
ব্রতের পালনীয় নিয়ম
মহা শিবরাত্রি পূজা বিধি—শিবরাত্রি হিন্দু ধর্মের একটি বিশেষ তিথি, যা মহাদেব শিবের আরাধনার জন্য নিবেদিত। এই ব্রত ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়। এটি সমস্ত ভক্তদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রত, যা পালন করলে মহাদেবের অপার কৃপা লাভ করা যায়।
শিবরাত্রির ব্রত পালন করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। পুরুষ ও স্ত্রীলোক নির্বিশেষে সবাই এই ব্রত পালন করতে পারে। ব্রত শুরুর আগের দিন হবিষ্যি বা নিরামিষ আহার গ্রহণ করতে হয়। রাত্তিরে সাধারণ বিছানায় না শুয়ে কম্বল বা খড়ের বিছানায় সংযমীভাবে ঘুমানো বিধেয়।
শিবরাত্রির দিন সকালে গঙ্গাস্নান বা শুদ্ধ স্নান করে- ফুল, বেলপাতা, আকন্দ ফুল ও মাল, ধুতরা ফুল, ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হয়। এরপর সারাদিন উপবাস রেখে শিবলিঙ্গের পূজার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। সন্ধ্যার পর গঙ্গামাটি দিয়ে চারটি শিবলিঙ্গ নির্মাণ করতে হয় এবং রাত্রিতে চারি প্রহরে চারিবার শিবপূজা করিবেন। তৎপরদিন পারণ করিবেন।
মহা শিবরাত্রি পূজা প্রথম ধাপ
মহা শিবরাত্রি পূজা বিধি — পূজক প্রথমে আচমন ও বিষ্ণুস্মরণ করিয়া স্ববেদোক্ত স্বস্তিবাচন ও স্বস্তিশুক্ত্যাদি পাঠ করিয়া গণেশাদি পঞ্চদেবতাকে গন্ধপুষ্প দ্বারা পঞ্চোপচারে পূজা করিবে।
উপবাসী ব্রতী সন্ধ্যার পর শুদ্ধাসনে উত্তরাভিমুখে উপবেশন হয়ে তামার পাত্রে বিল্বপত্রের উপর শিবলিঙ্গ স্থাপন করিয়া আচমন করিবেন।
আচমন—ডান হাতের তালুতে, বাম হাতে করে কুশীদ্বারা এক ফোটা জল নিয়ে—“ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ।” তিনবার বলিয়া তিনবার পান করিবেন।
আপনি যদি ব্রাহ্মণ না হন তাহলে “ওঁ বিষ্ণুঃ” পরিবর্তে “নমো বিষ্ণু” বলিবে।
বিষ্ণুস্মরণ—“ওঁ তদ্বিষ্ণো পরমং পদম্ সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্। ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ।”
“ওঁ অপবিত্র পবিত্রোবা সর্বাবস্থাং গতোঽপিবা যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষঃ সবাহ্যাভ্যন্তর শুচিঃ। ওঁ মাধবো মাধবো বাচি মাধবো মাধবো হৃদি। স্মরম্ভি সাধবঃ সর্বে সর্বকার্যেষু মাধবঃ।। নমঃ শ্ৰীমাধবঃ, নমঃ শ্রীমাধবঃ, নমঃ শ্রীমাধবঃ। ওঁ সর্বমঙ্গলে মঙ্গল্যং বরেণ্যং বরদং শুভম্। নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্মাণি কারয়েৎ।। ওঁ শঙ্খচক্র ধরং বিষ্ণুং দ্বিভুজং পীতবাসনম্। প্রারম্ভে কর্মণাং বিপ্রঃ পুণ্ডরীকং স্মরেদ্ধরিম্।।” অতঃপর সূর্য্যার্ঘ্য দিবেন।
