
দোল পূর্ণিমা পূজার নিয়ম ও ধর্মীয় গুরুত্ব (২০২৫)
দোল পূর্ণিমার তারিখ ২০২৫ দোল পূর্ণিমা, যা হোলি উৎসব নামেও পরিচিত, হিন্দু ধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ তিথি। এটি ফাল্গুন মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয়। ২০২৫ সালে, দোল পূর্ণিমা পড়বে শুক্রবার, ১৪ মার্চ। পূর্ণিমা তিথি শুরু হবে ১৩ মার্চ সকাল ১০:২৪ মিনিটে এবং শেষ হবে ১৪ মার্চ সকাল ১১:৩৫ মিনিটে।
দোল উৎসব কবে ও এর তাৎপর্য দোল উৎসব হল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব। এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধা ও গোপীদের সঙ্গে রঙের খেলা করেছিলেন, যা পরবর্তীতে দোলযাত্রা বা হোলি উৎসবে পরিণত হয়েছে। দোল পূর্ণিমা মূলত ভালোবাসা, ভক্তি ও আনন্দের প্রতীক।
দোল পূর্ণিমার গুরুত্ব
- এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ ভক্তরা বিশেষ পূজা ও কীর্তনের আয়োজন করেন।
- বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের জন্য এটি অত্যন্ত পবিত্র দিন, কারণ এই দিনে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব হয়।
- দোল পূর্ণিমা আমাদের জীবন থেকে সব বিভেদ দূর করে ঐক্যের বার্তা দেয়।
দোল পূর্ণিমা ব্রতকথা ও পূজার নিয়ম
দোল পূর্ণিমা ব্রতকথা ও পূজার নিয়ম দোল পূর্ণিমার দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশেষ পূজা ও আচার পালন করে থাকেন। এই পূজার নিয়মাবলি নিম্নরূপ:
- সকালবেলা স্নান ও শুদ্ধিকরণ: পূজার পূর্বে শুদ্ধি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শাস্ত্রমতে, গঙ্গা বা অন্য কোনও পবিত্র নদীতে স্নান করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। যদি নদীতে যাওয়া সম্ভব না হয়, তবে গঙ্গাজল মিশ্রিত সাধারণ জল দিয়েও স্নান করা যায়। এটি শুধু শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নয়, মানসিক ও আধ্যাত্মিক শুদ্ধিকরণেও সহায়ক।
- শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার পূজা: রাধাকৃষ্ণ পূজার সময় শুদ্ধ চিত্তে তাঁদের মূর্তি বা ছবি সামনে রেখে ভক্তিভরে আরাধনা করা হয়। পূজায় গঙ্গাজল, তুলসীপাতা, চন্দন, ফুল, ধূপ, দীপ, মিষ্টান্ন এবং নানান উপাচার ব্যবহার করা হয়। রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমলীলা স্মরণ করে ভক্তরা নানা ভক্তিমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
- কীর্তন ও ভজন: শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি নিবেদনের অন্যতম মাধ্যম হলো কীর্তন ও ভজন। ভক্তরা একত্রিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের নাম সংকীর্তন করেন এবং ভজন গেয়ে তাঁকে স্মরণ করেন। মন্দিরে বা গৃহে কীর্তনের আয়োজন করা হয়, যা পরিবেশকে পূণ্যময় করে তোলে।
- রঙের খেলা: রাধাকৃষ্ণের লীলামাধুর্যকে স্মরণ করে ভক্তরা গুলাল বা আবির ছিটিয়ে আনন্দ উদযাপন করেন। এটি শুধুমাত্র খেলার অংশ নয়, বরং কৃষ্ণের নিত্যলীলা ও ভক্তদের সঙ্গে তাঁর স্নেহের প্রতিফলন। রঙের মাধ্যমে সকলের মধ্যে আনন্দ, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় হয়।
- প্রসাদ বিতরণ: পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাধারণত ক্ষীর, মিষ্টান্ন, ফল ও অন্যান্য শুদ্ধ আহার্য ভগবানকে নিবেদন করা হয় এবং পরে তা ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এটি শুধু একধরনের ভোগ নিবেদন নয়, বরং ভক্তদের জন্য ঈশ্বরের কৃপা লাভের এক মহান উপায়।
শ্রীকৃষ্ণ ও দোলযাত্রা শ্রীকৃষ্ণ দোলযাত্রার মূল কেন্দ্রবিন্দু। তিনি বৃন্দাবনে এই উৎসব পালন করেছিলেন এবং ভক্তদের আনন্দে মাতিয়ে তুলেছিলেন। কৃষ্ণ-রাধার লীলার মধ্য দিয়েই এই উৎসবের মাহাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ও দোলপূর্ণিমা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান পথপ্রদর্শক। তিনি ১৪৮৬ সালের দোলপূর্ণিমার দিনে জন্মগ্রহণ করেন, যার ফলে এই দিন বৈষ্ণবদের কাছে আরও বেশি পবিত্র। বৈষ্ণব মন্দিরগুলোতে এই দিনে বিশেষ সংকীর্তন ও পূজার আয়োজন করা হয়।
উপসংহার দোল পূর্ণিমা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ভক্তি, ভালোবাসা ও ঐক্যের প্রতীক। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ ও চৈতন্য মহাপ্রভুর উপাসনা করেন এবং ধর্মীয় বিধি অনুসারে পূজা-অর্চনা করেন। সঠিক নিয়মে দোল পূর্ণিমার পূজা পালন করলে জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে।