস্বতীদেবতা হলোবীজানি স্বরাঃ শক্তয়ঃ মাতৃকান্যাসে বিনিয়োগঃ ॥
শিরসি-ওঁ ব্রহ্মণে ঋষয়ে নমঃ । মুখে- ওঁ গায়ত্র্যৈছন্দসে নমঃ।
হৃদি—ওঁ মাতৃকা-সরস্বত্যৈদেবতায়ৈ নমঃ।
গুহ্যে-ওঁ হভ্যো বীজেভ্যো নমঃ।
পাদয়োঃ-ওঁ স্বরেভ্যো শক্তিভ্যো নমঃ। সৰ্ব্বাঙ্গে—ওঁ অব্যক্তায় কীলকায় নমঃ।

করন্যাস

ওঁ অং কং খং গং ঘং ঙং আং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ। 
ওঁ ইং চং ছং জং ঝং ঞং ঈং তর্জনীভ্যাং স্বাহা।
ওঁ উং টং ঠং ডং ঢং ণং উং মধ্যমাভ্যাং বষট্। 
ওঁ এং তং থং দং ধং নং ঐং অনামিকাভ্যাম হুঁ। 
ওঁ ওং পং ফং বং ভং মং ঔং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট্।
ওঁ অং যং রং লং বং শং ষং সং হং লং ক্ষং অঃ অস্ত্রায় ফট্।

অঙ্গন্যাস

ওঁ অং কং খং গং ঘং ঙং আং হৃদয়ায় নমঃ। 
ওঁ ইং চং ছং জং ঝং ঞং ঈং শিরসে স্বাহা।
ওঁ উং টং ঠং ডং ঢং ণং উং শিখায়ৈ বষট্। 
ওঁ এং তং থং দং ধং নং ঐং কবচায় হুঁ।
ওঁ ওং পং ফং বং ভং মং ঔং নেত্রত্রয়ায় বৌষট্।
ওঁ অং যং রং লং বং শং ষং লং হং সং ক্ষং অঃ অস্ত্রায় ফট্।

অন্তর্মাতৃকান্যাস

অং আং ইং ঈং উং উং ঋং ঋতং ৯ং ৯৯ং
এং ঐং ওং ঔং অং অঃ ইতি কণ্ঠে।
কং খং গং ঘং ভং চং ছং জং ঝং ঞং টং ঠং ইতি হৃদয়ে। 
ডং ঢং ণং তং থং দং ধং নং পং ফং ইতি নাভৌ।
বং ভং মং যং রং লং ইতি লিঙ্গমূলে।
বং শং ষং সং ইতি মূলাধারে।
হং ক্ষং ইতি ভ্রমধ্যে।

বাহ্যমাতৃকান্যাস

“ওঁ পঞ্চাশল্লিপিভির্বিভক্তমুখদোঃ পদ্মধ্যবক্ষঃস্থলাং ভাস্বন্মৌলিনিবদ্ধচন্দ্রশকলামাপীনতুঙ্গস্তনীম্। 
মুদ্রামক্ষগুণং সুধাঢ্যকলসং বিদ্যাঞ্চ হস্তাম্বুজৈৰ্ব্বিভ্রাণাং বিশদপ্রভাং ত্রিনয়নাং বাগদেবতামাশ্রয়ে৷
সর্বত্রই ওঁ পদ আদিতে বলা ভাল।
অং নমঃ (ললাটে), আং নমঃ (মুখবৃত্তে), ইং ঈং নমঃ (চক্ষুয়োঃ), উং ঊং নমঃ (কর্ণয়োঃ), ঋং ঋতং নমঃ (নাসাঃ), ৯ং ৯৯ং নমঃ (গগুয়োঃ), এং নমঃ (ওষ্ঠে), ঐং নমঃ (অধরে), ওং নমঃ (ঊর্দ্ধদন্তে), ঔং নমঃ (অধোদন্তে), অং নমঃ (মস্তকে), 
অঃ নমঃ (মুখে),
কং নমঃ (দক্ষবাহুমূলে), খং নমঃ (কূপরে), গং নমঃ ( মণিবন্ধে),
ঘং নমঃ (অঙ্গুলিমূলে), ঙং নমঃ ( অঙ্গুল্যগ্রে), চং নমঃ (বামবাহুমূলে),
ছং নমঃ (কূপরে), জং নমঃ ( মণিবন্ধে), ঝং নমঃ (অঙ্গুলিমূলে),
ঞং নমঃ (অঙ্গুল্যগ্রে), টং নমঃ (দক্ষিণোরুমূলে), ঠং নমঃ (জানুনি),
ডং নমঃ (গুলফে), ঢং নমঃ (অঙ্গুলিমূলে), ণং নমঃ (অঙ্গুল্যগ্রে),
তং নমঃ (বামোরুমূলে), থং নমঃ (জানুনি), দং নমঃ (গুলফে),
ধং নমঃ (অঙ্গুলিমূলে), নং নমঃ (অঙ্গুল্যগ্রে), পং নমঃ (দক্ষিণপার্শ্বে)
ফং নমঃ (বামপার্শ্বে), বং নমঃ (পৃষ্ঠে), ভং নমঃ (নাভৌ), মং নমঃ (উদরে), 
যং নমঃ (হৃদি), রং নমঃ (দক্ষিণ স্কন্ধে) লং নমঃ (ককুদি), বং নমঃ (বামস্কন্ধে), শং নমঃ (হৃদয়াদি দক্ষিণহস্তে) )
ষং নমঃ (হৃদয়াদিবামহস্তে), সং নমঃ (হৃদয়াদিদক্ষিণপাদে),
হং নমঃ (হৃদয়াদিবামপাদে), লং নমঃ (হৃদয়াদ্যুদরে), ক্ষং নমঃ (হৃদয়াদিমুখে)৷৷

সংহারমাতৃকান্যাস

ওঁ অক্ষস্রজং হরিণপোতমুদগ্রটঙ্কং, বিদ্যাং করৈরবিরতং দধতীং ত্রিনেত্রাম্।
অর্দ্ধেন্দুমৌলিমরুণামরবিন্দবাসাং বর্ণেশ্বরীং প্রণমত স্তনভারনম্রাম্॥
ক্ষং নমঃ-হৃদয়াদিমুখে, লং নমঃ- হৃদয়াদিজঠরে, হং নমঃ-হৃদয়াদিবামপাদাগ্রে, সং নমঃ-দয়াদিদক্ষিণপাদাগ্রে যং নমঃ-হৃদয়াদি-বামকরাগ্রে, শং নমঃ- হৃদয়াদিদক্ষিণকরাগ্রে, বং নমঃ – বামস্কন্ধে, লং নমঃ- ককুদি, রং নমঃ-দক্ষিণস্কন্ধে, যং নমঃ-হৃদি, মং নমঃ- উদরে, ভং নমঃ–নাভৌ, বং নমঃ-পৃষ্ঠে, ফং নমঃ– বামপার্শ্বে, পং নমঃ-দক্ষিণপার্শ্বে, নং নমঃ-
বামপাদাঙ্গুল্যগ্রে,ধং নমঃ-অঙ্গুলিমূলে, দং নমঃ-গুলফে, থং নমঃ-জানুনি, তং নমঃ-বামপাদমূলে, ণং নমঃ-দক্ষিণপাদাঙ্গুল্যগ্রে, ঢং নমঃ-অঙ্গুলিমূলে, ডং নমঃ-গুফে, ঠং নমঃ-জানুনি, টং নমঃ-দক্ষপাদমূলে, ঞং নমঃ-বামকরাঙ্গুল্যগ্রে, ঝং নমঃ-অঙ্গুলিমূলে, জং নমঃ-বামমণিবন্ধে, ছং নমঃ- কূপরে, চং নমঃ-বামবাহুমূলে, ঙ নমঃ-দক্ষিণ করাঙ্গুল্যগ্রে, ঘং নমঃ- অঙ্গুলিমূলে, গং নমঃ-দক্ষিণমণিবন্ধে, খং নমঃ-কূপরে, কং নমঃ- দক্ষিণবাহুমূলে, অঃ নমঃ-মুখে, অং নমঃ-মস্তকে, ঔং নমঃ-অধোদন্তপক্তৌ, ওং নমঃ–উর্দ্ধদন্তপক্তৌ, ঐং নমঃ-অধরে, এং নমঃ—ওষ্ঠে, ৯৯ং নমঃ-বামগণ্ডে, ৯ং নমঃ-দক্ষিণগণ্ডে, ঋং নমঃ-বামনাসাপুটে, ঋং নমঃ-দক্ষিণনাসাপুটে, উং নমঃ-বামকর্ণে, উং নমঃ-দক্ষিণকৰ্ণে, ঈং নমঃ-বামনেত্রে, ইং নমঃ-দক্ষিণনেত্রে, আং নমঃ-মুখবৃত্তে, অং নমঃ- ললাটে।

পীঠন্যাস

হৃদয়ে-ওঁ আধারশক্তয়ে নমঃ, ওঁ প্ৰকৃত্যৈ নমঃ, ওঁ কুৰ্ম্মায় নমঃ, ওঁ অনন্তায় নমঃ, ওঁ পৃথিব্যৈ নমঃ, ওঁ ক্ষীরসমুদ্রায় নমঃ, ওঁ শ্বেতদ্বীপায় নমঃ, ওঁ মণিমণ্ডপায় নমঃ, কল্পবৃক্ষায় নমঃ, ওঁ মণিবেদিকায়ৈ নমঃ, ওঁ রত্নসিংহাসনায় নমঃ।
দক্ষিণস্কন্ধে—ওঁ ধৰ্ম্মায় নমঃ। বামস্কন্ধে-ওঁ জ্ঞানায় নমঃ। বামোরুমূলে—ওঁ বৈরাগ্যায় নমঃ। দক্ষিণোরুমূলে—ওঁ ঐশ্বৰ্য্যায় নমঃ। মুখে-ওঁ অধর্ম্মায় নমঃ। বামপার্শ্বে-ওঁ অজ্ঞানায় নমঃ।
নাভৌ—ওঁ অবৈরাগ্যায় নমঃ। দক্ষিণপার্শ্বে ও অনৈশ্বৰ্য্যায় নমঃ।।
পুনহৃদয়ে-ওঁ অনন্তায় নমঃ, ওঁ পদ্মায় নমঃ, ওঁ অং অকমণ্ডলায় দ্বাদশকলাত্মনে নমঃ,
ওঁ উং সোমমণ্ডলায় ষোড়শকলাত্মনে নমঃ,ওঁ মং বহ্নিমণ্ডলায় দশকলাত্মনে নমঃ,
সং সত্ত্বায় নমঃ, রং রজসে নমঃ, তং তমসে নমঃ, আং আত্মনে নমঃ, অং অন্তরাত্মনে নমঃ, 
পং পরমাত্মনে নমঃ, হ্রীং জ্ঞানাত্মনে নমঃ।
ওঁ মেধায়ৈ নমঃ, ওঁ প্রজ্ঞায়ৈ নমঃ, ওঁ প্রভায়ৈ নমঃ,
ওঁ বিদ্যায়ৈঃ নমঃ, ওঁ শ্রিয়ে নমঃ, ওঁ ধৃত্যৈ নমঃ, ওঁ স্মৃত্যৈ নমঃ, ওঁ বুদ্ধ্যৈ নমঃ।
মধ্যে—ওঁ বিদ্বেশ্বর্য্যৈ নমঃ। তদুপরি—ওঁ বর্ণকমলাসনায় নমঃ ॥

ব্যাপকন্যাস

গন্ধপুষ্প লইয়া প্রণবপুটিত মূলমন্ত্র (ওঁ ঐং) উচ্চারণ করিতে করিতে মস্তক হইতে পাদদেশ পর্যন্ত এবং পাদদেশ হইতে মস্তক পর্য্যন্ত, অনন্তর নাভি হইতে হৃদয় পর্য্যন্ত উভয় কর দ্বারা সাতবার অথবা কমপক্ষে তিনবার ব্যাপকন্যাস করিবে।

ঋষ্যাদিন্যাস

অস্য শ্রীশ্রীসরস্বতীমন্ত্রস্য কণঋষিঃ বিরাড় গায়ত্রীচ্ছন্দঃ, শ্রীশ্রীবাগীশ্বরীদেবতা মম কবিত্বশক্তিবৃদ্ধয়ে
শ্রীশ্রীসরস্বতীপূজায়াঃ বিনিযোগঃ ॥
(শিরসি) “ওঁ কণ্বায় ঋষয়ে নমঃ।”
(মুখে) “ওঁ বিরাড়ু গায়ত্র্যৈচ্ছন্দসে নমঃ । ”
(হৃদি) “ওঁ বাগীশ্বর্য্যে দেবতায়ৈ নমঃ৷৷”

সরস্বতী ধ্যান মন্ত্র

“ওঁ তরুণশকলমিন্দোর্বিভ্রতী শুভ্রকান্তিঃ।
কুচভরণমিতাঙ্গী সন্নিষন্না সিতাজে৷ নিজকরকমলোদ্যল্লেখনী পুস্তকশ্রীঃ।
সকল বিভবসিদ্ধ্যৈ পাতু বাগদেবতা নমঃ৷৷” পরে মানসপূজা করতঃ বিশেষার্ঘ্য স্থাপন করিবে।

মানসপূজা

মূলাধার হইতে ব্রহ্মরন্ধ্র পর্য্যন্ত বিদ্যুদ্বর্ণা কুণ্ডলিনীশক্তিকে চিন্তা করিয়া স্বীয় হৃৎপদ্মে পূজনীয় দেবতাকে রত্নবেদীকার উপর সংস্থিত এইরূপ ভাবনা করতঃ। যথাক্রমে কুণ্ডলিনীপাত্রস্থ বারি পাদ্য, মনকে অর্ঘ্য, সহস্রদলস্থিত সুধাকে আচমনীয়, চতুৰ্ব্বিংশতি তত্ত্বাত্ত্বক অহিংসাদি নিৰ্ম্মলগুণসকলকে পুষ্প, প্রাণবায়ুকে ধুপ, তেজস্বরূপ দীপ, অমৃতরূপ নৈবেদ্য, আকাশরূপ চামর, সূর্য্যরূপ দর্পণ, চন্দ্ররূপ ছত্র এবং অনাহতধ্বনিতরূপ ঘণ্টা নিবেদন করিবে। 