স্বস্তিবাচন—কুশীতে আতপ তণ্ডুল লইয়া বামহস্তে রাখিয়া দক্ষিণ হস্তদ্বারা আচ্ছাদনপূর্বক পাঠ করিবেন। ওঁ কর্তব্যেহস্মিন্ গণপত্যাদি নানাদেবতা পূজাপূর্বক শিবরাত্রি বিহিত শিবপূজা কর্মণি, ওঁ পুণ্যাহং ভবস্তো ধ্রুবন্তু, ওঁ পুণ্যাহং ভবস্তো ধ্রুবন্তু, ওঁ পুণ্যাহং ভবস্তো ধ্রুবন্তু,। ওঁ পুণ্যাহং, ওঁ পুণ্যাহং, ওঁ পুণ্যাহম্।।”
“ওঁ কর্তব্যেহস্মিন্ গণপত্যাদি নানাদেবতা পূজাপূর্বক, শিবরাত্রি বিহিত শিবপূজা কর্মণি, ওঁ স্বস্তি ভবস্তো ধ্রুবন্তু, ওঁ স্বস্তি ভবস্তো ধ্রুবন্তু, ওঁ স্বস্তি ভবস্তো ধ্রুবন্তু। ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি।।”
“ওঁ কর্তব্যেহস্মিন্ গণপত্যাদি নানাদেবতা পূজাপূর্বক শিবরাত্রি বিহিত শিবপূজা কর্মণি, ওঁ ঋদ্ধিং ভবস্তো ধ্রুবন্তু, ওঁ ঋদ্ধিং ভবস্তো ধ্রুবন্তু, ওঁ ঋদ্ধিং ভবন্তো ধ্রুবস্তু। ও ঋদ্ধ্যতাম্, ওঁ ঋদ্ধ্যতাম্, ওঁ ঋদ্ধ্যতাম্।।” অতঃপর স্বস্তিসূক্ত পাঠ করিবেন।
স্বস্তিসূক্ত (সাম)—“ওঁ সোমং রাজানং বরুণমগ্নিমন্বারভামহে। আদিত্যং বিষ্ণুং সূর্য্যং ব্রহ্মাণঞ্চ বৃহস্পতিম্। ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি।।” অতঃপর সর্ববেদীয়গণ সাক্ষ্যমন্ত্র পাঠ করিবেন।
সাক্ষ্যমন্ত্র—করযোড়ে পাঠ করিবেন—“ওঁ সূর্য্যঃ সোমো যমঃ কালঃ সন্ধ্যেভূতান্যহঃ ক্ষপা। পবনোদ্দিকপতিভূমিরাকাশং খচরামরাঃ। ব্রাহ্ম্যং শাসনমাস্থায় কল্পধ্বমিহ সন্নিধিম্।।” অতঃপর সঙ্কল্প করিবেন ।
গণেশাদি পঞ্চদেবতার পূজা বিধি
গণেশাদির পূজা ধ্যান – “ওঁ খর্বং স্থূলতনুং গজেন্দ্রবদনং লম্বোদরং সুন্দরম্, প্রস্যন্দন্মদগন্ধলুব্ধমধূপব্যালোল গণ্ডস্থলম্। দস্তাঘাত বিদারিতারি রুধিরৈঃ সিন্দুর শোভাকরং।
বন্দে শৈলসুতাসুতং গণপতিং সিদ্ধিপ্রদং কামদম্।”
ধ্যানাস্তে –“এষ গন্ধঃ ওঁ গাং গণেশায় নমঃ। এতৎ পুষ্পম্ ওঁ গাং গণেশায় নমঃ। এষ ধূপঃ ওঁ গাং গণেশায় নমঃ । এষ দীপঃ ওঁ গাং গণেশায় নমঃ। এতন্নৈবেদ্যম্ ওঁ গাং গণেশায় নমঃ । এতৎ পানার্থোদকম্ ওঁ গাং গণেশায় নমঃ।” এইরূপে পূজাপূর্বক প্রণাম করিবেন।
প্রণাম—“ওঁ দেবেন্দ্রমৌলিমন্দার মকরন্দ কণারুণাঃ। বিঘ্নং হরস্তুং হেরম্বং চরণাম্বুজ রেণব।।” অতঃপর গুরুর পূজা করিবেন।
গুরুর পূজা—“এষ গন্ধঃ ওঁ শ্রীগুরুবে নমঃ। এতৎ পুষ্পম্ ওঁ শ্রীগুরুবে নমঃ। এষ ধূপঃ ওঁ শ্রীগুরবে নমঃ। এষ দীপঃ ওঁ শ্রীগুরবে নমঃ। এতন্নৈবেদ্যম্ ওঁ শ্রীগুরুবে নমঃ। এতৎ পানার্থোদকম্ ওঁ শ্রীগুরুবে নমঃ।” এইরূপে পূজান্তে প্রণাম করিবেন।
প্রণাম—“ওঁ অখণ্ডমণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্। তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।। অজ্ঞানাৎ তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া। চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ ।।” অতঃপর সূর্যের পূজা করিবেন।
ধ্যান—”ওঁ রম্বুজাসনমশেষগুণৈক সিন্ধু, ভানুহ সমস্তজগতামধিপং ভজামি। পদ্মদ্বয়াভয়বরান দক্ষতং করাজৈ মাণিকা- মৌলিমরুণাঙ্গরুচিং ত্রিনেত্রম্ ।।”
ধ্যানাস্তে – “এম গন্ধঃ ওঁ শ্রীসূৰ্য্যায় নমঃ । এতৎ পুষ্পম ওঁ শ্রীসূর্য্যায় নমঃ । এ ধূপঃ ওঁ শ্রীসূর্য্যায় নমঃ। এষ দীপঃ ওঁ শ্রীসূৰ্য্যায় নমঃ । এতরৈবেদাম্ ওঁ শ্রীসূর্য্যায় নমঃ। ইদং পানার্থোদকম্ ওঁ শ্রীসূৰ্য্যায় নমঃ।” এইরূপে পূজান্তে প্রণাম করিবেন।
প্ৰণাম—”ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্। ধ্বান্তারিং সর্বপাপোহঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।।” অতঃপর বিষ্ণুর ধ্যানাস্তে পূজা করিবেন।
ধ্যান – “ওঁ ধোয় সদা সৰিভূমণ্ডল মধ্যবর্তী নারায়ণ সরজিসাজন সন্নিবিষ্ট, কেয়ূরবান্ কণককুণ্ডলবান্ কিরীটিহারী। হিরন্ময় স্বপৃর্বৃতঃ শঙ্খচক্রঃ।।
ধ্যানাস্তে – “এষ গন্ধঃ ওঁ শ্রীবিষ্ণবে নমঃ। এতৎ পুষ্পম্ ওঁ শ্রীবিষ্ণবে নমঃ। এতং সচন্দন তুলসীপত্র নমস্তে বহুরূপায় বিষ্ণবে পরমাত্মনে স্বাহা। এষ ধূপঃ ওঁ শ্রীবিষ্ণবে নমঃ। এষ দীপঃ ওঁ শ্রীবিষ্ণবে নমঃ। এতন্নৈবেদ্যম্, ওঁ শ্রীবিষ্ণবে নমঃ। ইদং পানার্থোদকং ও শ্রীবিষ্ণবে নমঃ।” এইরূপে পূজান্তে প্রণাম করিবেন।
প্ৰণাম—”ওঁ নমো ব্রহ্মণ্য দেবায় গো-ব্রাহ্মণ হিতায় চ। জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।।” অতঃপর শিবের ধ্যানাস্তে পূজা করিবেন।
ধ্যান—”ওঁ ধ্যায়েন্নিতাং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসং। রত্নাকল্লোজ্জ্বলাঙ্গং পরশুমৃগবরাভীতিহস্তং প্রসন্নম্ ।। পদ্মাসীনং সমস্তাৎ স্ততমমরগণৈঃ ব্যাঘ্রকীর্ভিং বসানং। বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্ত্রং ত্রিনেত্রম্।।”
ধ্যানাস্তে— “এষ গন্ধঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। এতৎ পুষ্পম্ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। এষ ধূপঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ । এষ দীপঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। এতন্নৈবেদাম ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। ইদং পানার্থোদকম ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ।” এইরূপে পূজাপূর্বক প্রণাম করিবেন।
প্রণাম — “ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয় হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বরঃ।।” অতঃপর জয়দুর্গার ধ্যানাস্ত্রে পূজা করিবেন।
ধ্যান—“ওঁ কালাভ্রাভাং কটাক্ষেররিকুল ভয়দাং মৌলিবদ্ধেন্দুরেখা, শঙ্খং চক্রং কৃপাণং ত্ৰিশিখমপি করৈরুদ্বহন্তীং ত্রিনেত্রাম্। সিংহস্কন্ধাধিরূঢ়াং ত্রিভুবনমখিলং তেজসাপুরয়ন্তীং, ধ্যায়েদুর্গাং জয়াখ্যাং ত্রিদশ পরিবৃতাম্ সেবিতাং সিদ্ধিকামৈঃ।।”