বিশেষার্ঘ্য

স্ববামে ত্রিকোণমণ্ডল করতঃ তদুপরি ত্রিপদিকা স্থাপন করিয়া “ফট্” মন্ত্রে শঙ্খাদি অর্ঘ্যপাত্র স্থাপন করিয়া “নমঃ” মন্ত্রে পাত্রে গন্ধপুষ্পদূর্ব্বাক্ষতাদি স্থাপন করিবে। পরে বিলোমমাতৃকা পাঠ করতঃ জল দ্বারা শঙ্খ পূরণ করিবে, যথা- “ক্ষং হং সং যং শং বং লং রং যং মং ভং বং ফং পং নং ধং দং থং তং ণং ঢং ডং ঠং টং ঞং ঝং জং ছং চং ঙং ঘং গং খং কং অঃ অং ঔং ওং ঐং এং ৯৯ং ৯ং ঋতং ঋং উং উং ঈং ইং আং অং অঃ নমঃ।”

সরস্বতী পূজার মুদ্রা

অতঃপর মূলমন্ত্রে (ঐং) পুনরায় বিভাগ পূরণ করিবে। পরে শঙ্খাদি পাত্রে “ওঁ অকর্মণ্ডলায় দ্বাদশকলাত্মনে নমঃ”, জলে “ওঁ উং সোমমওলায় ষোড়শকলাত্মনে নমঃ”, ত্রিপদিকাতে “ওঁ মং বহ্নিমণ্ডলায় দশকলাত্মনে নমঃ”, গন্ধপুষ্পদ্বারা পূজা করিয়া অঙ্কুশমুদ্রায় “ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতী। নর্মদে সিন্ধুকাবেরি জলেহস্মিন্ সন্নিধিং কুরু৷” মন্ত্রে সূর্য্যমণ্ডল হইতে তীর্থাদির আবাহন করতঃ জলে দেবীর ধ্যান করিয়া “হুং মন্ত্রে অবগুণ্ঠন মুদ্রা, 

সরস্বতী পূজার মুদ্রা

সরস্বতী পূজার নিয়ম এ পীঠপূজা

গন্ধপুষ্প দ্বারা “এতে গন্ধপুষ্পে ও মণ্ডলায় নমঃ” মন্ত্রে সর্ব্বতোভদ্রমণ্ডলে বা অষ্টদলপদ্মে পূজা করিয়া উক্ত মণ্ডলে পীঠপূজা করিবে। যথা—ওঁ আধারশক্তয়ে নমঃ, প্রকৃত্যৈ নমঃ, ওঁ অনন্তায় নমঃ, ওঁ পৃথিব্যৈ নমঃ, ওঁ ক্ষীরসমুদ্রায় নমঃ, ওঁ শ্বেতদ্বীপায় নমঃ, ওঁ মণিমণ্ডপায় নমঃ, ওঁ কল্পবৃক্ষায় নমঃ, ওঁ মণিবেদীকায়ৈ নমঃ, রত্নসিংহাসনায় নমঃ।
অগ্ন্যাদিকোণচতুষ্টয়ে—ওঁ ধৰ্ম্মায় নমঃ। বামস্কন্ধে—ওঁ জ্ঞানায় নমঃ। বামোরুমূলে—ওঁ বৈরাগ্যায় নমঃ। দক্ষিণোরুমূলে-ওঁ ঐশ্বৰ্য্যায় নমঃ।
মুখে—ওঁ অধর্ম্মায় নমঃ। বামপার্শ্বে-ওঁ অজ্ঞানায় নমঃ। নাভৌ—ওঁ অবৈরাগ্যায় নমঃ। দক্ষিণপার্শ্বে-ওঁ অনৈশ্বর্যায় নমঃ। মধ্যে-ওঁ অনন্তায় নমঃ, ওঁ পদ্মায় নমঃ, ওঁ অকর্মণ্ডলায় দ্বাদশকলাত্মনে নমঃ, ওঁ উং সোমমণ্ডলায় ষোড়শকলাত্মনে নমঃ, ওঁ মং বহ্নিমণ্ডলায় দশকলাত্মনে নমঃ, ওঁ সং সত্ত্বায় নমঃ, ওঁ রং রজসে নমঃ, ওঁ তং তমসে নমঃ, ওঁ আং আত্মনে নমঃ, ওঁ অং অন্তরাত্মনে নমঃ, ওঁ পং পরমাত্মনে নমঃ, ওঁ হ্রীং জ্ঞানাত্মনে নমঃ।
পূর্ব্বাদি অষ্টকেশরে—“ওঁ মেধায়ৈ নমঃ, ওঁ প্রজ্ঞায়ৈ নমঃ, ওঁ প্রভায়ৈ নমঃ, ওঁ বিদ্যায়ৈ নমঃ, ওঁ শ্রিয়ে নমঃ, ওঁ ধূত্যৈ নমঃ, ওঁ স্মৃত্যৈ নমঃ, ওঁ বুদ্ধ্যৈ নমঃ।”
মধ্যে—“ওঁ বিদ্যেশ্বর্য্যৈ নমঃ।” তদুপরি—“ওঁ বর্ণকমলাসনায় নমঃ।” অতঃপর স্ববেদোক্ত মন্ত্রে ঘট স্থাপন করিবে।

ঘটস্থাপন সামবেদী

ভূমিতে হাত দিয়া পাঠ্য-ওঁ মহিত্রীণামবরস্তুদ্যুক্ষ্যং মিত্রস্যর্যাম্। নঃ দুরাধর্মং বরুণস্য।
ধান্যে হাত দিয়া পাঠ্য-ওঁ ধানবন্তং করম্ভিণমপুপবন্তমুথিনং, ইন্দ্র প্রাতৰ্জ্জুষস্ব নঃ। 
ঘটে হাত দিয়া পাঠ্য-ওঁ আবিশন কলশং সুতো বিশ্বা অর্যন্নভিশ্রিয়ঃ। ইন্দুরিন্দ্রায় ধীয়তে।
জলে হাত দিয়া পাঠ্য-ওঁ আ নো মিত্রাবরুণা ঘৃতৈর্গব্যুতি- মুক্ষতম্। মধ্বারজাংসি সুক্রতু।
পল্লবে হাত দিয়া পাঠ্য-ওঁ অয়মুর্জ্জাবতো বৃক্ষ উজ্জীবফলিনী ভব। পর্ণং বনস্পতে নুত্ত্বা চ সূয়তাং রয়িঃ। 
ফলে হাত দিয়া পাঠ্য-ওঁ ইন্দ্রং নরো নেমধিতা হবন্তে, যৎপাৰ্য্যায়ুনজতে ধিয়স্তাঃ।
শূরো নৃষাতা শ্রবসশ্চকাম। আগোমতি ব্ৰজে ভজা ত্বং নঃ। 
পুষ্পে হাত দিয়া পাঠ্য—ওঁ পবমান ব্যহি রশ্মিভির্বাজসাতমঃ। দধৎ স্তোত্রে সুবীর্যম্।
বস্ত্ৰে হাত দিয়া পাঠ্য—ওঁ যূবাসুবাসাঃ পরিবীত আগাৎ স উ শ্রেয়ান্ ভবতি জায়মানঃ।
তং ধীবাসঃ কবয় উন্নয়ন্তি, স্বাধ্যো মনসা দেবয়ন্তঃ॥ 
সিন্দুরে হাত দিয়া পাঠ্য—ওঁ সিন্ধোরুচ্ছ্বাসে পতয়ন্তমুক্ষণং হিরণ্যপাবাঃ পশুম গৃষ্ণতে৷৷
পুষ্পে হাত দিয়া পাঠ্য- ওঁ শ্রীরসি ময়ি রমস্ব
স্থিরীকরণ: ঘটে হাত দিয়া পাঠ্য-ওঁ ত্বাবতঃ পুরূবসো বয়মিন্দ্র প্রণেতঃ স্মসিস্তাতহরীণাম্॥
কৃতাঞ্জলি হইয়া পাঠ্য—“ওঁ সৰ্ব্বতীর্থোদ্ভবং বারি সৰ্ব্বদেবীসমন্বিতম্।
ইমং ঘটং সমারুহ্য তিষ্ঠ দেবি গণৈঃ সহ৷৷”
অতঃপর কাণ্ডরোপণ ও সূত্রবেষ্টন মন্ত্র পাঠ করিয়া দেবীর আবাহন করিবে।

কাণ্ডরোপণ মন্ত্র

কাণ্ড অর্থাৎ তীরকাঠি স্পর্শ করিয়া পাঠ্য- “ওঁ কাণ্ডাৎ কাণ্ডাৎ প্ররোহন্তী পরুষঃ পরুষস্পরি। এবানো দুৰ্ব্বে প্রতনু সহস্রেন শতেন চ৷৷

সূত্রবেষ্টন মন্ত্ৰ

সূত্র স্পর্শ করিয়া পাঠ্য – “ওঁ সূত্রমাণং পৃথিবীং দ্যামনেহসং সুশৰ্ম্মানমদিতিং সুপ্রণীতম্। দৈবীং নাবং স্বরিত্রামনাগমগস্রবন্তি মা রুহে মা স্বস্তয়ে।”

দেবী সরস্বতী আবাহন পদ্ধতি

কুর্ম্মমুদ্রায় পুষ্প গ্রহণ করিয়া দেবীর ধ্যান করতঃ মূলমন্ত্র (ঐং) উচ্চারণপূর্ব্বক পুষ্পে দেবীর অবস্থানে চিন্তা করিয়া পুষ্প ঘটে স্থাপন করিবে। অতঃপর আবাহন্যাদি পঞ্চমুদ্রা প্রদর্শন করতঃ দেবতার আহ্বান করিবে, যথা- “ওঁ ভূর্ভূবঃস্বভগবতি সরস্বতীদেবী স্বকীয় পরিবারগণসহিত। ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ (আবাহনী মুদ্রা), ইহতিষ্ঠ ইহতিষ্ঠ (স্থাপনীমুদ্রা), ইহসন্নিধেহি (সন্নিধাপনী মুদ্রা), ইহসন্নিরুধ্যস্ব (সন্নিরোধনী মুদ্রা), অত্রাধিষ্ঠানং কুরু, মম পূজাং গৃহাণ (সম্মুখীকরণী মুদ্রা)।”
অতঃপর “হুং” মন্ত্রে অবগুণ্ঠন মুদ্রা প্রদর্শন করিয়া মূলমন্ত্রে দেবীর ষড়ঙ্গন্যাস করতঃ “বং” মন্ত্রে, ধেনুমুদ্রা ও পরমীকরণ মুদ্রা প্রদর্শন করিবে। অতঃপর কৃতাঞ্জলি হইয়া পাঠ্য- ওঁ দেবেশি ভক্তিসুলভে পরিবারসমন্বিতে। যাবত্ত্বাং পূজয়িষ্যামি তাবত্ত্বংসুস্থিরা ভব॥” অতঃপর চক্ষুদান ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করিবে।

Swarashati Puja Mudra

মা সরস্বতীর চক্ষুৰ্দ্দান বিধি ও মন্ত্র

কুশের অগ্রভাগ দ্বারা কজ্জ্বল গ্রহণ করিয়া অগ্রে ঊর্ধ্বনেত্রে, পরে বামনেত্রে এবং তৎপরে দক্ষিণনেত্রে চক্ষুদান করিবে। 
মন্ত্ৰ যথা,
ঊর্ধ্বনেত্রে—“ওঁ কয়া নশ্চিত্র আভুবদূতী সদাবৃদ্ধঃ সখা। কয়া শচিষ্টয়া বৃতা৷৷”
বামনেত্রে—“ও আ প্যায়স্য সমেতু তে বিশ্বতঃ সোমবৃষ্ণ্যম্। ভবা বাজস্য সঙ্গথে ৷”
দক্ষিণনেত্রে—“ওঁ চিত্রং দেবানামূদলনীকং, চক্ষুমিত্রস্য
বরুণস্যাগ্নেঃ আ প্রা দ্যাবাপৃথিবী অন্তরীক্ষং সূর্য আতা জগতস্তম্ভূষশ্চ৷৷”