এইরূপে ধ্যানাস্তে –“এষ গন্ধঃ ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ। এতৎ পুষ্পম্ ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ । এষ ধূপঃ ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ । এষ দীপঃ ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ। এতন্নৈবেদ্যম্ ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ। ইদং পানার্থোদকম্ ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ।” এইরূপে পূজান্তে প্রণাম করিবেন।
প্রণাম —“ওঁ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে। শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তুতে।।”
অতঃপর গন্ধপুষ্পদ্বারা পূজা করিবেন। যথা—“এতে গন্ধপুষ্পে ও আদিত্যাদি নবগ্রহেভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ইন্দ্ৰাদি দশদিকপালেভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ও মৎস্যাদি দশাবতারেভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ কাল্যাদি দশমহাবিদ্যাভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ও সর্বেভ্যো দেবেভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ও সর্বাভ্যো দেবীভ্যো নমঃ৷৷” অতঃপর ভূতশুদ্ধি করিবেন।
মহা শিবরাত্রি পূজার সঙ্কল্প মন্ত্র ও বিধি
সঙ্কল্প—কুশীতে তিল, জল, আতপ তণ্ডুল, কুশত্রিপত্র, হরিতকী ও পুষ্পাদি লইয়া উত্তরাস্যে সঙ্কল্প বাক্য পাঠ করিবেন। যথা—
“বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য ফাল্গুনেমাসি কৃষ্ণপক্ষে চতুৰ্দ্দশ্যান্তিথেঃ অমুকগোত্র শ্রীঅমুকদেবশৰ্ম্মা শ্রীশিবপ্রীতিকামঃ শিবরাত্রিব্রতমহং করিষ্যে।” বলিয়া ঐ কোশার উপর স্ববেদোক্ত সঙ্কল্পযুক্ত পাঠ্যপূর্বকমিশ্রিত তণ্ডুল বিকিরণ করিবে। পরে কৃতাঞ্জলি হইয়া পাঠ করিবে।
ওঁ শিবরাত্রিব্রতং হ্যেত করিষ্যেহরং মহাফলম্।
নির্বিঘ্নমস্তু মে চাত্রৌ তৎপ্রসাদাজ্জগৎপতে ৷৷
চতুদ্দশ্যাং নিরাহারো ভুক্তা শন্তো পরেহহনি।
তৌক্ষো হং ভুক্তিমুক্তার্থং শরমং মে ভবেশ্বর৷৷
শিবরাত্রি ব্রত মন্ত্র ও পূজা বিধি
চার প্রহরে শিবপূজা করার বিশেষ নিয়ম রয়েছে। প্রত্যেক প্রহরে পৃথক উপাদান দ্বারা শিবলিঙ্গকে স্নান করিয়ে পূজা করতে হয়:
প্রথম প্রহরে: দুধ দ্বারা শিবলিঙ্গ স্নান করিয়ে পূজা করতে হয়।
প্রথম প্রহরে—দুগ্ধ দ্বারা স্নানের মন্ত্র “ইদং স্নানীয়ং দুগ্ধং ওঁ হৌঁং ঈশানায় নমঃ” বলিয়া শিবকে স্নান করাইয়া একটি অর্ঘ্য হাতে লইয়া-
ওঁ শিবরাত্রিব্রতং দেব পূজাজপপরায়ণঃ।
করোমি বিধিবদ্দত্তং গৃহাণার্ঘ্যং মহেশ্বর।।