সরস্বতী দেবীর প্রাণপ্রতিষ্ঠা বিধি ও মন্ত্র

কুশ ও পুষ্পাদি গ্রহণ করতঃ প্রতিমার মস্তকে দেবতার মূলমন্ত্র (ঐং) অষ্টোত্তর শতবার জপ করিবে। অতঃপর মূলমন্ত্র পাঠ করিয়া প্রতিমার মস্তক হইতে পাদপীঠ পৰ্য্যন্ত স্পর্শ করিয়া অঙ্গুষ্ঠ ও অনামিকা দ্বারা দেবীপ্রতিমার হৃদয় অথবা কপোল স্পর্শ করিয়া মন্ত্রপাঠ সহকারে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করিবে, যথা-
“ওঁ আং হ্রীং, ক্রোং যং রং লং বং শং সং যং হৌং হংসঃ শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যা প্রাণা ইহ প্ৰাণাঃ ৷৷
ওঁ আং হ্রীং ক্রোং যং রং লং বং শং সং ষং হৌঁং হংসঃ শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যাঃ জীব ইহস্থিত৷
ওঁ আং হ্রীং ক্রোং যং রং লং বং শং সং ষং হৌঁং হংসঃ শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যাঃ সৰ্ব্বেন্দ্রিয়াণি ইহস্থিতানি।
ওঁ আং হ্রীং ক্রোং যং রং লং বং শং সং যং হৌঁং হংসঃ শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যাঃ বাঙ্মনশ্চক্ষুস্ত্বক্-শ্রোত্রঘ্রাণপ্রাণা ইহাগত্য সুখং চিরং তিষ্ঠন্তু স্বাহা।”
অতঃপর লেলিহামুদ্রায় প্রতিমার হৃদয় স্পর্শ করিয়া মন্ত্র পাঠ্য, যথা— “ওঁ মনোজ্যোতিষতামাজ্যস্য, বৃহস্পতির্যজ্ঞমিমং তনোতুরিষ্টং যজ্ঞঃ সমিমং দধাতু, বিশ্বে দেবাস ইহ মাদয়ন্তমোম প্রতিষ্ঠ॥
অস্যৈ প্রাণাঃ প্রতিষ্ঠন্ত, অস্যৈ প্রাণা ক্ষরন্তু চ অস্যৈ দেবত্বসংখ্যায়ৈ স্বাহা।
ওঁ হংসঃ শুচিষদ্বসুরন্তরিক্ষসদ্ধোতা বেদিসদতিথিদুরোণসৎ। নৃষম্বরসদৃত সদ্বোম সদজা গোজা ঋতজা ঋতং বৃহৎ৷৷ ওঁ প্রতদ্বিষ্ণুঃ স্ববতে বীর্যোন মৃগো ন ভীমঃ কুচরো গিরিষ্ঠাঃ। অস্যোরুযু ত্রিষু বিক্রমণেদ্বধিক্ষিয়ন্তি ভূবনানি বিশ্ব৷৷
ওঁ বিষ্ণুর্যোনিং কল্পয়তু তুষ্টা রূপানি পিংশুতু। আসিঞ্চতু প্রজাপতিধাতা গর্ভং দধাতু তে।
ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্দ্ধনম্। উর্ধ্বারুমিববন্ধনামৃত্যোমুক্ষীয়মাষমৃতাৎ স্বাহা।।” অতঃপর গায়ত্রী পাঠ্য। অতঃপর গণেশাদি পঞ্চদেবতার পূজা করিয়া প্রধান পূজা আরম্ভ করিবে।

গণেশাদি পঞ্চদেবতার পূজা

গণেশের ধ্যান, যথা- “ওঁ খৰ্ব্বং স্থূলতনুং গজেন্দ্রবদনং লম্বোদরং,সুন্দরং প্রস্যন্দন্মদগন্ধলুব্ধ মধুপ ব্যালোল গণ্ডস্থলম্। দন্তাঘাত বিদারিতারিরুধিরেঃ সিন্দুরশোভাকরং, বন্দে শৈলসুতাসুতং গণপতিং সিদ্ধিপ্রদং কামদম।” এই ধ্যান পাঠ করিয়া।

“এষ গন্ধঃ ওঁ গণেশায় নমঃ, এতৎ পুষ্পম্ ও গণেশায় নমঃ, এষ ধূপঃ ওঁ গণেশায় নমঃ, এষ দীপঃ ওঁ গণেশায় নমঃ, এতন্নৈবেদ্যম্ ওঁ গণেশায় নমঃ, মন্ত্রে পঞ্চোপচারে পূজা করতঃ প্রণাম করিবে, যথা- “ওঁ একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদর গজাননম্। বিঘ্ননাশকরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহম্।

অনন্তর সূর্য্যের পূজা করিবে। ধ্যান যথা-“ওঁ রক্তাম্বুজাসনমমশেষগুণৈকসিন্ধু, ভানুং সমস্তজগতামধিপং ভজামি ।
পদ্মদ্বয়াভয়বরান্ দধতং করাজৈর্মাণিক্যমৌলিমরুণাঙ্গরুচিং ত্রিনেত্রম্” ধ্যান পাঠ করিবে, “এষ গন্ধঃ ওঁ শ্রীসূৰ্য্যায় নমঃ” ইত্যাদি ক্রমে পঞ্চোপচারে পূজা করিয়া প্রণাম করিবে।
“ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্। ধ্বান্তারিং সর্ব্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।”

অনন্তর বিষ্ণুর পূজা করিবে। ধ্যান যথা- “ওঁ ধ্যেয়ৎ সদা সবিতৃমণ্ডলমধ্যবর্তী নারায়ণং সরসিজাসন সন্নিবিষ্টং।
কেয়ুরকনককুণ্ডলবান্ কিরীটিহারী হিরন্ময়বপূধৃতশঙ্খচক্র ৷৷”
ধ্যান পাঠ করিয়া “এষ গন্ধঃ ওঁ শ্রীবিষ্ণবে নমঃ” ইত্যাদি মন্ত্রে পঞ্চোপচারে পূজা করিয়া
“ওঁ নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণ্যহিতায় চ।জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ৷৷’ মন্ত্রে প্রণাম করিবে।

অনন্তর শিবপূজা করিবে। ধ্যান যথা- “ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসং রত্নাকম্পোজ্জ্বলাং, পরশুমৃগবরাভীতিহস্তং প্রসন্নম্।
পদ্মাসীনং সমস্তাৎ স্তুতমমরগণৈর্ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানং বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরঃ পঞ্চবক্ত্রং ত্রিনেত্রম্॥” এই ধ্যান পাঠ করিয়া “এষ গন্ধঃ ওঁ শিবায় নমঃ” ইত্যাদি মন্ত্রে পঞ্চোপচারে পূজা করিয়া প্রণাম করিবে।

অনন্তর দুর্গাপূজা করিবে, যথা-“ওঁ কালাভ্রাভাং কটাক্ষেররিকুলভয়দাং মৌলিবর্দ্ধেন্দুরেখাং, শঙ্খং চক্রং কৃপাণং ত্ৰিশিখমপি করৈরুদ্বহস্তীং ত্রিনেত্রাম্। সিংহস্কন্ধাধিরূঢ়াং ত্রিভুবনমখিলং তেজসাপুরয়ন্তীং ধ্যায়েদ্দুর্গাং জয়াখ্যং ত্রিদশপরিবৃতাং সেবিতাং সিদ্ধিকামৈঃ” এই ধ্যান পাঠ করিয়া “এষ গন্ধঃ ওঁ হ্রীং দূর্গায়ৈঃ নমঃ” ইত্যাদি মন্ত্রে পঞ্চোপচারে পূজা করিয়া প্রণাম করিবে, যথা- “ওঁ সৰ্ব্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্ব্বার্থ সাধিকে। শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণি নমোহস্তুতে॥” পরে প্রধান পূজা করিবে।

সরস্বতী দেবীর প্ৰধান পূজা

প্রথমে দেবীর ধ্যান–(পৃঃ ১১) করিয়া গন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করতঃ মন্ত্র পাঠ সহকারে যথাযথ উপচারসকল ক্রমানুসারে নিবেদন করিবে, যথা,
আসন-প্রথমে রজতাসন গ্রহণ করিয়া “বং এতস্মৈ রজতাসনায় নমঃ” মন্ত্রে আসন শোধন করিয়া “এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় ওঁ শ্রীবিষ্ণবে নমঃ” মন্ত্রে নারায়ণে গন্ধপুষ্প দিয়া “এতৎ সম্প্রদানায় ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ” মন্ত্র পাঠ করত “ওঁ আসনং গৃহং দেবেশি যৎ কৃতং শোভনং ময়া। সৰ্ব্বকামফলং দেহি বাগীশ্বরী নমোহস্তুতে॥” এতৎ রজতাসনং ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ” মন্ত্রে দেবীকে নিবেদন করিবে।
স্বাগত—“ওঁ ভূর্ভুবঃস্বভগবতি শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবী স্বাগতং সুস্বাগতং কুশলং তে।
ওঁ স্বাগতং অনুগৃহীতোহস্মি সুখাগতমিদং শুভম্। প্রপন্না ভব দেবেশি কৃপাং কুরু হরিপ্রিয়ে।” পাদ্য-পাদ্য গ্রহণ করতঃ উপরোক্ত প্রকারে অর্চ্চনা করতঃ

“ওঁ পাদ্যং গৃহাণ দেবেশি সর্বদুঃখাপহারকম্।
ত্রায়স্ব বরদে দেবি নমস্তে বিষ্ণুবল্লভে৷৷
এতৎ পাদ্যং ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদৈব্যে নমঃ॥”
অর্ঘ্য-অর্ঘ্য গ্রহণ করতঃ অর্চ্চনা করিয়া “ওঁ দুৰ্ব্বাক্ষতসমাযুক্তাং গন্ধপুষ্পং তথা পরম্। শোভন শঙ্খপাত্রস্থং গৃহাণ দেবি সারদে।”
ইদমর্ঘ্যং (যজু-এষোঽর্ঘ্যং) ও ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ॥”
আচমনীয়-“ওঁ মন্দাকিন্যাস্ত যদ্বারি সর্ব্বপাপহরং শুভম্। গৃহাণচমনীয়ং ত্বং ময়া ভক্ত্যা নিবেদিতম্৷৷ ইদমাচমনীয়ং “ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ ॥”
মধুপর্ক—“ওঁ মধুপর্কং মহাদেবি ব্রহ্মাদ্যৈ পরিকল্পিতম্ ময়া নিবেদিতং ভক্ত্যা গৃহাণ বাগাগিনী৷ এষ মধুপর্ক ওঁ শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ ॥”
পুনরাচনমনীয়—“ওঁ উচ্ছিষ্টোহপ্যশুচিৰ্বাপি যস্যা স্মরণমাত্রতঃ। শুদ্ধিমাপ্নোতি তস্মৈ তে পুনরাচমনীয়কম্‌৷৷ ইদং পুনরাচমনীয়ং ও ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ॥”
স্নানীয়—“ওঁ জলঞ্চ শীতলং স্বচ্ছং নিত্যং মনোহরম্। স্নানার্থান্তে প্রযচ্ছামি বাগীশ্বরী প্রগৃহ্যতাম্। ইদং স্নানীয় জলং ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদৈব্যে নমঃ।।”
বস্ত্র-“ওঁ সুশুক্লং পরমং দেবি সুন্দরং সুমনোহরম্। ময়া নিবেদিতং ভক্ত্যা বস্ত্ৰং তে প্রতিগৃহ্যতাম। ইদং বস্ত্রং ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ।” 
রজতাভরণ-“ওঁ দিব্যরত্নসমাযুক্তা বহ্নিভানুসমপ্রভা। গাত্রানি শোভয়িষ্যান্তি অলঙ্কারাস্তু সারদে। ইদং রজতাভরণং ও ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ॥”
গন্ধ—“ওঁ শরীরন্তে ন জানামি চেষ্টাং নৈব নৈব চ। রক্ষ মাং সৰ্ব্বতো দেবি গন্ধানেতান্ গৃহাণ চ।” এষ গন্ধং ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ॥”
পুষ্প—“ওঁ পুষ্পং মনোহরং রম্যং সুগন্ধি দেবনিৰ্ম্মিতম্। হৃদ্যমভূতমাঘ্ৰেয়ং গৃহ্যতাং বিষ্ণুবল্লভে। ইদং পুষ্পং ও ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ ॥”
ধূপ—“ওঁ বনস্পতিরসো দিব্যে গন্ধাঢ্য সুমনোহর। ময়া নিবেদিতো ভক্ত্যা ধূপোহয়ং প্রতিগৃহ্যতাম্৷ এষ ধূপঃ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ৷৷”
দীপ—“ওঁ অগ্নিজ্যোতি বিজ্যোতিশ্চন্দ্রজ্যোতিস্বথৈব চ। জ্যোতিষামুত্তমো দেবি দীপোহয়ং প্রতিগৃহ্যতাম্॥ এষ দীপঃ ও ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ ॥”
নৈবেদ্য—“ওঁ নৈবেদ্যং ঘৃতসংযুক্তং নানারসসমন্বিতম্। ময়া নিবেদিতং ভক্ত্যা গৃহাণ সুরপূজিতে। ইদং সোপকরণামান্ননৈবেদ্যং ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ ॥” 
ফলমুলাদিনৈবেদ্য—“ওঁ ফলমূলাদি সর্ব্বানি গ্রাম্যারণ্যানি যানি চ। নানাবিধ সুগন্ধীনি গৃহ দেবি যথাসুখম্। ইদং ফলমূল নৈবেদ্যং ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ ॥” 
রচনা—“ওঁ নানাফলসমাযুক্তাং নানাবস্তু সমন্বিতাম্। রচনান্তে প্রযচ্ছমি গৃহাণ পরমেশ্বরি। এষ রচনা ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ ॥”
তাম্বুল—“ওঁ ফলপত্র সমাযুক্তাং কপূরেণ সুবাসিতম্। ময়া নিবেদিতং ভক্ত্যা তাম্বুলং প্রতিগৃহ্যতাম্৷ এতত্তাম্বুলং ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ ॥”
সিন্দুর—“ওঁ সিন্দুরং সুন্দরং দেবি ভত্তুরাযুবির্দ্ধনম্। সর্ব্বরত্নাধিকং দিব্যং সিন্দুরং প্রতিগৃহ্যতাম্। ইদং সিন্দুরং ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ॥”
পুষ্পমাল্য- “ওঁ সুত্রেণ গ্রথিতং মাল্যং নানাপুষ্প সমন্বিতম্। শ্রীযুক্ত লম্বমালঞ্চ গৃহাণ বিষ্ণুবল্লভে। ইদং পুষ্পমাল্যং ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ ॥”
অন্ন-“ওঁ অন্নং চতুৰ্ব্বিধং দেবি রস্যৈঃ ষড়ভিঃ সমন্বিতম্। উত্তমং প্রাণদং চৈব গৃহাণ মম ভাবতঃ৷৷ ইদমন্নং ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ ॥”
অন্ন নিবেদন করতঃ ধেনুমুদ্রায় অন্নকে অমৃতীকরণ করিয়া পঞ্চগ্রাস মুদ্রা প্রদর্শন করতঃ আচমনীয়ার্থে জল দিয়া মূলমন্ত্র (ঐং) জপ করিবে। পরে পুনরাচমনার্থে জল দিবে। অতঃপর “ওঁ পুস্তকায় নমঃ” মন্ত্রে পুস্তকের, ওঁ মস্যাধারায় নমঃ মন্ত্রে মস্যাধারের (দোয়াত), “লেখন্যৈ নমঃ” মন্ত্রে লেখনীর (কলম) ও “ওঁ বাদ্যযন্ত্রায় নমঃ” মন্ত্রে বাদ্যযন্ত্রাদির প্রত্যেকের পঞ্চোপচারে পূজা করিবে।

অনন্তর যথাশক্তি উপচারে লক্ষ্মীদেবীর পূজা করিবে, 
ধ্যান-“ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজসৃণভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ। পদ্মাসনস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতারম্। গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্ব্বালঙ্কারভূষিতাম্। রৌক্মপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু॥”
মন্ত্র—ওঁ শ্ৰীং লক্ষ্মীদেব্যৈ নমঃ। অতঃপর “ওঁ হংসায় নমঃ” মন্ত্রে দেবীবাহন হংসের যথাশক্তি পূজা করতঃ ইন্দ্রাদিদশাদিক্‌পাল, আদিত্যাদি-নবগ্রহ, মৎস্যাদি দশাবতার, গঙ্গা, যমুনা, ও বাস্তুপুরুষের পূজা করতঃ কৃতাঞ্জলি হইয়া প্রার্থনা করিবে, মন্ত্র, যথা— “যথা ন দেবো ভগবান ব্রহ্ম লোকপিতামহঃ। ত্বাং পরিত্যজ্য সংতিষ্ঠেৎ তথা ভব বরপ্রদা। দেবাং পুরাণশাস্ত্রানি নৃত্যগীতাদিকঞ্চ যৎ। ন বিহীনং ত্বয়া দেবি তথা মে সিন্তু সিদ্ধয়। ওঁ লক্ষ্মীােধাধরাপুষ্টিগৌরীতুষ্টিপ্রভাধৃতি। এতাভিঃ পাহি তনুভিরষ্টাভির্ম্মাং সরস্বতী”
পরে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করতঃ প্রণাম করিবে।

সরস্বতী পূজার পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র

“ওঁ সরস্বত্যৈ নমো নিত্যং ভদ্রকাল্যৈ নমো নমঃ । বেদবেদাঙ্গ বেদান্ত বিদ্যাস্থানেভ্য এব চ।
এষ সচন্দন গন্ধপুষ্পাঞ্জলি ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ৷”
এষ সচন্দন গন্ধপুষ্পাঞ্জলি ইত্যাদি৷৷
“ওঁ সা মে ভবতু জিহ্বায়াং বীণাপুস্তকধারিণী। মুরারীবল্লভা দেবী সর্ব্ব শুক্লা সরস্বতী। এষ সচন্দন গন্ধপুষ্পাঞ্জলি ইত্যাদি৷” ওঁ সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে। বিদ্যারূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোহস্তুতে।
প্রণাম মন্ত্র- “ওঁ জয় জয় দেবি চরাচরসারে, কুচযুগশোভিতমুক্তাহারে।
বীণাপুস্তকরঞ্জিত হস্তে, ভগবতী ভারতীদেবি নমোহস্তুতে।”

অনেকে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে শিশুদের হাতেখড়ি দিয়া থাকেন। পুষ্পাঞ্জলির পরেই হাতেখড়ি দেওয়া প্রশস্ত।

মন্ত্ৰ: সরস্বতী নমস্তুভ্যং বরদে কামরূপিণি। বিদ্যারম্ভম্ করিস্যামি সিদ্ধং ভবতু মে সদা৷

সরস্বতী পূজায় আরতি বিধি

পদতলে চারবার, নাভিদেশে দুইবার, মুখমণ্ডলে তিনবার, সর্বগাত্রে সাতবার এইক্রমে প্রথমে দীপমালা, দ্বিতীয়ে সোদকাজ অর্থাৎ অর্ঘ্যপাত্র, তৃতীয়ে ধৌতবস্ত্র, চতুর্থে বিল্বপত্র, কর্পূর, ধূপ চামর প্রভৃতি দ্বারা ও আরতি করা হয়। সবশেষে প্রণাম।

সরস্বতী পূজা হোম পদ্ধতি ও মন্ত্র

চতুর্হস্ত পরিমিত চতুষ্কোণ কেশভূষাঙ্গারবর্জ্জিত গোময়াদিলিপ্ত স্থলে বালুকা ব্যাপ্ত করিয়া কুশাসনে পূৰ্ব্বমুখে উপবেশন করিবে। হোমকার্য্যে মাথায় উষ্ণীষ ( পাগড়ি ) বন্ধন ও তিলকাদি দ্বারা ললাটে শোভিত করিবে। অনন্তর দক্ষিণজানু পাতিত করিয়া উত্তরদিকে অভ্যুক্ষণার্থ কুশকুসুমসহিত জলপাত্র স্থাপন করিবে। কোশার পশ্চিমে উত্তরাগ্র করিয়া কয়েকগাছি কুশ পাতিয়া বহ্নিস্থাপন পর্যন্ত ঐ কুশের প্রাদেশপরিমিত (তর্জনীর অগ্র হইতে বিস্তৃত অঙ্গুষ্ঠের অগ্র পর্যন্ত দৈর্ঘ্য) একটি কুশ বামহস্তে লইয়া ঐ হস্ত চিতভাবে রাখিবে। পরে দক্ষিণহস্তের অনামিকা ও অঙ্গুষ্ঠের দ্বারা গৃহীত কুশমূলে রেখাকরণ করিবে। রেখাকরণে অগ্রে পাতিত বালুকার উপরি দ্বাদশাঙ্গুলি প্রমাণ কুশ নৈঋতকোণ হইতে পূর্ব্বমুখ করিয়া পাতিত করিবে।

পরে একবিংশতি অঙ্গুলিপ্রমাণ অপর একটি কুশ উত্তরাস্য করিয়া স্থাপন করিবে। পরে সপ্তাঙ্গুলি প্রমাণ আর একটি কুশ দ্বিতীয় রেখার চারি অঙ্গুলি ঊর্ধ্বে, প্রথম কুশের সংলগ্ন করতঃ উত্তরাস্য করিয়া রাখিবে ও উহার উত্তরসীমা হইতে পূর্ব্বমুখ করিয়া একটি প্রাদেশপরিমিত কুশ রাখিবে। পরে পূৰ্ব্বক্রমে সাত অঙ্গুলি আর একটি কুশ প্রথম সপ্তাঙ্গুল কুশের উত্তরদিকে উত্তরাস্য করিয়া রাখিবে ও ঐ কুশের উত্তর হইতে পূর্ব্বাস্য করিয়া প্রাদেশ পরিমিত আর একটি কুশ রাখিবে। তৎপরে আর একটি সাত অঙ্গুলি কুশ দ্বিতীয় সপ্তাঙ্গুল কুশের উত্তরদিকে উত্তরাস্য করিয়া ও ঐ কুশের উত্তর হইতে পূর্ব্বমুখ করিয়া আর একটি প্রাদেশ পরিমিত কুশ রাখিয়া দিবে। এই প্রকারে সজ্জিত করিলে রেখাকরণের কালে সেই সেই কুশের মাত্র মন্ত্রপাঠ সহকারে রেখা টানিলেই কাৰ্য্য সহজ হইবে। কেহ কেহ স্থণ্ডিল নিৰ্ম্মাণপূর্ব্বক কুশ দ্বারা এককালেই রেখা টানিয়া থাকেন। 

পরে মন্ত্রপাঠ করিয়া স্পষ্টীকৃত করেন। রেখাকরণ মন্ত্ৰ, যথা- দ্বাদশাঙ্গুলি পূৰ্ব্বমুখী রেখা- “ওঁ রেখেয়ং পৃথ্বীদেবতাকা পীতবর্ণা”৷৷ ১৷৷
তন্মূল হইতে একবিংশতি অঙ্গুলিপরিমিত উপরমুখী রেখা- “ওঁ রেখেয়ং অগ্নিদেবতাকা লোহিতবর্ণা”৷৷ ২৷৷
প্রথম রেখা হইতে সপ্তাঙ্গুলি অন্তরিত প্রাদেশপরিমিত পূৰ্ব্বাভিমুখী রেখা- “ওঁ রেখেয়ং প্রজাপতিদেবতাকা কৃষ্ণবর্ণা”॥ ৩॥ 
পূনর্ব্বার অন্য সপ্তাঙ্গুলি অন্তরিত প্রাদেশপরিমিত পূর্ব্বভিমুখী রেখা- “ওঁ রেখেয়মিন্দ্রদেবতাকা নীলবর্ণা”॥ ৪॥
উহা হইতে সপ্তাঙ্গুলি অন্তরিত প্রাদেশপরিমিত পূর্ব্বাভিমুখী রেখা- “ওঁ রেখেয়ং সোমদেবতাকা শুক্লবর্ণা” ॥ ৫॥

তৎপরে ঐ পাঁচটি রেখার মূলদেশ হইতে অঙ্গুষ্ঠ ও অনামিকা যোগে কিঞ্চিৎ উৎকর (বালুকা) গ্রহণপূর্ব্বক “প্রজাপতিঋষিরগ্নিদেবতা উৎকর নিরসনে বিনিয়োগঃ। ওঁ নিরস্ত পরাবসুঃ” মন্ত্রে অরত্নিপরিমিত (কনুই হইতে কনিষ্ঠার অগ্রভাগ পর্যন্ত) দূরস্থানে ঈশানকোণে ফেলিয়া পূর্ব্বস্থাপিত কোশার জলে রেখা অভ্যুক্ষণ করিবে। পরে নিকট স্থাপিত অগ্নি হইতে অগ্নি গ্রহণ করিয়া মন্ত্রপাঠ করিবে, যথা- “প্রজাপতিঋষিস্ত্রিষ্টুপ্‌ছন্দোহগ্নিদেবতা অগ্নিসংস্কারে বিনিয়োগঃ। ওঁ ক্রব্যাদমগ্নিং প্রহিণোমি দূরং যমরাজ্যং গচ্ছতু রিপ্রবাহঃ॥”

মন্ত্রপাঠ করিয়া গৃহীত অগ্নি হইতে কিয়দংশ নৈঋত কোণে পরিত্যাগ করিয়া অবশিষ্ট অগ্নি মন্ত্রপাঠ সহকারে স্থণ্ডিলের উপর দক্ষিণাবর্ত্তে তৃতীয় রেখার উপর আত্মাভিমুখ করিয়া রাখিবে, যথা- “প্রজাপতিঋষিবৃহতীচ্ছন্দো প্রজাপতিদেবতা অগ্নিস্থাপনে বিনিয়োগঃ। ওঁ ভূর্ভুবঃস্বরোমঃ।।” তৎপরে পূর্ব্বস্থাপিত বামকর তুলিয়া করযোড়ে মন্ত্রপাঠ করিবে, যথা- “ওঁ ইহৈবায়মিতরো জাতবেদা দেবেভ্যোঃ হব্যং বহুতু প্ৰজানন্ ওঁ সৰ্ব্বতঃ পাণিপাদান্তঃ সর্ব্বতোঽক্ষি শিরোমুখঃ। বিশ্বরূপো মহানগ্নি প্রণীতিঃ সৰ্ব্বকৰ্ম্মসু॥”

পরে “ওঁ অগ্নে তুং বলদনামাসি” মন্ত্রে অগ্নির নামকরণ করিয়া “ওঁ পিঙ্গজশ্মশ্রুকেশাক্ষঃ পীনাঙ্গজঠরোহরুণঃ। ছাগস্থঃ সাক্ষসূত্রোহগ্নি সপ্তাৰ্চ্চি শক্তিধারকঃ।” ধ্যান পাঠ করিয়া “ওঁ বলদাগ্নে ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ, ইহতিষ্ঠ ইহতিষ্ঠ, ইহসন্নিরুধ্যস্ব, অত্রাধিষ্ঠানং কুরু, মম পূজা গৃহাণ” মন্ত্রে আবাহন করিয়া “এষ গন্ধঃ ওঁ বলদাগ্নয়ে নমঃ, এতৎ পুষ্পম্ ওঁ বলদাগ্নয়ে নমঃ, এষ ধূপঃ ওঁ বলদাগ্নয়ে নমঃ, এষ দীপঃ ওঁ বলদাগ্নয়ে নমঃ, হবিনৈবেদ্যম্ ওঁ বলদাগ্নয়ে স্বাহা” মন্ত্রে পূজা করিবে।

অতঃপর প্রাদেশপরিমিত ঘৃতাক্ত সমিধ আহুতি দিয়া ব্রহ্মস্থাপন করিবে। যথা- পূৰ্ব্বস্থাপিত জলপাত্র হইতে জলধারা দিয়া বহ্নির উপর হইতে দক্ষিণে অর্থাৎ অগ্নিকোণে স্থণ্ডিল হইতে অরত্নিপরিমিত দূরে জলধারা দিয়া কয়েকগাছি সাগ্ৰকুশ আস্তৃত করিয়া ব্রহ্মার আসন করিবে। যজমান কর্তৃক বৃত ব্রাহ্মণ যদি ব্রহ্মা হয়েন, তবে আসনের পূৰ্ব্বপাশে পশ্চিমাস্যে দাঁড়াইয়া বামকরের অনামিকা ও অঙ্গুষ্ঠ দ্বারা আস্তৃত আসন হইতে একটি কুশ লইয়া মন্ত্রপাঠ করিবে।