“এষোঽর্ঘ্যঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ” বলিয়া একটি অর্ঘ্য শিবের উপরে দিবেন।
দ্বিতীয় প্রহরে: দই দ্বারা শিবলিঙ্গ স্নান করানো হয়।
দ্বিতীয় প্রহরে দধি দ্বারা স্নানের মন্ত্র – “ইদং স্নানীয়ং দধ্না ওঁ হৌঁং ঈশানায় নমঃ” এই মন্ত্র দ্বারা শিবকে স্নান করাইয়া একটি অর্ঘ্য লইয়া—
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় সর্বপাপহরায় চ।
শিবরাত্রৌ দদামর্ঘ্যং প্রসীদ উময়া সহ ।।
এষোঽর্ঘ্যঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ এই মন্ত্রে পাঠ করিয়া শিবের উপরে দিবে।
তৃতীয় প্রহরে: ঘি দ্বারা শিবলিঙ্গকে স্নান করিয়ে পূজা করা হয়।
তৃতীয় প্রহরে– ঘৃত দ্বারা স্নানের মন্ত্র – “ইদং স্নানীয়ং ঘৃতং ওঁ হৌঁং বামদেবায় নমঃ” এই মন্ত্রে শিবকে স্নান করাইয়া একটি অর্ঘ্য লইয়া-
ওঁ দুঃখদারিদ্র্যে শোকেন দগ্ধোহহং পার্ব্বতীশ্বর।
শিবরাত্রৌ দদাম্যর্ঘ্যং উমাকান্ত গৃহাণ মে।
বলিয়া “এষোঽর্ঘ্যঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ” মন্ত্রে শিবের উপরে দিবে।
চতুর্থ প্রহরে: মধু দ্বারা শিবলিঙ্গ স্নান করিয়ে পূজা করতে হয়।
চতুর্থ প্রহরে—মধু দ্বারা স্নানের মন্ত্র — “ইদং স্নানীয়ং মধু ওঁ হৌঁং সদ্যোজাতায় নমঃ” এই মন্ত্রে শিবকে স্নান করাইয়া একটি অর্ঘ্য লইয়া—
ওঁ ময়া কৃতান্যনেকানি পাপানি হর শঙ্কর।
শিবরাত্রৌ দদাম্যর্ঘ্যমুমাকান্ত গৃহাণ মে।।
বলিয়া এষোঽর্ঘ্যঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ মন্ত্রে শিবের উপরে দিবে।
ঋগ্ বেদীয়গন ও সামবেদীগন “এষোঽর্ঘ্যঃ” স্থলে “ইদমর্ঘ্যং” বলিবেন।
প্রতি প্রহরেই পূজা শেষে অষ্টমূর্তির ও গৌরীর পূজা করিবেন। যথা – “এতে গন্ধপুষ্পে ও গৌর্য্যে নমঃ।” মন্ত্রে পঞ্চোপচারে পূজা করিবেন। তৎপরে অষ্টমূর্তির পূজা করিবেন।
অষ্টমূর্তির পূজা–“এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ সর্বাদ্যষ্টমূর্তিভ্যো নমঃ।” মন্ত্রে গন্ধপুষ্প দিয়া আবাহনাদি পঞ্চমুদ্রাদ্বারা আবাহন করিয়া পঞ্চোপচারে পুজা করিবেন। (পূর্বে) “এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ সর্বায় ক্ষিতিমূর্তয়ে নমঃ।” এইক্রমে—(ঈশানে) কোশায় (উত্তরে) “ওঁ রুদ্রায় অগ্নিমূর্তয়ে নমঃ।” (বায়ুকোণে) “ওঁ উগ্রায় বায়ুমূর্তয়ে নমঃ।” (পশ্চিমে) “ওঁ ভীমায় আকাশমুর্তয়ে নমঃ।” (নৈর্ঝতে) “ওঁ পশুপতয়ে যজমানমূর্তয়ে নমঃ।” (দক্ষিণে) “ওঁ মহাদেবায় সোমমূর্তয়ে নমঃ।” (অগ্নিকোণে) “ওঁ ঈশানায় সূৰ্য্যমূর্তয়ে নমঃ।।”
এইরূপে চতুর্থ প্রহরের পূজা সমাপন পূর্বক কৃতাঞ্জলি হইয়া নিম্নমন্ত্র পাঠ করিবে। যথা—
ওঁ অবিঘ্নেন ব্ৰতং দেব তৎপ্রসাদাৎ সমর্পিতম্।