যদি উপরোক্ত বৃত ব্রাহ্মণ ব্রহ্মারূপে না হয়েন, তবে তৎপরিবর্তে নারায়ণশিলাকেই ব্রহ্মারূপে কল্পনা করিয়া লইবেন এবং হোতা মন্ত্রপাঠ করিবেন যথা-“প্রজাপতিঋষিরগ্নিদেবতা তৃণনিরসনে বিনিয়োগঃ। ওঁ নিরস্ত পরাবসু৷৷” মন্ত্র পাঠ করিয়া কুশটি দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ফেলিয়া দক্ষিণহস্তে জলস্পর্শ করতঃ বামপদের উপর দক্ষিণপদ রাখিয়া উত্তরমুখে পূর্ব্বরক্ষিত আসন জলদ্বারা অভ্যুক্ষণ করিয়া মন্ত্রপাঠ করিবে- “প্রজাপতিঋষিরগ্নিদেবতা ব্রহ্মোপবেশনে বিনিয়োগঃ। ওঁ আবসোঃ সদনে সীদ৷ ওঁ সীদামি৷৷” (প্রতিবচন)।

তৎপরে উত্তরাস্যে ব্রহ্মস্থাপনপূর্ব্বক হোতা কতিপয় কুশ বিনা মন্ত্রে ব্রহ্মাকে দিয়া জলদ্বারা অভ্যুক্ষণ করিবে এবং “এতৎ কুশপত্রম্ ওঁ ব্ৰহ্মণে নমঃ, এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ব্ৰহ্মণে নমঃ৷৷” মন্ত্রে কুশ ও কুসুমদ্বারা পূজা করিবে। অনন্তর হোতা পূৰ্ব্বাস্যে উপবেশন করিয়া অযজ্ঞীয় ভাষাদি কথনের নিমিত্ত প্রায়শ্চিত্তরূপ মন্ত্র পাঠ করিবে। ব্রহ্মা যদি বৃত ব্রাহ্মণ হয়েন, তিনিও মন্ত্র পাঠ করিবেন, “প্রজাপতিঋষিগায়ত্রীচ্ছন্দো বিষ্ণুদেবতা অযজ্ঞীয়বাগচননিমিত্তজপে বিনিয়োগঃ।

ওঁ ইদং বিষ্ণুবিচক্রমে ত্রেধা নিদধে পদম্। সমূঢ়মস্য পাংশুলে৷ অনন্তর পাতিত দক্ষিণজানু হইয়া অধোমুখ দক্ষিণহস্তের উপরি বামহস্ত বিপরীতভাবে আত্মাভিমুখ করিয়া মাটিতে রাখিয়া ভূমিজপ মন্ত্র পাঠ করিবে, যথা- “পরমেষ্টিঋষিরনুষ্টুপ্‌ছন্দঃ অগ্নিদেবতা ভূমিজপে বিনিয়োগঃ।

ওঁ ইদং ভূমের্ভজাম্যহমিদং ভবং সুমঙ্গলম্। পরাসপত্নান বাধ স্বান্যেষ্যাং বিন্দতে ধনম্॥” অনন্তর দক্ষিণহস্তে কতিপয় কুশ লইয়া অগ্নির উত্তরদিক হইতে দক্ষিণ পৰ্য্যন্ত দক্ষিণাবর্ত্তে মন্ত্র পাঠ সহকারে তৃণাদিমার্জন ও শোধন করিবে, যথা- “কৌৎসঋষিগতীচ্ছন্দঃ অগ্নিদেবতা পৃষ্ঠস্য ষড়হস্য ষষ্ঠেঽহনি অগ্নিমারুতে শস্ত্রে পরিসমূহনে বিনিয়োগঃ।

ওঁ ইমং স্তোমমহতে জাতবেদসে রথমিব সম্মহেমা মণীষয়া। ভদ্রা হি নঃ প্রমতিরস্য সংসদ্যগ্নে সখ্যে মারিষামা বয়ন্তব ওঁ ভবামেং কৃণবামা হবীংষিতে চিতয়ন্তঃ পৰ্ব্বণা বয়ম্। জীবাতবে প্রতরাং সাধয়া ধিয়োহগ্নে সখ্যে মারিষামা বয়ন্তব৷

ওঁ শকেম ত্বা সমিধং সাধয়া ধিয়ত্ত্বেদেবা হবির্ দন্ত্যাহুতম্। তামাদিত্যামাবহতাং লাস্যগ্নে সখ্যে মারিষামা বয়ন্তব।”অনন্তর সম্মার্জ্জনী কুশসমূহ ঈশানকোণে ফেলিয়া ছিন্নমূল সমানাগ্র কুশ গ্রহণ করিয়া অগ্নির পূর্ব্বোত্তর দিকে তিনটি পূর্ব্বাগ্রে কুশ স্থাপন ও তাহার নিম্নে আবার ঐরূপ কুশ পূর্ব্বমুখ করতঃ রাখিয়া উত্তরিস্থ কুশের মূলদেশ আবরণ করিবে এবং পুনরায় আর একটি কুশ দ্বারা এরূপে উপরিস্থ কুশের মূলদেশ আবরিত করিয়া দিবে। অনন্তর অগ্নিকোণের ঊর্দ্ধস্থান হইতে নৈর্ঝতকোণের নিম্নভাগ যাবৎ পূর্ব্বে যেরূপ দেওয়া হইয়াছিল সেইরূপে পূৰ্ব্বমুখী করিয়া পঞ্চদশসংখ্যক কুশ প্রদান করিবে। পরে নৈঋতকোণের ঈষৎ উত্তরে ঊর্দ্ধ হইতে নিম্নক্রমে তিনগাছা কুশ রাখিবে।

অনন্তর অগ্নির উত্তরদিকে ঈশানকোণস্থ কুশের মূল আবরণপূর্ব্বক অধঃক্রমে বায়ুকোণ যাবৎ দ্বাদশটি কুশ সাজাইয়া দিবে। পরে পূর্ব্বাদি দিক্রমে দশদিকে আতপতণ্ডুল প্রক্ষেপ করিবে। যথা- “ওঁ ইন্দ্ৰায় স্বাহা, ওঁ অগ্নয়ে স্বাহা, ওঁ যমায় স্বাহা, ওঁ নৈর্থতায় স্বাহা, ওঁ বরুণায় স্বাহা, ওঁ বায়বে স্বাহা, কুবেরায় স্বাহা, ওঁ ঈশানায় স্বাহা, ওঁ অনন্তায় স্বাহা, ওঁ ব্ৰহ্মণে স্বাহা।

অতঃপর খদির, পলাশ ও যজ্ঞডুমুর ইহাদের কোন একটির কাষ্ঠের প্রাদেশপ্রমাণ ঘৃতাক্ত সমিধ গ্রহণ করিয়া প্রজাপতিদেবতাকে মনে মনে চিন্তা করিয়া হোতা কিঞ্চিৎ উত্থিত হইয়া অমন্ত্রক অগ্নিতে আহুতি দিবে। অতঃপর আস্তৃত কুশ হইতে দুইগাছি সাগ্ৰ কুশ লইয়া তাহা অপর একটি কুশদ্বারা পবিত্র বন্ধন করিয়া প্রাদেশপরিমিত রাখিয়া মন্ত্রপাঠ সহকারে নখ ব্যতীত ছেদন করিবে। যথা-“প্রজাপতিঋষিঃ পবিত্রদেবতা পবিত্রছেদনে বিনিয়োগঃ। ও পবিত্রে স্থো বৈষ্ণবৌ”

অনন্তর ঐ পবিত্র বামহস্তের অঙ্গুষ্ঠ ও অনামিকা দ্বারা ধারণ করিয়া মন্ত্র সহকারে জলদ্বারা অভ্যুক্ষণ করতঃ ঘৃতের পাত্রে উত্তরাগ্র করিয়া রাখিবে, যথা- “প্রজাপতিঋষিঃ পবিত্রদেবতে পবিত্রমার্জ্জনে বিনিয়োগঃ। ও বিষ্ণোর্মনসা পূতে স্থঃ।”

অতঃপর সেই ঘৃতপাত্রে হোমার্থ ঘৃত স্থাপন করতঃ পাত্রের উপর, দক্ষিণকর অধোমুখ করিয়া বামকর দক্ষিণকরের উপরে দিয়া অধোমুখভাবে পবিত্রের অগ্রদেশ দক্ষিণকরের অনামিকা ও অঙ্গুষ্ঠ দ্বারা ধরিবে এবং পশ্চাদ্ভাগ বামকরের অঙ্গুষ্ঠ ও অনামিকার দ্বারা ধারণ করিয়া মন্ত্র পাঠ করিবে, যথা- “প্রজাপতিঋষিগায়ত্ৰীচ্ছন্দ আজ্যংদেবতা আজ্যোৎপবনে বিনিয়োগঃ।

ওঁ দেবত্ত্বা সবিতোৎপুনাত্বাছিদ্রেণ। বসোঃ সূর্য্যস্য রশ্মিভিঃ স্বাহা।” পরে পবিত্রের মধ্যভাগ ঘৃত দ্বারা আলোড়নপূর্ব্বক ঐরূপভাবে পবিত্রদ্বারা ঘৃত বহ্নিতে অমন্ত্রক আহুতি দিবে। তৎপরে পবিত্র গাছটি বামহস্তে গ্রহণ করিয়া জলের ছিটা দিবে এবং অমন্ত্রক অগ্নিতে নিক্ষেপ করিবে। অনন্তর ঘৃতপাত্রের তলদেশ জলদ্বারা মার্জ্জনা করিয়া আজ্য সংস্কার করিবে। ফ্রক, দ্রুব প্রভৃতিও ঐভাবে সংস্কার করিবে।

অতঃপর পাতিত দক্ষিণজানু হইয়া বামজানু উন্নত করতঃ বহ্নির চতুর্দ্দিকক্রমে উদকাঞ্জলিসেক করিবে। অগ্রে অগ্নির দক্ষিণভাগে নৈঋতকোণ হইতে অগ্নিকোণ যাবৎ গৃহীত জলাঞ্জলি লইয়া মন্ত্র পাঠ করিবে এবং জলধারা দিবে। যথা- “প্রজাপতিঋষিরদিতিদেবতা উদকাঞ্জলিসেকে বিনিয়োগঃ। ওঁ অদিতে অনুমন্যস্ব।” পূনর্ব্বার ঐরূপ জলাঞ্জলি লইয়া নিন্মোক্ত মন্ত্রে অগ্নির পশ্চিম-নৈঋতকোণ হইতে বায়ুকোণ যাবৎ জলধারা দিবে, যথা- “প্রজাপতিঋষিরনুমতিদেবতা উদকাঞ্জলিসেকে বিনিয়োগঃ। ওঁ অনুমতে অনুমন্যস্ব।”

পুনর্ব্বার জলাঞ্জলি লইয়া মন্ত্রপাঠ করিয়া অগ্নির বায়ুকোণ হইতে ঈশাণকোণ যাবৎ জলধারা দিবে, যথা- “প্রজাপতিঋষিঃ সরস্বতীদেবতা উদকাঞ্জলিসেকে বিনিয়োগঃ। ওঁ সরস্বত্যনুমন্যস্ব॥” পুনর্ব্বার জলাঞ্জলি লইয়া মন্ত্রপাঠ করিয়া দক্ষিণবৰ্ত্তে জলধারায় অগ্নিকে বেষ্টন করিবে, যথা- “প্রজাপতিঋষিস্ত্রিষ্টুপচ্ছন্দঃ সবিতাদেবতা অগ্নিপৰ্যক্ষণে বিনিয়োগঃ। ওঁ দেব সবিতঃ প্ৰসুৰ যজ্ঞং প্ৰসুৰ যজ্ঞপতিং ভগায় দিব্যে গন্ধৰ্ব্বঃ কেতপুঃ কেতন্নঃ পুনাতু বাচস্পতির্বাচন্ন স্বদতু।”

অতঃপর দক্ষিণজানু উত্তোলন করিয়া করযোড়ে পাঠ্য- “ওঁ তপশ্চ তেজশ্চ শ্রদ্ধা চ হ্রীশ্চ সত্যঞ্চাক্রোধশ্চ ত্যাগশ্চ ধৃতিশ্চ ধৰ্ম্মচ্চ সত্বশ্চ বাক্ চ মনশ্চ আত্মা চ ব্ৰহ্ম চ তানি প্রপদ্যে তানি মামবন্তু।” অনন্তর দক্ষিণজানু উত্তোলন করিয়া উপরে দক্ষিণহস্ত এবং নিম্নে বামহস্ত রাখিয়া, ফল, পুষ্প ও কুশ মুষ্টিবদ্ধ করিয়া বিরূপাক্ষজপ করিবে। যথা- “পরমেষ্ঠিঋষিরুদ্ররূপোহগ্নিদেবতা বিরূপাক্ষজপে বিনিয়োগঃ।

ওঁ ভূর্ভূবঃস্বরোঁ মহান্তমাত্মানাং প্রপদ্যে বিরূপাক্ষোঽসি দন্তাঞ্জিস্তস্য তে শয্যাপর্ণে, গৃহান্তরীক্ষে বিমিতং হিরণ্ময়ং তদ্দেবানাং হৃদয়ান্যস্ময়ে কুম্ভেহস্তঃ সন্নিহিতানি। তানি বলভৃচ্চ বলসাচ্চ রক্ষণোস্তুহপ্রমণী অনিমিষিৎ। সত্যং যত্তে দ্বাদশ পুত্রাস্তে ত্বা সংবৎসরে সংবৎসরেণ কামপ্রেণ যাজয়িত্বা, পুনব্রহ্মচর্য্যমুপয়ন্তি। ত্বং দেবে ব্রাহ্মণোঽস্মহং মনুষ্যেষু।

ব্রাহ্মণো বৈ ব্রাহ্মণমুপধাবত্যুপধাবামিঃ জপন্তং মা মা প্রতিজাপীৰ্জ্জুহ্বন্তং মা মা প্রতিহৌষীঃ কুৰ্ব্বন্তং মা মা প্ৰতিকর্ষীস্ত্বাং প্ৰপদ্যে॥ তুয়া প্রসূত ইদং কর্ম্ম করিষ্যামি। তন্মে রাধ্যতাং, তন্মে সমৃদ্ধতাং, তন্মে উপপদ্যতাং । সমুদো মা বিশ্বব্যচা ব্রহ্মানুজানাতু, তুথো মা বিশ্ববেদা ব্রহ্মণঃ পুত্রোঽনুজানাতু, শ্বাত্রো মা প্রচেতা মৈত্রাবরুণোহনুজানাতু। তস্মৈ বিরূপাক্ষায় দন্তাঞ্জয়ে, সমুদ্রায় বিশ্বব্যচসে, তুথায় বিশ্ববেদসে, শ্বাত্রায় প্রচেতসে, সহস্রাক্ষায় ব্রহ্মণঃ পুত্ৰায় নমঃ ॥”

অনন্তর গৃহীত কুশ ঈশানকোণে ফেলিয়া ফল ও পুষ্প ব্রহ্মাকে নিবেদন করিবে। পরে প্রকৃতকর্ম্ম করিবে।

প্রকৃতকৰ্ম্ম

প্রথমে সঙ্কল্প করিবে, যথা- “বিষ্ণুরোঁ তৎসৎ অদ্য মাঘেমাসি মকররাশিছে ভাস্করে শুক্লেপক্ষে শ্রীপঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্ম্মা শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবীপ্রীতিকামঃ (পরার্থে-অমুকগোত্রস্য শ্রীঅমুকসঙ্কল্পিত) শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবীল্লেখনীমস্যাধার পূজাকৰ্ম্মাঙ্গীভূত-হোমকর্ম্মণি ওঁ ঐং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ স্বাহা ইতি মন্ত্রেণ প্রত্যেকেন পঠিত্বেন ইয়ৎসংখ্যক (সংখ্যা উল্লেখ্য) সাজ্যবিল্বপত্রৈহোমমহং করিষ্যে।” পরার্থে করিষ্যামি)৷

অনন্তর অগ্নির পশ্চিমে তিলমিশ্রিত ঘৃতপাত্র উত্তরাগ্র কুশোপরি স্থাপন করতঃ একটি প্রাদেশপ্রমাণ ঘৃতাক্ত সমিধ অমন্ত্রক অগ্নিতে আহুতি দিয়া মহাব্যাহৃতিহোম করিবে, যথা- “প্রজাপতিঋষিগায়ত্রীছন্দঃ অগ্নিদেবতা মহাব্যাহৃতিহোমে বিনিয়োগঃ। ওঁ ভূঃ স্বাহা। প্রজাপতিঋষিরুঞ্চিক্‌ছন্ধঃ বায়ুদেবতা মহাব্যাহৃতিহোমে বিনিয়োগঃ।

ওঁ ভুবঃ স্বাহা। প্রজাপতিঋষিরনুষ্টুপচ্ছন্দঃ সূর্যদেবতা মহাব্যাহৃতিহোমে বিনিয়োগঃ। ওঁ স্বঃ স্বাহা।” হোমের পর হুতশেষ (হাত-ঝাড়া) পাত্রান্তরে রাখিবে। পরে সঙ্কল্পিত বিল্বপত্রের অর্চ্চনা করিবে, যথা- “বং এতাভ্যো সাজ্যবিল্বপত্রেভ্যো নমঃ। এতদধিপতয়েদেবায় ওঁ ব্রহ্মাবিষ্ণু শিবায় নমঃ। সম্প্রদানায় ওঁ শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ নমঃ॥”

অতঃপর “ওঁ লং শ্রীশ্রীসরস্বতীদেব্যৈ স্বাহা” মন্ত্রে এক একটি বিল্বপত্র ঘৃতাক্ত করিয়া হোম করিবে। পরে পুনরায় মহাব্যাহৃতিহোম করতঃ একটি ঘৃতাক্ত প্রাদেশপ্রমাণ সমিধ অমন্ত্রক অগ্নিতে আহুতি দিয়া উদীচ্যকর্ম্ম করিবে।

উদীচ্যকৰ্ম্ম

প্রথমে প্রায়শ্চিত্তহোমের সঙ্কল্প করিবে, যথা- “বিষ্ণুরোঁ তৎসদদ্য মাঘেমাসি মকররাশিস্থে ভাস্করে শুক্লেপক্ষে শ্রীপঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্ম্মা কৃতেঽস্মিন্ হোমকৰ্ম্মাণি যৎকিঞ্চিৎবৈগুণ্যংজাতং তদ্দোষপ্রশমনায় ব্যস্তসমস্ত মহাব্যাহৃতিভিঃ প্রায়শ্চিত্তহোমমহং করিষ্যে।”

অতঃপর “বিধু” নামক অগ্নির আবাহনাদি করিবে, যথা- “ওঁ অগ্নে ত্বং বিধুনামাসি।” মন্ত্রে অগ্নির নামকরণ করিয়া ধ্যান করিবে, যথা- “ওঁ পিঙ্গভ্রূশ্মশ্রুকেশাক্ষঃ পীণাঙ্গজঠরোঽরুণঃ। ছাগস্থঃ সাক্ষসূত্রোহগ্নি সপ্তার্চিঃ শক্তিধারকঃ।”

অতঃপর “ওঁ বিধুনামাগ্নে ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ, ইহতিষ্ঠ ইহতিষ্ঠ, ইহসন্নিধেহি, ইহসন্নিরুধ্যস্ব, অত্রাধিষ্ঠানং কুরু, মমপূজাং গৃহাণ” মন্ত্রে আবাহন করিয়া “এষ গন্ধঃ ওঁ বিধুনামাগ্নয়ে নমঃ, এতৎ পুষ্পম্ ওঁ বিধুনামাগ্নয়ে নমঃ, এষ ধূপঃ ওঁ বিধুনামাগ্নয়ে নমঃ, এষ দীপঃ ওঁ বিধুনামাগ্নয়ে নমঃ, এতৎ হবিনৈবেদ্যম্ ওঁ বিধুনামাগ্নয়ে স্বাহা” মন্ত্রে পঞ্চোপচারে পূজা করিয়া একটি প্রাদেশপ্রমাণ ঘৃতাক্ত সমিধ অমন্ত্রক অগ্নিতে নিক্ষেপ করিবে।

অনন্তর মহাব্যাহৃতিহোম করিয়া ব্যস্তসমস্তমহাব্যাহৃতিহোম করিবে। যথা-
“প্রজাপতিঋষিগায়ত্রীচ্ছন্দঃ অগ্নিদেবতা ব্যস্তসমস্ত- মহাব্যাহৃতিহোমে বিনিয়োগঃ। ওঁ ভুঃ স্বাহা।
বায়ুদেবতা ব্যস্তসমস্ত- মহাব্যাহৃতিহোমে বিনিয়োগঃ। ওঁ ভুবঃ স্বাহা।
প্রজাপতিঋষিরনুষ্টুপ্‌ছন্দঃ সূর্য্যোদেবতা ব্যস্তসমস্ত- মহাব্যাহৃতিহোমে বিনিয়োগঃ। ওঁ স্বঃ স্বাহা।
প্রজাপতিঋষিবৃহতীচ্ছন্দঃ প্রজাপতিদেবতা ব্যস্তসমস্তমহাব্যাহৃতিহোমে বিনিয়োগঃ। ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ স্বাহা”

পরে পুনরায় মহাব্যাহৃতিহোম করিয়া একটি ঘৃতাক্ত প্রাদেশ পরিমিত কুশ অগ্নিতে আহুতি দিয়া নবগ্রহহোম করিবে।

নবগ্রহহোম

রবিগ্রহ— “ওঁ আকৃষ্ণেন রজসা বর্তমানো নিবেশয়ন্নমৃতং মৰ্ত্তঞ্চ। হিরণ্যয়েন সবিতা রথেনা দেবো যাতি ভূবনানি পশ্যন্ স্বাহা, ইদং রবিগ্রহায় স্বাহা”৷৷ ১ ৷৷
সোমগ্রহ— “ওঁ আ প্যায়স্ব সমেতু তে, বিশ্বতঃ সোমবৃষ্ণ্যম্। ভবা বাজসা সঙ্গথে স্বাহা, ইদং সোমগ্রহায় স্বাহা” ৷৷২৷৷
মঙ্গলগ্রহ— “ওঁ অগ্নিমূৰ্দ্ধা দিবঃ ককুৎপতিঃ পৃথিব্যা অয়ম্। অপাং রেতাংসি জিম্বতি স্বাহা, ইদং মঙ্গলগ্রহায় স্বাহা”৷৷৩৷৷
বুধগ্রহ—“ওঁ অগ্নে বিবস্বদুষসশ্চিত্রং রাধো অমর্ত্য। আদাশুষে জাতবেদো বহাত্বমদ্যা দেবা ঊষধঃ স্বাহা, ইদং বুধগ্রহায় স্বাহা”৷৷ ৪৷৷
বৃহস্পতিগ্রহ —“ওঁ বৃহস্পতে পরিদীয়া রথেন, রক্ষোহামিত্রা অপবাধমানঃ। প্রভঞ্জনং সেনাঃ প্রণো যুধা জয়ন্নস্মাকমেধ্যবিতা রথানাং স্বাহা, ইদং বৃহস্পতিগ্রহায় স্বাহা”৷৷ ৫৷৷
শুক্রগ্রহ—“ওঁ শুক্রন্তেহন্যদ্যজতন্তেঽন্যদ্ বিষ্ণুরূপে অহনী দ্যৌরিবাসি। বিশ্বা হি মায়া অবসি স্বধাবন, ভদ্ৰা যে পূষন্নিহরাতিরস্তু স্বাহা, ইদং শুক্রগ্রহায় স্বাহা”৷৷ ৬৷৷
শনিগ্রহ—“ওঁ শন্নো দেবীরভিষ্টয়ে শন্নো ভবন্তু পীতয়ে। শং যোরভিস্রবন্তু নঃ স্বাহা, ইদং শনিগ্রহায় স্বাহা” ৷৷ ৭৷৷
রাহুগ্রহ—“ওঁ কয়ানশ্চিত্র আভুবদূতী সদা বৃধঃ সখা। কয়া শচিষ্টয়া বৃতা স্বাহা, ইদং রাহুগ্রহায় স্বাহা”৷৷৮৷৷
কেতুগ্রহ—“ওঁ কেতুং কৃন্বন্ন কেতবে পেশোমৰ্য্যা অপেশসে। সমুষদ্ভিরজায়থা স্বাহা, ইদং কেতুগ্রহায় স্বাহা”৷৷ ৯৷৷
পরে দিকপালহোম করিবে।

দিকপালহোম

ইন্দ্র—“ওঁ ত্রাতারমিন্দ্রমবিতারমিন্দ্রং হবে হবে সুহবং শূরমিন্দ্রম্। হুবে নু শত্রুং পুরুহূতমিন্দ্রমিদং হবির্ম্মর্যবা বেতিন্দ্ৰঃ স্বাহা”৷৷ ১৷৷
অগ্নি—“ওঁ অগ্নিদূতং বৃণীমহে হোতারং বিশ্ববেদসম্। অস্য যজ্ঞস্য সুক্রতুং স্বাহা” ৷৷ ২৷৷
যম—“ওঁ নাকো সুপর্ণমূপযৎ পতয়ন্তং, হৃদা বেনন্তোহভ্যচক্ষুত ত্বা। হিরণ্যপক্ষং বরুণস্য দূতং যমস্য যোনৌ শকুসং ভুরণ্যং স্বাহা”৷৷ ৩৷৷
নৈর্ঝত—“ওঁ বেখাহি নিতীনাং বজ্রহস্ত পরিবৃজম্। অহরহঃ শুল্ক্যুঃ পরিদদামি স্বাহা” ৷৷ ৪৷৷
বরুণ—“ওঁ আনো মিত্রা বরুণা ঘৃতৈর্গব্যুতি মুক্ষতম্। মধ্বা রজাংসি সুক্রতু স্বাহা” ৷৷ ৫৷৷
বায়ু—“ ওঁ বাত আ বাতু ভেষজং শম্ভু ময়োভু নো হৃদে । প্রণ আয়ুংষি তারিষৎ স্বাহা” ৷৷ ৬ ৷৷
কুবের—“ওঁ ক্কেয়থ কেদসি পুরুত্রাচিদ্ধিতে নমঃ। অলর্ষিয়ুষ্ম খজকৃৎ পুরন্দর, প্রগায়ত্রা অগাসিষু স্বাহা” ৷৷ ৭৷৷
ঈশান—“ওঁ অভি ত্বা শূর নোনুমো অদুগ্ধা ইব ধেনবঃ। ইশানমস্য জগতঃ স্বদৃশমীশানমিন্দ্ৰ তন্তুষঃ স্বাহা”৷৷৮৷৷
ব্ৰহ্মা—“ওঁ ব্রহ্ম জজ্ঞানং প্রথমং পুরস্তাদ, বিসমিতঃ সুরুচো বেন আবঃ। স বুধ্ন্যা উপমা অস্য বিষ্ঠাঃ সতশ্চ যোনিমসতশ্চবিবঃ স্বাহা”৷৷ ৯৷৷
অনন্ত—“ওঁ চৰ্ষণীধৃতং মঘবানমুক্থ্যমিন্দ্রঃ গিরো বৃহতীরভ্যনূষত। বাবৃধানং পুরুহূতং সুবৃত্তিভিরমর্ত্যং জরমানং দিবে স্বাহা” ৷৷ ১০৷৷
অতঃপর প্রত্যক্ষদেবতাগণের হোম করিবে।

প্রত্যক্ষদেবতা হোম

ওঁ গণেশায় স্বাহা, ওঁ ব্রহ্মণে স্বাহা, ওঁ চতুর্ব্বেদেভ্যো স্বাহা, ওঁ অষ্টাদশপুরাণেভ্যো স্বাহা, ওঁ সৰ্ব্বশাস্ত্রেভ্যো স্বাহা, লেখনী-মস্যাধারাদিভ্যো স্বাহা, ও গ্রাম্যদেবতাভ্যো স্বাহা, ওঁ নারায়ণায় স্বাহা, ওঁ শিবায় স্বাহা, ওঁ গাং গঙ্গায়ৈ স্বাহা, ওঁ যাং যমুনায়ৈ স্বাহা।