ক্ষমস্ব জগতাং নাথ ত্রৈলোক্যাধিপতে হয় ।
যন্মরাদ্য কতং পুণং তদ্রদস্য নিবেদিতম্।
তৎপ্রসাদান্ময়া দেব ব্রতমদ্য সমর্পিতম্ ৷৷
প্রসন্নো তব মে শ্রীমান্ মস্তুতিঃ প্রতি পাদ্যতাম্।
তদালোকেন মাত্রেণ পরিত্রোহস্মিন সংগয় ৷
অতঃপর — “এতে গন্ধপুষ্পে ও বৃষভায় নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ও নন্দিনে নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ও ভূঙ্গিনে নমঃ।” মন্ত্রে ইহাদের পঞ্চোপচারে পূজা করিয়া “বম্ বম্” শব্দে গালবাদ্য করিয়া পার্থিব শিবপূজার ন্যায় সমস্ত কার্য্য শেষ করিয়া স্তব এবং কবচাদি পাঠপূর্বক ব্রতকথা পাঠ করিবেন। তৎপরে পার্থিব শিব হইলে বিসর্জ্জন করিয়া ব্রতকথা প্রকাশ করিবে। আর যদি প্রতিষ্ঠিত শিব হয় তাহলে বিসর্জ্জন না করিয়া ব্রতকথা পাঠ করিয়া ।
মহা শিবরাত্রি ব্রতের প্রত্যেক প্রহরে বেলপাতা, ফুল ও অন্যান্য পূজার সামগ্রী দ্বারা মহাদেবের পূজা করতে হয়। পাশাপাশি, সারারাত জেগে থেকে শিবের নামসংকীর্তন এবং ভজন করা এই ব্রতের একটি অপরিহার্য অঙ্গ।
শিবরাত্রি ব্রত কথা সমাপ্তি ও দান
পরদিন ভোর হলে ব্রতকথা শ্রবণ করে শিবকে প্রণাম করতে হয়। এরপর ব্রাহ্মণ বা দরিদ্রদের জলযোগ ও ভোজন করিয়ে দক্ষিণা প্রদান করা উচিত। এই ব্রত পালনের মাধ্যমে শিবভক্তরা মহাদেবের বিশেষ আশীর্বাদ লাভ করে এবং জীবনের সমস্ত পাপ ও দুঃখ দূর হয়।
জীবনের কল্যাণে জন্য আমাদের অন্য পোস্ট পড়ুন
*বাড়িতে শিব পূজার নিয়ম ও সঠিক পদ্ধতি।
প্রশ্ন:শিবরাত্রি ব্রত কিভাবে পালন করতে হয়?
উত্তর: মহাশিবরাত্রির ব্রত করার জন্য প্রথমে স্নান করতে হয়, তারপর উপবাস পালন করে শিবলিঙ্গে দুধ, দই, ঘি, মধু ও গঙ্গাজল নিবেদন করতে হয়। বেলপাতা, ধুতুরা ফুল, আকন্দ ফুল দিয়ে পূজা করা হয় এবং ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ মন্ত্র জপ করা হয়। ভক্তরা সারা রাত জাগরণ করে শিবের কীর্তন করেন এবং পরের দিন ব্রাহ্মণ বা দরিদ্রদের দান করার পর উপবাস ভঙ্গ করেন।
প্রশ্ন:মহাশিবরাত্রিতে কোন কোন সামগ্রী দিয়ে শিবপূজা করতে হয়?
উত্তর: মহাশিবরাত্রির পূজায় প্রধানত দুধ, দই, ঘি, মধু, গঙ্গাজল, বেলপাতা, ধুতুরা ফুল, আকন্দ ফুল, চন্দন, ভাং, চিনি এবং ধূপ-দীপ ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন:মহাশিবরাত্রির উপবাস কতক্ষণ পালন করতে হয়?
উত্তর: শিবরাত্রির উপবাস সূর্যোদয় থেকে পরের দিন সূর্যোদ পর্যন্ত পালন করা হয়। সম্পূর্ণ নির্জলা উপবাস করতে হয়।
প্রশ্ন:মহাশিবরাত্রির রাতে কেন জাগরণ করা হয়?
উত্তর: শাস্ত্র মতে, মহাশিবরাত্রির রাতে জাগরণ করলে শিব অত্যন্ত প্রসন্ন হন এবং ভক্তদের পাপমোচন ও কৃপা প্রদান করেন।