অতঃপর মহাব্যাহৃতিহোম করতঃ একটি ঘৃতাক্ত সমিধ অমন্ত্রক অগ্নিতে নিক্ষেপ করিয়া দক্ষিণজানু ভূপাতিত করতঃ জলাঞ্জলি গ্রহণ করিয়া মন্ত্রপাঠ সহকারে অগ্নিপর্য্যক্ষণ করিবে, যথা- “প্রজাপতিঋষিস্ত্রিষ্টুপ্‌ছন্দঃ সবিতাদেবতা অগ্নিপৰ্যক্ষণে বিনিয়োগঃ।

ওঁ দেব সবিতঃ প্ৰসুৰ যজ্ঞং প্ৰসুৰ যজ্ঞপতিং ভগায়। দিব্যো গন্ধৰ্ব্বঃ কেতুপুঃ কেতন্নঃ পুনাতু বাচস্পতিৰ্ব্বাচনঃ স্বদতু॥” মন্ত্রপাঠ করিয়া হস্তস্থিত জলদ্বারা অগ্নিবেষ্টন করিয়া, পুনরায় জলাঞ্জলি গ্রহণ করিয়া স্থণ্ডিলের দক্ষিণদিকে পশ্চিমদিক হইতে পূর্ব্বদিক পর্য্যন্ত মন্ত্রপাঠ সহকারে জলধারা দিবে, যথা- “প্রজাপতিঋষিরদিতিদেবতা উদকাঞ্জলিসেকে বিনিয়োগঃ। ওঁ অদিতে অন্বমংস্থা।”

পুনর্ব্বার জলাঞ্জলি গ্রহণ করিয়া মন্ত্রপাঠ সহকারে অগ্নির পশ্চিমদিক হইতে দক্ষিণদিক দিয়া উত্তরদিক পর্য্যন্ত জলধারা দিবে, যথা- “প্রজাপতিঋষিরনুমতিদেবতা উদকাঞ্জলিসেকে বিনিয়োগঃ। ওঁ অনুমতে অন্বমংস্থা৷৷”

পুনরায় মন্ত্রপাঠ সহকারে জলাঞ্জলি গ্রহণ করতঃ অগ্নির উত্তরদিকে পশ্চিমকোণ হইতে পূর্ব্ব পর্য্যন্ত জলধারা দিবে, যথা- “প্রজাপতিঋষিঃ সরস্বতীদেবতা উদকাঞ্জলিসেকে ওঁ বিনিয়োগঃ। ওঁ সরস্বত্যন্বমংস্থা।”

অনন্তর উত্তান হস্তদ্বয় মুষ্টিবদ্ধ করিয়া প্রাদেশ প্রমাণ কতিপয় কুশ গ্রহণ করতঃ প্রতিবারই মন্ত্রপাঠ সহকারে তিনবার কুশের অগ্র, মধ্য এবং মূলদেশ ঘৃতাক্ত করিবে, যথা- “প্রজাপতিঋষিৰ্ব্বায়োদেবতা দৰ্ভতৃণাভ্যঞ্জনে বিনিয়োগঃ। ওঁ অক্তং রিহানা ব্যন্তু বয়ঃ ॥”

অতঃপর ঐ কুশগুলি জলে অভ্যুক্ষণ করিয়া মন্ত্রপাঠ সহকারে আহুতি দিয়া দর্ভজুটিকা হোম করিবে, যথা- “প্রজাপতিঋষিরনুষ্টুপ্‌ছন্দো রুদ্রোদেবতা দর্ভজুটিকাহোমে বিনিয়োগঃ। ওঁ যঃ পশূনামধিপতীরুদ্রস্তুন্তিচরো বৃষা। পশূনম্মকাং মা হিংসীরেদস্তু হুতং ভব স্বাহা।”

অনন্তর “মৃড়” নামক অগ্নির আবাহন করিয়া পূর্ণাহুতি দিবে, যথা- “ওঁ অগ্নেত্বং মৃড়নামাসি মৃড়নামাগ্নে ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ, ইহতিষ্ঠ ইহুতিষ্ঠ, ইহসন্নিধেহি, ইহসন্নিরুধ্যস্ব, অত্রাধিষ্ঠানং কুরু, মম পূজাং গৃহাণ” মন্ত্রে আবাহন করিয়া ধ্যান পাঠ করতঃ পঞ্চোপচারে পূজা করিবে, যথা- “এষ গন্ধঃ ওঁ মৃড়নামাগ্নয়ে নমঃ, এতৎ পুষ্পং ওঁ মৃড়নামাগ্নয়ে নমঃ, এষ ধূপঃ ও মৃড়নামাগ্নয়ে নমঃ, এষ দীপ ওঁ মৃড়নামাগ্নয়ে নমঃ, এতৎ হবিনৈবেদ্যম্ ওঁ মৃড়নামাগ্নয়ে স্বাহা।”

অনন্তর ফলপুষ্পযুক্ত প্রচুর ঘৃত গ্রহণ করিয়া পরার্থে- যজমানসহিত) দণ্ডায়মান হইয়া শঙ্খঘণ্টাদি বাদ্য সহকারে পূর্ণরূপে প্রজ্বলিত অগ্নিতে মন্ত্রপাঠ সহকারে আহুতি দিবে যথা- “প্রজাপতিঋষিৰ্ব্বিরাড়ুগায়ত্রীছন্দো ইন্দ্রোদেবতা যশস্কামস্য যজ্ঞনীয়প্রয়োগে বিনিয়োগঃ। ওঁ পূর্ণহোমং যশসে জুহোমি, যোহস্মৈ জুহোতি বয়মস্মৈ দদাতি, বরং বৃণে যশসা ভামি লোকে স্বাহা।।”

অনন্তর ব্রহ্মদক্ষিণার্থ পূর্ণপাত্রানুকল্প ভোজ্যোৎসর্গ করিবে, যথা- বামহস্তে ভোজ্য ধারণ করিয়া,“বং এতস্মৈ পূর্ণপাত্রানুকল্পভোজ্যায় নমঃ” মন্ত্রে কুশবারিদ্বারা শোধন করিয়া “ এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ পূর্ণপাত্রানুকল্পভোজ্যায় নমঃ” মন্ত্রে পুষ্পাদিদ্বারা অর্চ্চনা করিয়া “এতদধিপতয়েদেবায় ওঁ বিষ্ণবে নমঃ, সম্প্রদানায় ওঁ ব্রহ্মণে নমঃ” মন্ত্রে স্পর্শ করিয়া উৎসর্গবাক্য পাঠ করিবে, যথা- “বিষ্ণুরোঁ তৎসদদ্য মাঘেমাসি মকররাশিস্থে ভাস্করে শুক্লেপক্ষে শ্রীপঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্ম্মা কৃতৈত‍ হোমকৰ্ম্মণ সাঙ্গতার্থং দক্ষিণামিদং পূর্ণপাত্রানুকল্পভোজ্যং শ্রীবিষ্ণুদৈবতং যথাসম্ভবগোত্র নাম্নে ব্রহ্মণে অহং সম্প্রদদে” মন্ত্রে দক্ষিণান্ত করিয়া

“ওঁ চতুৰ্ব্বদনসাস্থ চতুর্ব্বেদকুটুম্বিনে। দ্বিজানুষ্ঠেয় সৎকর্ম্ম সাক্ষিণে ব্রহ্মণে নমঃ। ওঁ তুমগ্নে সৰ্ব্বভূতানামস্তশ্চরসি পাবক। হব্য বদসি দেবানামতঃ শান্তিং প্রযচ্ছমে৷৷ ওঁ পিঙ্গাক্ষ লোহিতগ্রীব প্রতাপিংশ্চ হুতাশন। সাক্ষী ত্বং পুণ্যপাপানাং ধনঞ্জয় নমোহস্তুতে॥”মন্ত্রে অগ্নিকে প্রণাম করিবে। অনন্তর কুশবারি দ্বারা “ওঁ ব্রহ্মণ ক্ষমস্ব” মন্ত্রে ব্রহ্মার বিসর্জ্জন করিবে।

তৎপরে স্থণ্ডিলের ঈশানকোণ হইতে কিঞ্চিৎ ভস্ম লইয়া মন্ত্রপাঠ সহকারে যথাযথ স্থানে তিলকধারণ করিবে, যথা, ললাটে—“ওঁ কশ্যপস্য এ্যায়ুষম্॥” কণ্ঠে- “ওঁ জমদগ্নেস্রায়ুষম্” বাহুমূলে-“ওঁ যদ্দেবানাং এ্যায়ুষম্॥” হৃদয়ে-“ওঁ তন্মেঽস্তু ত্র্যায়ুষম্।।” পরে “ওঁ অগ্নে ত্বং সমুদ্রং গচ্ছ” মন্ত্রে জলদ্বারা অগ্নির বিসর্জ্জন করতঃ “ওঁ পৃথ্বি ত্বং শীতলা ভব” মন্ত্রে অগ্নির ঈশানকোণে দুগ্ধাদি দিবে। অনন্তর দক্ষিণান্ত, অচ্ছিদ্রাবধারণ ও বৈগুণ্যসমাধান করিবে।

দক্ষিণাবাক্য দেবী সরস্বতী পূজায়

“বিষ্ণুরোঁ তৎসদদ্য মাঘেমাসি মকররাশিস্থে ভাস্করে শুক্লেপক্ষে শ্রীপঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশৰ্ম্মা কৃতৈতৎ শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবী- লেখনীমস্যাধারপূজাঙ্গীভূতহোমকৰ্ম্মণঃ প্রতিষ্ঠার্থং দক্ষিণামিদং যৎকিঞ্চিৎ কাঞ্চনমূল্যং অনুকল্পং রৌপ্যখণ্ডং হরীতকী ফলং বা যথাসম্ভবগোত্র নাম্নে ব্রাহ্মণায়াহং সম্প্রদদে।”

অনন্তর অচ্ছিদ্রাবধারণ করিবে, যথা- “ওঁ কৃতৈত‍ শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবীলেখনীমস্যাধারকর্ম্মাঙ্গী- ভূতহোমকাচ্ছিদ্রমন্তু।” “ওঁ অন্তু” (প্রতিবচন)। বৈগুণ্যসমাধান করিবে, যথা- “বিষ্ণুরোঁ তৎসদদ্য মাঘেমাসি মকররাশিছে ভাস্করে শুক্লেপক্ষে শ্রীপঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্ম্মা কৃতৈতৎ শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবী-লেখনীমস্যাধারপূজাঙ্গী ভূতহোমকৰ্ম্মণি যদ্বৈগুণ্য জাতং তদ্দোষ প্রশমনায় শ্রীবিষ্ণোনাম স্মরণমহং করিষ্যে।”

অতঃপর “ওঁ বিষ্ণু” মন্ত্র দশবার জপ করিয়া ভগবৎ প্রণাম করিবে, যথা- “ওঁ নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণহিতায় চ। জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।।” পরে শান্ত্যাশীর্ব্বাদ গ্রহণ করিবে।

শ্রীশ্রীসরস্বতী স্তোত্রম্॥

বৃহস্পতিরুবাচ –
ওঁ সরস্বতী নমস্যামি চেতনা হৃদি সংস্থিতাম্।
কণ্ঠস্থাং পদ্মযোনিস্থাং হ্রীং হ্রীংকারশ্রিতাং শুভাম্৷৷ ১ ৷৷
মতিদাং বরদাঞ্চৈব সৰ্ব্বকামফলপ্রদাম্।
কেশবস্য প্রিয়াং দেবীং বীণাহস্তাং বরপ্রদাম্॥ ২॥
ঐং ঐং মন্ত্রপ্রিয়াং নিত্যাং কুমতিধ্বংসকারিণীম্।
সুপ্রকাশাং নিরলম্বামজ্ঞানতিমিরাপহাম্৷৷ ৩৷৷
মোক্ষদাঞ্চ সদা নিত্যাং শুভদাং শোভনপ্রিয়াম্।
পদস্থিত কুণ্ডলিনীং শুক্লবর্ণাং মনোহরাম্।
আদিত্যমণ্ডলে লীনাং প্রণমামিকুলপ্ৰিয়াম্৷৷ ৪৷
ঋষিরুবাচ-
ইতি সংস্তুতা দেবী বাগীশেন মহাত্মনা।
আত্মানং দর্শয়ামাস শরদিন্দুসমপ্রভাম্॥ ৫॥
দেব্যুবাচ-
বরং বৃণয় ভদ্রং তে যত্তে মনসি বৰ্ত্ততে৷৷ ৬৷৷
বৃহস্পতিরুবাচ—
বরদা যদি মে দেবি দিব্যজ্ঞানং প্রযচ্ছ মে৷৷৭৷৷
দেব্যুবাচ—
দত্তং তে নিৰ্ম্মলং জ্ঞানং কুমতিধ্বংসকারণম্।
স্তোত্রেনানেন যে ভক্ত্যা মাংস্তবন্তি সদা নরাঃ।
তে লভন্তে পরজ্ঞানং মমতুল্য পরাক্রমম্॥ ৮॥ 
ত্রিসন্ধ্যাং প্রযতো ভূত্বা যস্তিদং পঠতে সদা।
তস্য কণ্ঠে সদা বাসং করিষ্যামি ন সংশয়ঃ ॥ ৯॥
ইতি শ্রীবৃহস্পতিকৃতং শ্রীশ্রীসরস্বতীস্তোত্রং সম্পূর্ণম্।

শ্রীশ্রীসরস্বতী কবচম্॥

ভৃগুরুবাচ- ওঁ ব্ৰহ্মন্ ব্রহ্মবিদ্যাং শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মজ্ঞানবিশারদ। সৰ্ব্বজ্ঞ সৰ্ব্বজনক সৰ্ব্বেস সৰ্ব্বপূজিত৷ সরস্বত্যাশ্চ কবচং ব্রুহি বিশ্বজয়ং প্রভো।
অজাতযাম মন্ত্রাণাং সমূহ-সংযুতং পরম্।
ব্রহ্মোবাচ— শৃণু বৎস প্রবক্ষ্যামি কবচং সৰ্ব্বকামদম্। শ্রুতিসারং শ্রুতিসুখং শ্রুত্যুক্তংশ্রুতি পূজিতম্৷৷ ১৷
উক্তং গোলোকে কৃষ্ণেণ মহ্যং বৃন্দাবনে বনে। রাসেশ্বরেণ বিভুনা রাসে চ রাসমণ্ডলে৷ ২৷৷
অতীব গোপনীয়ঞ্চ কল্পবৃক্ষ সমং পরম্। অশ্ৰুতাদ্ভূত মন্ত্রাণাং সমুহৈশ্চ সমন্বিতম্৷৷ ৩৷
যদ্ধৃত্বা পঠনাদ ব্রহ্মন্ বুদ্ধিমাংশ্চ বৃহস্পতিঃ। যদ্ধৃতা ভগবন্ শুক্র সৰ্ব্বদৈত্যেষু পূজিতঃ॥ ৪॥
পঠনাদ্বারণাদ্ বাগ্মী কবীন্দ্রো বাল্মিকী মুনিঃ। স্বায়ম্ভূবো মনুশ্চৈব যদ্ধৃতা সৰ্ব্বপূজিতঃ৷৷ ৫৷৷
কণাদো গৌতমঃ কণ্বঃ পাণিনিঃ শাকটায়নঃ। গ্রন্থঞ্চকার যদ্ধৃতা দক্ষঃ কাত্যায়ন স্বয়ম্॥ ৬॥
কৃত্বা বেদ-বিভাগঞ্চ পুরাণান্যখিলানি চ। চকার লীলামাত্রেণ কৃষ্ণদ্বৈপায়নঃ স্বয়ম্৷৷ ৭৷৷
শীতাতপশ্চ সংবৰ্ত্তো বশিষ্ঠশ্চ পরাশরঃ। যদ্ধৃত্বা পঠনাদ গ্রন্থং যাজ্ঞবল্কশ্চকার সঃ॥ ৮॥
ঋষ্যশৃঙ্গো ভরদ্বাজশ্চাৎ স্তীকো দেবলস্তথা। জৈগীষব্যোহধ জাবালীর্যদ্বৃত্বা সৰ্ব্বপূজিতঃ॥ ৯॥
কবচস্যাস্য বিপেন্দ্র ঋষিরেব প্রজাপতিঃ। স্বয়ং বৃহস্পতিশ্ছন্দো দেবো রাসেশ্বরঃ প্রভুঃ৷৷ ১০৷৷
সর্ব্বতত্ত্বপরিজ্ঞান সর্ব্বার্থসাধনেষু চ।কবিতাসু চ সৰ্ব্বাস বিনিয়োগঃ প্রকীৰ্ত্তিতঃ৷৷ ১১ ৷৷ 
ওঁ হ্রীং সরস্বত্যৈ স্বাহা শিরো যে পাতু সৰ্ব্বতঃ। শ্ৰীং বাগদেবতায়ৈ স্বাহা ভালং মে সৰ্ব্বদাবতু৷৷ ১২৷৷৷ 
ওঁ সরস্বত্যৈ স্বাহেতি শ্রোত্রং পাতু নিরন্তরম্। ওঁ শ্রীং হ্রীং ভারত্যৈ স্বাহা নেত্রযুগ্মং সদাবতু॥ ১৩ ৷৷
ওঁ হ্রীং বাগাদিন্যৈ স্বাহা নাসাং মে সৰ্ব্বতোবতু। হ্রীং বিদ্যাধিষ্ঠাতৃদেব্যৈ স্বাহা ওষ্ঠং সদাবতু৷৷ ১৪৷৷ 
ওঁ শ্রীং হ্রীং ব্রাহ্ম্যৈ স্বাহেতী দন্তপংত্তীঃ সদাবতু। ঐং ইতোকাক্ষরো মন্ত্রো মম কণ্ঠং সদাবতু৷৷ ১৫ ৷৷ 
ওঁ শ্রী হ্রীং পাতু মে গ্রীবাং স্কন্ধং মে শ্রীং সদাবতু। শ্রীং বিদ্যাধিষ্ঠাতৃদেব্যৈ, স্বাহা বক্ষং সদাবতু৷৷ ১৬৷৷ 
ওঁ হ্রীং বিদ্যাস্বরূপায়ৈ স্বাহা মে পাতু নাসিকাম্। ওঁ হ্রীং হ্রীং বাণ্যৈ স্বাহোত মম পৃষ্ঠং সদাবতু৷৷ ১৭৷৷
ওঁ সৰ্ব্ববৰ্ণাত্মিকায়ৈ চ পাযুগ্মং সদাবতু। বাগাধিষ্ঠাতৃদেব্যৈ চ সৰ্ব্বাঙ্গ মে সদাবতু৷৷ ১৮৷৷
ওঁ হ্রীং সৰ্ব্বকণ্ঠবাসিন্যৈ স্বাহা প্রাচ্যাং সদাবতু। ওঁ হ্রীং জিহ্বাগ্রবাসিন্যৈ স্বাহাগ্নিদিশি রক্ষতু৷৷ ১৯৷৷
ওঁ ঐং হ্রীং শ্রীং ক্লীং সরস্বত্যৈ বধুজনস্যৈ স্বাহা। সততং মন্ত্ররাজোঽয়ং দক্ষিণে মাং সদাবতু৷৷ ২০ ৷৷
ওঁ হ্রীং শ্রীং এ্যক্ষরো মন্ত্রো নৈত্যাং মন্ত্রো মে সদাবতু। করিজিহ্বাগ্রবাসিন্যৈ স্বাহা মাং বারুণেঽবতু ৷৷ ২১ ৷৷
ওঁ সদাম্বিকায়ৈ স্বাহা বায়ব্যে মাং সদাবতু। ওঁ গদ্যপদ্যবাসিন্যৈ স্বাহা মামুত্তরেঽবতু৷৷ ২২৷৷৷
ওঁ সৰ্ব্বশাস্ত্রবাসিন্যৈ স্বাহা ঐশান্যাং সদাবতু। ওঁ হ্রীং সৰ্ব্বপুজিতায়ৈ স্বাহা চৌদং সদাবতু৷৷ ২৩৷৷ 
ঐং হ্রীং পুস্তকবাসিন্যৈ স্বাহাহধো মাং সদাবতু। ওঁ গ্রন্থবীজস্বরূপায়ৈ স্বাহা মাং সৰ্ব্বদাহবতু৷৷ ২৪ ৷৷
ইতি তে কথিতং বিপ্ৰ সৰ্ব্বমন্ত্রৌঘবিগ্রহম্। ইদং বিশ্বজয়ং নাম কবচং ব্ৰহ্মরূপিণম্৷৷ ২৫৷৷৷
পুরা শ্রুতং ধর্ম্মক্ত্রাং পৰ্ব্বতে গন্ধমাদনে। তবোস্নেহান্মমরাখ্যাতং প্রবক্তব্যং ন কস্যচিৎ ৷৷ ২৬ ৷৷
গুরুমভ্যর্চ্চ বিধিবৎ বস্ত্রালঙ্কারচন্দনৈঃ। প্রণম্য দণ্ডদ্ভূমৌ কবচং ধারয়েৎ সুধী৷ ২৭৷
পঞ্চলক্ষজপেনৈব সিদ্ধস্তু কবচং ভবেৎ। যদি স্যাং সিদ্ধ কৰচো বৃহস্পতি সমো ভবেৎ৷৷ ২৮ ॥
মহাবাগ্মীশ্চ কবীন্দ্র ত্রৈলোক্যবিজয়ী ভবেৎ। শক্নোতি সৰ্ব্বং হেতুঞ্চ কবচস্য প্ৰসাদতঃ৷৷ ২৯৷৷
ইদং তে কাণ্বশাখোক্তং কথিতং কবচং মুনে। স্তোত্রং পূজা বিধানঞ্চ ধ্যানঞ্চ বন্ধনং তথা৷৷ ৩০৷৷
ইতি শ্রীব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণে প্রকৃতিখণ্ডে নারায়ণনারদসংবাদে
শ্রীশ্রীসরস্বতীকবচং সমাপ্তম্।

শান্তিজল মন্ত্র।

করানশ্চিত্যস্য বামদেব ঋষি গায়ত্রীছন্দ ইন্দ্রোদেবতা শান্তিকর্মনি জজপে বিনিয়োগঃ। ওঁ কয়ানশ্চিত্র আভূব দূতী সদা বৃধঃ সখা। কয়া শচিশ্চয়া বৃতা। ওঁ কত্ত্বা সত্যো মদানাং মংহিষ্টৌ মৎসদন্ধসঃ। দৃঢ়া চিদারুজে বসু। ওঁ অভী যুণঃ সখীনামবিতা জরিতৃণাম্। শতং ভব্যস্যূতয়ে৷৷ ওঁ স্বস্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি ন পূষা বিশ্ববেদাঃ। স্বস্তি নস্তাক্ষো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতিদধাতু॥ ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি।

ওঁ শান্তরম্ভ শিবঞ্চস্তু বিনশ্যত্যশুভঞ্চ যৎ। যত এবাগতং পাপং তত্রৈব প্রতিগচ্ছতু স্বাহা। ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি।

দক্ষিণাবাক্য

“বিষ্ণুরোঁ তৎসদদ্য মাঘেমাসি মকররাশিস্থে ভাস্করে শুক্লেপক্ষে শ্রীপঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশৰ্ম্মা কৃতৈতৎ শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবী লেখনীমস্যাধারপূজাঙ্গীভূতহোমকৰ্ম্মণঃ প্রতিষ্ঠার্থং দক্ষিণামিদং যৎকিঞ্চিৎ কাঞ্চনমূল্যং অনুকল্পং রৌপ্যখণ্ডং হরীতকী ফলং বা যথাসম্ভবগোত্র নাম্নে ব্রাহ্মণায়াহং সম্প্রদদে৷৷”

অনন্তর অচ্ছিদ্রাবধারণ করিবে, যথা—“ওঁ কৃতৈতৎ শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবীলেখনীমস্যাধারকর্ম্মাঙ্গীভূত হোম- কর্ম্মাচ্ছিদ্রমন্তু।” “ওঁ অন্তু” (প্রতিবচন)।

বৈগুণ্যসমাধান করিবে, যথা- “বিষ্ণুরোঁ তৎসদদ্য মাঘেমাসি মকররাশি  ভাস্করে শুক্লেপক্ষে শ্রীপঞ্চম্যান্তিথৌ অমুকগোত্রঃ শ্রীঅমুকদেবশর্ম্মা  কৃতৈত‍ শ্রীশ্রীসরস্বতীদেবী-লেখনীমস্যাধার পূজাঙ্গী ভূতহোমকৰ্ম্মণি যদ্বৈগুণ্য জাতং তদ্দোষ প্রশমনায় শ্রীবিষ্ণোনাম স্মরণমহং করিষ্যে।”

অতঃপর “ওঁ বিষ্ণু” মন্ত্র দশবার জপ করিয়া ভগবৎ প্রণাম করিবে, যথা- “ওঁ নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণহিতায় চ। জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ॥” পরে শান্ত্যাশীর্ব্বাদ গ্রহণ করিবে।

আত্মসমর্পণ। করজোড়ে – “ওঁ মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং ভক্তিহীনং সুরেশ্বরী, যৎ পূজিতং ময়াদেবি পরিপূর্ণ তদস্তুমে। ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চ যদ্ভবেৎ পূর্ণং ভবতু তৎ সর্বং তৎপ্রসাদাৎ সুরেশ্বরি।”

এক গণ্ডুষ জল লইয়া – “ওঁ প্রীয়তাং পুণ্ডরীকাক্ষঃ সর্বযজ্ঞেশ্বরোহরি। তস্মিন্ তুষ্টে জগৎ তুষ্ট প্রীণিতে প্রীণিতং জগৎ। ইদং কর্মং শ্রীকৃষ্ণ চরণে সমর্পিতমস্তু৷৷ ওঁ মাতাপিতা ভয়স্ত্রাতা জননী জনতারিণী। সঙ্কটে ত্রাহি শঙ্করি ক্ষেমঙ্করি নমোহস্তুতে। পাপোহয়ং পাপ কর্ম্মাহয়ং পাপাত্মা পাপসম্ভবঃ। ত্রাহিমাং পুণ্ডরিকাক্ষঃ সর্ব্বপাপঃ হর হরি

সরস্বতী পূজায় বিসর্জন পদ্ধতি

সরস্বতী পূজা সংহারমুদ্রা

সংহারমুদ্রা দ্বারা নির্মাল্য গ্রহণের সহিত সুষুম্নাপথে সেই পুষ্পের গন্ধ সহিত দেবতার তেজ নিজ হৃদয়পদ্মে আনয়ন করিবে। তৎপরে ঈশানকোণে ত্রিকোণমণ্ডল করিয়া “সরস্বতি ক্ষমস্ব” পাঠ করিয়া নির্মাল্যপুষ্প হইতে একটি পুষ্প গ্রহণ করিয়া ত্রিকোণমণ্ডলে রাখিয়া “এতৎ পাদ্যং ওঁ নির্মাল্যবাসিনৈ নমঃ” বলিয়া পূজা করিবে।

যে ঘটে দেবপূজা হইয়াছে, সেই ঘটে হাত দিয়া একটু নাড়িয়ে দিতে হইবে। ঘটনাড়ানোর সময়ে নিম্নলিখিত মন্ত্রপাঠ করিবে।
ওঁ গচ্ছ গচ্ছ পরং স্থানং সস্থানং পরমেশ্বরি।
পূজাধারণকালে চ পুনরাগমনায় চ৷

১.বাড়িতে শিব পূজার নিয়ম ও সঠিক পদ্ধতি

Share Please:

Leave a Comment